আখতার উজ জামান
বিজয়ের দিনটি বাঙালি জাতির গৌরবের দিন, মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর দিন। বাঙালি জাতির হাজার বছরের শৌর্যবীর্য এবং বীরত্বের এক অবিস্মরণীয় গৌরবময় দিন। বীরের জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার দিন। পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন-মুক্ত ভূখণ্ডের নাম জানান দেওয়ার দিন। বিজয়ের ৫২ বছরেও সেই নরপশুদের বিচার হচ্ছে। সত্যি অন্যরকম স্বাধ, অভিপ্রায় যে রাষ্ট্রনামক যন্ত্রটি তাঁর নিজস্ব প্রক্রিয়ায় বিজয়ের উল্লাসের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করছে। সত্যিই স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশ এখন আর পরাধীন নয়।
মুক্তিযুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছেন তাদেরকে ১৬ ডিসেম্বর সারাদেশে বিশেষভাবে শ্রদ্ধা জানানো হয়। প্রায় ১৭ কোটি বাঙালি সশ্রদ্ধ চিত্তে স্মরণ করে দেশের বীর সন্তানদের। যাদের ৯ মাসের সংগ্রাম ও রক্তের বিনিময়ে পেয়েছি আমাদের লাল সবুজের পতাকা। মুক্তিযুদ্ধে নিহত শহীদদের স্মরণে নির্মিত জাতীয় স্মৃতিসৌধে ভোর থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। দেশের প্রতিটি জেলা উপজেলা ও ইউনিয়নে পালিত হয় মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মরণে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি।
বিজয়ের এই দিনে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে নতমস্তকে আত্মসমপর্ণ করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। বিশ্ব মানচিত্রে লাল-সবুজের পতাকার স্থান পাওয়ার দিন। যেসব বীর সন্তানের রক্তে ভেজা প্রাণের বিনিময়ে এই পতাকা ও মানচিত্র এসেছে, তাঁদের প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা আর অফুরন্ত ভালোবাসা।
পেছন ফিরে তাকালে আমাদের স্বস্তির অনেক কারণ পাওয়া যায়। অন্তত এ ৫২ বছরে আমাদের অর্জন খুব একটা কম নয়। হয়তো অর্জন আরও বেশি হতে পারত। তবে যা হয়েছে তা খুব সামান্যও নয়, এককথায় অসামান্য এখন বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে সম্মানজনক দেশ ও রাষ্ট্র হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে আমাদের আরও অনেক বিষয়ে আরও গভীর মনোযোগ দিতে হবে।
১৯৭১ সালের এই দিনেই যে পাকিস্তান সামরিক সরকার ও সেনাবাহিনী পরাজয় মেনে নেয়, যুদ্ধে হার মেনে স্বাধীন বাংলাদেশের অস্তিত্ব মেনে নেয়। এখন বলতে পারবে, যে দলিলে স্বাক্ষর করে পাকিস্তানিরা হার মেনেছিল, তাতে স্বাক্ষর করেছিলেন কে কে? সেই দলিলেই বা কী লেখা ছিল? হ্যাঁ, আজকে চিরসত্য সেই গল্প-ই লিখবো। তার আগে, একটা পরীক্ষা হয়ে যাক। আমাদের দেশের স্বাধীনতার গল্প তো আমরা অনেক বার শুনিয়েছি। সেই গল্পটুকুই একদম সংক্ষেপে আরেকবার বলছি, দেখি তো, কার কতটুকু মনে আছে। লাল-সবুজের মানচিত্রে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের সবার কাছে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চায়। কারণ বাঙ্গালী জাতির বুকে ভরা আত্মবিশ্বাস; ৫২ বছরের এই বিজয়ের নিশানের দিকে। ৫২ বছরে পদার্পণ করা স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলার মাটিতে এখনো সেই ৩০ লাখ শহীদের রক্তঝরা দিনগুলো মনে করছেন প্রবীণদেও সাথে নবীনরাও।
যুদ্ধবিধ্বস্ত পাকিস্তানের একটি প্রদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণে জাতির পিতার ক্লান্তিহীন চেষ্টা, বিশ্বের সব দেশের স্বীকৃতি আদায়, বঙ্গবন্ধুর মাত্র সাড়ে তিন বছরের শাসনামলে একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে স্বল্পোন্নত দেশের কাতারে উন্নীত করা সবই ইতিহাস। এরপরই কালো অধ্যায়। জাতির পিতাকে হত্যার মাধ্যমে দেশকে উন্নয়ন-অগ্রগতির মিছিল থেকে হটিয়ে ফের ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার দীর্ঘ চেষ্টা করা হয়েছে। এরপর টানা ১৬ বছর চলেছে সামরিক শাসন। এরপর সংসদীয় গণতন্ত্র ফিরলেও তিন মেয়াদের পরই আবার অনির্বাচিত সরকারের প্রত্যাবর্তন। সব মিলিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের ৫২ বছরের বড় একটি অংশই ছিল গণতন্ত্রের বাইরের যাত্রা। বিজয়ের ৫২ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের ২৬ বছর দেশশাসন করার সুযোগ পেয়েছে দলটি। এই ২৬ বছর আওয়ামী আমলের মধ্যে, ২২ বছরের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জাতির পিতার বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার মাত্র সাড়ে তিন বছর দেশ পরিচালনার সুযোগ পায়। জাতির পিতাকে হত্যার পরবর্তী দীর্ঘ একুশ বছর পর ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকে পাঁচ বছর। মাঝে ৫ বছর বাদ দিয়ে ২০০৯ সালের নির্বাচনে ক্ষমতায় আসার পর এ পর্যন্ত অর্থাৎ গত ১৪ বছর টানা ক্ষমতায় রয়েছে বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট।
২০০৯ সাল থেকে আওয়ামী লীগের ক্ষমতার এক যুগের বেশি ধরে দেশের মানুষসহ গোটা বিশ্ব দেখছে বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি ও সফলতার ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার ম্যাজিক। মৃত্যুভয়কে তুচ্ছ করে চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হয়ে দেশ পরিচালনা করছেন, অর্জন করেছেন বিশ্বের ইতিহাসে দীর্ঘতম সময়ে নারী প্রধানমন্ত্রী হয়ে দেশ পরিচালনার রেকর্ড। সব মিলিয়ে আজ বাংলাদেশ গোটা বিশ্বে এক মর্যাদার নাম।
এখন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ টানা তিন মেয়াদ ধরে ক্ষমতায়। এরই মধ্যে ‘উন্নয়নের মহাসড়কে’ অবস্থান করছে বাংলাদেশ। সকল দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র, চোখ রাঙ্গানি উপেক্ষা করে দেশের বৃহত্তম সেতু পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মান সম্পন্ন করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। এই সেতুর ফলে শুধু দক্ষিণবঙ্গই নয়, বদলে যাচ্ছে পুরো দেশের অর্থনৈতিক চিত্র। এই সেতু দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার যোগাযোগ, বাণিজ্য, পর্যটনসহ নানা ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। পাশাপাশি আরো নানা অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজ চলমান। ঢাকার বুকে এখন চলছে অত্যাধুনিক মেট্রোরেল যার ফলে যানজট থেকে মুক্তি পেতে শুরু করেছে বাংলাদেশ। আগামী অক্টোবর মাসে মতিঝিল পর্যন্ত এমআরটি লাইন চালু হলে রাজধানীর যান চলাচলে আসবে ব্যাপক পরিবর্তন। সারাদেশে রাস্তাঘাটের উন্নয়নসহ অবকাঠামো নির্মাণের কর্মযজ্ঞ চলছে। ঢাকার আশপাশে নদ-নদী রক্ষা করে পরিবেশের সৌন্দর্য্য রক্ষায়ও চলছে নানাবিধ কর্মকাণ্ড।
নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণকাজ সহজ ছিল না। কিন্তু তা করে বিশ্বকে বঙ্গবন্ধুকন্যা দেখিয়ে দিচ্ছেন যে, বাংলাদেশ পারে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে। স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তীতে শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ রূপান্তরিত হয়েছে মধ্যম আয়ের দেশে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার ফ্রেমওয়ার্ক দিয়েছেন। দিয়েছেন শতবর্ষব্যাপী ডেল্টা প্লান। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হাত ধরে এবং বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এখন উন্নত দেশের অভিমুখে ধাবমান।