আখতার-উজ-জামান : বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২১তম জন্মদিন আজ (২৫ মে)। সাহিত্যাকাশে দুখু মিয়া ছিলেন চির সবুজ। হঠাৎ করেই বাইশ-তেইশ বছরের এক অর্বাচীন যুবকের উদয় হলো। সে বঙ্গবাসী হতদরিদ্র, নির্যাতিত মানুষকে যা দিয়েছিল আর কখনো কেউ সেভাবে দিতে পারবে না। এমন আলোই উদ্ভাসিত করেছিল সেই অর্বাচীন যুবক যা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তাঁর কবিতার আবৃত্তিতে গায়ের লোম শিউরে ওঠে না এমন বাঙালি পাওয়া ভার। সেই অর্বাচীন যুবকই হলেন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম। কখনো গায়ক, কখনো নায়ক আবার কখনো অত্যাচার-নিপীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকার মাধ্যমে বিদ্রোহী কবি নজরুল আবির্ভূত হয়েছিলেন এই পৃথিবীতে। দুখু মিয়া চলচ্চিত্রের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আবৃত্তিকার, গায়ক, পরিচালক, সঙ্গীত পরিচালক, গীতিকার, সুরকার, অভিনেতা, কাহিনীকার, চিত্রনাট্যকার, সংলাপকার ও সংগঠক হিসেবে জড়িত ছিলেন ১৯৪২ সালের ১০ জুলাই অসুস্থ হওয়ার আগ পর্যন্ত। কবি নজরুল কখনো মসজিদের ইমাম হয়ে জানান দিলেন ইসলামের আদর্শ পথ চলার দিকনির্দেশনা। আল্লাহর পথে আত্মসমর্পণ-রচনায় নজরুল জানিয়েছেন, ‘ইন্না সালাতি ও নুসুকি ওয়া মাহয়্যায়া ওয়া মামাতি লিল্লাহে রাব্বিল আলামিন’-আমার সব প্রার্থনা নামাজ-রোজা, তপস্যা, জীবন-মরণ সবকিছু বিশ্বের একমাত্র পরম প্রভু আল্লাহর পবিত্র নামে নিবেদিত। একটি চিঠিতে নজরুলের আধ্যাত্মজীবনের পরিচয় রয়েছে ‘আমার মন্ত্র ইয়াকা না বুদু ওয়া ইয়াকা নাস্তাইন। কেবল এক আল্লাহর আমি দাস, অন্য কারোর দাসত্ব আমি স্বীকার করি না।
একমাত্র তাঁর কাছে শক্তি ভিক্ষা করি (নজরুল রচনা সম্ভার, পৃষ্ঠা-৪৭৪)। কবি নজরুল সম্বন্ধে একটি বিষয়ে আমরা নিশ্চিত, তিনি সারা জীবন হিন্দু-মুসলমানের মিলন কামনা করেছেন। অপ্রকাশিত পা-ুলিপিগুলো হরফ প্রকাশনী থেকে ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দের ১৭ নভেম্বর প্রকাশিত হওয়ার পর সেই পা-ুলিপি সূত্রে জানতে পারি, ইসলামি আধ্যাত্মবাদের সঙ্গে হিন্দু-সাধন-প্রকরণের যেসব জায়গায় পদ্ধতিগত মিল আছে কবি সেগুলোকে অত্যন্ত যত্নের সাথে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। একটি অগ্রন্থিত গানে নজরুলের মনের ভাব প্রকাশ ঘটেছে এভাবে: পঞ্চপ্রাণের প্রদীপ-শিখায় লহ আমার শেষ আরতি।/ ওগো আমার পরমগতি ওগো আমার পরম পতি।/ বহুকাল সে বাহির-দ্বারে/ দাঁড়িয়ে আছি অন্ধকারে।/ এবার দেহের দেউল ভেঙে/ দেখব নিষ্ঠুর তোমার জ্যোতি।/ এই জ্যোতির পেছনে ছুটতে গিয়ে নজরুল উপরোল্লেখিত গানটি লিখেছেন। কবি নজরুলের জীবনের সর্বশেষ অভিভাষণ ছিল, ‘যদি বাঁশি আর না বাজে’। এই অভিভাষণের স্থান ও কাল হলো কলকাতা মুসলিম ইনস্টিটিউট হল। ১৯৪১ সালের ৫ ও ৬ এপ্রিল, উপলক্ষ্য ছিল বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য-সমিতির রজতজয়ন্তী উৎসব। সেখানে তাঁর বক্তব্যের মধ্যে ছিল, ‘অসুন্দরের সাধনা আমার নয়, আমার আল্লাহ পরম সুন্দর। তিনি আমার কাছে নিত্য প্রিয় ঘন সুন্দর, প্রেম ঘন সুন্দর, রস ঘন সুন্দর, আনন্দ ঘন সুন্দর। আমার সর্ব অস্তিত্ব, জীবন মরণ কর্ম অতীত বর্তমান ভবিষ্যত যে তারই নামে শপথ করে তাঁকে নিবেদন করেছি।’ জীবনের প্রথম পর্বে যে কবি মসজিদে ইমামতি করেছেন, জীবনের শেষ পর্বেও তিনি গভীরভাবে এক আল্লাহতে আত্মসমর্পিত। তবু কবি নজরুলকে আমরা যেন শুধু ‘মুসলমান নজরুল’ এ পরিণত করার চেষ্টা না করি। সুন্দর কথা বলেছেন আবদুল আজিজ আল আমান, নজরুলের ধর্মবিশ্বাস নিয়ে কিছু বলতে গেলেই আমি বারবার সবিস্ময়ে লক্ষ করেছি, আমরা শুধু দুই শিবিরে বিভক্ত হই না, হঠাৎ অতি হিন্দু বা অতি মুসলমান হয়ে পড়ি। এখানেই আমার ভয়। কোনো বিষয়ে কোনো দিন কবির কোনো গোঁড়ামি ছিল না। ধর্ম বিষয়েও না (পৃষ্ঠা ১২/অপ্রকাশিত নজরুল)। ১৮৯৯ সালের ২৫ মে বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে সম্ভ্রান্ত কাজী বংশে নজরুল ইসলাম জন্মগ্রহণ করেন। স্থানীয় একটি মসজিদের ইমাম কাজী ফকির আহমেদ ও জাহিদা খাতুনের ঘরে জন্ম নিয়েছিলেন দুখু মিয়া। কাজী নজরুল ইসলামের দুই ভাই-কাজী সাহিবজান, কাজী আলী হুসেইন এবং একমাত্র বোন ছিলেন উম্মে কুলসুম। বাবা কাজী ফকির আহমেদকে বাল্যকালে হারান কাজী নজরুল। আসানসোলের চা-রুটির পদাকানে রুটির কাজ করার সময় পসখানে কর্মরত দারোগা রফিজ উল্লাহ’র সঙ্গে পরিচয় হয় নজরুলের। তিনি কিশোর নজরুল নিয়ে ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশালের দরিরামপুর স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি করে দেন। এটা ১৯১৪ সালের কথা। মাধ্যমিকের প্রিটেস্ট পরীক্ষা না দিয়ে ১৯১৭ সালে সেনাবাহিনীতে সৈনিক হিসেবে যোগ দেন নজরুল ইসলাম। অংশ নেন প্রথম বিশ্বযুদ্ধে। এভাবে দুখু মিয়া জীবনসংগ্রামে যুক্ত হন। সময়টি ১৯২২ সালের ৬ জানুয়ারি, বাংলা ১৩২৮ সালের ২২ পৌষ, সাপ্তাহিক ‘বিজলী পত্রিকায়’ প্রথমবারের মতো নজরুলের ‘বিদ্রোহী’ কবিতাটি প্রকাশিত হয়। কবিতাটি পাঠক মহলে এতই জনপ্রিয় হয়েছিল যে, পত্রিকাটির দ্বিতীয় সংস্করণ বের করতে হলো একই সপ্তাহে। এরপর মাসিক ‘মোসলেম ভারত’ পত্রিকার বাংলা কার্ত্তিক সংখ্যায় (অনিয়মিত মাসিক পত্রিকা ছিল মোসলেম ভারত, তাই কার্ত্তিক সংখ্যা হলেও তা প্রকাশ হয়েছিল মাঘ মাসে) ‘বিদ্রোহী’ আবার ছাপা হয়। একই বছর ‘বিদ্রোহী’ কবিতাটি মাসিক ‘প্রবাসী’ এবং মাসিক ‘বসুমতি’ এবং পরের বছরে (১৩২৯ বাংলা) মাসিক ‘সাধনা’য় প্রকাশিত হয়। তবে আশ্চর্য হওয়ার মতো ব্যাপার, ‘বিদ্রোহী’ কবিতার ওপর পাঠক মহলের সে সময় বিতৃষ্ণা আসেনি। বরং আগ্রহ বেড়েই চলেছে। আর এর মাধ্যমেই নতুন এক লেখকের নাম বাংলা সাহিত্যে যোগ হলো কাজী নজরুল ইসলাম।
নজরুল ছিলেন এক চির সজীব কবি। তার বাসনা ছিল সর্বদাই মানুষে মানুষে বিভেদ দূর করে এমন একটা সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। যে সমাজ সব জাত-পাতের ঊর্ধ্বে থাকবে। তাই তো ‘মানুষ’ কবিতায় তিনি তার সেই চিরন্তন বাসনার কথা বলেছেন এভাবেই: ‘গাহি সাম্যের গান-/ মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান।/ নাই দেশ-কাল পাত্রভেদ, অভেদ ধর্ম জাতি’/ এই যে একটি চিরসত্য কথা নজরুল অবলীলায় বলেছেন, ‘অভেদ ধর্ম জাতি।’ নজরুলকে বোঝা বা তার মনের বাসনা বোঝা খুব সহজ কথা নয়। তবুও তার লেখার যে কয়েকটি স্থানে তিনি তার বাসনার ইঙ্গিত দিয়েছেন তার মধ্যে ‘বিদ্রোহী’ ও ‘মানুষ’ কবিতা দুটি উল্লেখযোগ্য। এছাড়া তিনি ‘বড়র পিরীতি বালির বাঁধ’ প্রবন্ধে এবং ১৯৪১ সালের ৬ এপ্রিল মুসলিম ইনস্টিটিউট হলে ‘বঙ্গীয় সাহিত্য সমিতির রজতজয়ন্তী উৎসব’ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতি হিসেবে দেয়া একটি অভিভাষণে তার কিছু বাসনা প্রকাশ করেছিলেন। নজরুল সারাটি জীবন দুঃখ-কষ্ট নীরবে অতিবাহিত করে বিশ্ববাসীর জন্য রচনা করে গেলেন বিদ্রোহের বাণী; যা আজো সব নির্যাতিত নিপীড়িত মানুষের মনে আশার সঞ্চার করে, আন্দোলনের প্রেরণা যোগায়। একথা সর্বজনবিদিত যে, নজরুল কোনো বিশেষ সম্প্রদায়ের নন, কোনো বিশেষ গোষ্ঠীর নন; নন কোনো ঠুনকো মতবাদে বিশ্বাসী। নজরুল ন্যায়, সত্যের পক্ষে। অন্যায় ও অসত্যের বিপক্ষে। অন্যভাবে দেখলে তার আদর্শ ও দর্শনের সাথে প্রতারণা করা হবে। ‘মানুষ’ কবিতায় নজরুল বলেছেন- ‘আদম দাউদ ঈসা মুসা ইব্রাহীম মহাম্মদ/ কৃষ্ণ বুদ্ধ নানক কবীর -বিশ্বের সম্পদ।’ তিনি কখনো কাউকেই ছোট করে দেখেননি। তাঁর ‘মানুষ’ কবিতায় সবচেয়ে গুরুত্ব পেয়েছে: মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান।/ নাই দেশ-কাল-পাত্রের ভেদ, অভেদ ধর্ম জাতি/ সব দেশে সব কালে ঘরে ঘরে তিনি মানুষের জ্ঞাতি।’’ এখানে নজরুলের এক বিশাল বাসনা প্রকাশ পেয়েছে। সমাজ হতে ধর্মীয় দ্বন্ধ কুসংস্কার দূর করে নতুন একটি সমাজ প্রতিষ্ঠা করা যা হবে সাম্যর ভিত্তিতে। নজরুল স্পষ্টতই বুঝেছিলেন যে, হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গাই আসলে ব্রিটিশদের এ দেশে থাকার একটি বড় হাতিয়ার। সাম্প্রদায়িক সংঘাত বাধিয়ে ইংরেজরা সব সময় এ উপমহাদেশে তাদের শাসন বলবৎ রেখেছে। যার মূলে এদেশের ধর্ম বোদ্ধাদের অজ্ঞতা। তাই ‘মানুষ’ কবিতায় দুই ধর্মের বোদ্ধাদের উদ্দেশ্যেই নজরুল বলেছেন, ‘তব মসজিদ মন্দিরে প্রভুু নাই মানুষের দাবি,/ মোল্লা পুরুত লাগায়েছে তার সকল দুয়ারে চাবি!’ এরপর মসজিদ আর মন্দিরে যে রামরাজত্ব ধর্মবোদ্ধারা কায়েম করেছিলেন, তার বিরুদ্ধে বজ্র হুংকার দিয়ে নজরুল তাদেরকে এই বলেছেন, ‘হায় রে ভজনালয়,/ তোমার মিনারে চড়িয়া ভক্ত গাহে স্বার্থের জয়।’ এই যে হিন্দু-মুসলিম সংঘর্ষ এর মূলে ছিল মোল্লা আর পুরোহিত যাদের পেট চলত মসজিদ-মন্দির হতে প্রাপ্ত আয়ে। এরাই ব্রিটিশদের কাছে টাকা খেয়ে বিভিন্ন ধরনের ধর্মীয় অনুশাসনের অপব্যাখ্যা করে হিন্দু-মুসলমানদের সংঘর্ষ বাধানোর চেষ্টাই লিপ্ত থাকত। নজরুল কিভাবেই বা শান্ত হবেন! তিনি যে ‘বিদ্রোহী’র মাধ্যমেই জানিয়ে দিলেন, ‘মহা-বিদ্রোহী রণক্লান্ত/ আমি সেই দিন হব শান্ত,/ যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন রোল আকাশে-বাতাসে ধ্বনিবে না,/ অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ ভীম রণভূমে রণিবে না/ বিদ্রোহী রণক্লান্ত/ আমি সেই দিন হব শান্ত।’ কবি এভাবে নিজেকে এবং তাঁর লেখনীকে কোন সম্প্রদায়, জাতি, গোষ্ঠী, দল, দেশ, ধর্ম কোনকিছুর মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখেননি। আর তাই তিনি হয়ে উঠেছেন সকল কালের, সকল জাতির, সকল দেশের, সকল মানুষের সর্বোপরি সমগ্র বিশ্বের। ব্যক্তি মানুষ হিসেবে উদার ও অসাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি লালনকারী নজরুল হয়েছিলেন সকল শ্রেণি ও জাতির মিলনদূত। আর তাই তো কবি অন্নদা শংকর রায় নজরুলকে নিয়ে লিখেছেন- ‘ভুল হয়ে গেছে বিলকুল/আর সব কিছু/ভাগ হয়ে গেছে/শুধু ভাগ হয়নি কো/ নজরুল।’ বিদ্রোহী কবি’র বৈশিষ্ট্য তিনি রাজনীতিবিদ, মানবপ্রেমিক, সমাজ সংস্কারক, শিক্ষানুরাগী, অসাম্প্রদায়িক ভারতবর্ষের রূপকার। তাঁর কবিতা ও গান হৃদয় অনুরণনের ও মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের। তাঁর কবিতা ও গান বিদ্রোহের। তাঁর কবিতা ও গান অসাম্প্রদায়িকতার। তাঁর কবিতা ও গান পরাধীনতার শৃঙ্খল ভাঙ্গার। তাঁর কবিতা ও গান স্বাধীনতার। তাঁর কবিতা ও গান মুক্তির। তাঁর কবিতা ও গান মনুষ্যত্ব বোধের। তাঁর কবিতা ও গান বিশ্ব ভ্রাতৃত্বের ও বিশ্বের সকল সুন্দরের, সকল মানুষের। তিনি লিখেছেন- “মোরা একই বৃন্তেÍ দু’টি কুসুম হিন্দু মুসলমান।”/ “বদনা গাড়–তে গলাগলি করে, নব প্যাক্টের আশনাই।/ মুসলমানের হাতে নাই ছুরি, হিন্দুর হাতে বাঁশ নাই।” সকল মানুষকে শুধু মানুষ পরিচয়ে তিনি দাঁড় করাতে চেয়েছিলেন। তাই তিনি বলেছিলেন: ‘সকল কালের সকল দেশের সকল মানুষ আসি/ এক মোহনায় দাঁড়াইয়া শুন এক মিলনের বাঁশী।’ জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে নজরুলের স্মৃতি বিজড়িত ত্রিশাল, কুমিল্লায় চলছে নানা অনুষ্ঠানমালা। কবির জন্মদিনে দেশের অন্যান্য জেলায়ও স্থানীয় প্রশাসন ও বেসরকারি উদ্যোগে ব্যাপক অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে। ভোরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে কবির সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন, আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান রয়েছে সারাদিন জুড়ে। গত বছরের ১ মে শ্রমিক দিবসে নজরুল চর্চা কেন্দ্র ‘বাঁশরী’ ও বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর ‘বিএনসিসি’ আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিএনসিসি, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষকরা কাজী নজরুল ইসলামের ‘বিদ্রোহী’ কবিতা আবৃত্তি করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ থেকে অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করে দেশের প্রথম বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেল এটিএন বাংলা ও এটিএন নিউজ। সেখানে নানা বয়সের, সব শ্রেণি পেশার মানুষের মহা মিলনমেলায় পরিণত হয় ‘বিদ্রোহী’ কবিতা আবৃত্তির মধ্য দিয়ে। নজরুলের বিদ্রোহী কবিতা তরুন প্রজন্মকে সামনে এগিয়ে নেয়ার উৎসাহ যোগাবে সামনে পথ চলায় সাহস যোগাতে। কোলকাতায় পারিবারিক তত্ত্বাবধানে থাকা বাকরুদ্ধ এ কবিকে ১৯৭২ সালের ২৪ মে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন জাতির জনক ও বাংলার অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এখানে সরকারি ব্যবস্থাপনায় রাখা হয় নজরুল ইসলামকে। অভিসিক্ত করা হয় বাংলাদেশের জাতীয় কবির মর্যাদায়। চিরবিদ্রোহী এ কবি ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট সকাল ১০টা ১০ মিনিটে ঢাকার পিজি হাসপাতালে ( বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল ইউনিভার্সিটি) শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। ‘আজান’ কবিতায় চাওয়া শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী মসজিদের পাশে সমাহিত করা হয় চির জাগরণের এ কবিকে, যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন। ১২১তম জন্মদিনে কাজী নজরুল ইসলামের বিদ্রোহী কবিতার চেতনাকে কাজে লাগিয়ে সকল অসত্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হবে দেশ ও জাতি, থাকবেনা কোনো বিবেধ, হানাহানি-এটাই আমাদের দৃঢ় প্রত্যয়।
লেখক, গবেষক, সাংবাদিক