পলিটিক্যাল ডেস্ক, ৩০, ২০১৯ইং এইউজেডনিউজ২৪ :২০১৩, ২০১৪ এবং ২০১৫ সালে
বিএনপির সহিংসতার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির নেতা-কর্মীরা দেশের মানুষ ও সম্পদের ওপর বারবার হামলা চালিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সাজাকে অনেকে রাজনৈতিক রং মেশানোর চেষ্টা করছে। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে এমন মন্তব্য করেন তিনি। অবৈধ পথে অর্থ উপার্জনকে একটি রোগ আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, চুরির টাকা দিয়ে ভোগ-বিলাসে জীবন কাটানো সরকার সহ্য করবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কেউ অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করে ভোগ-বিলাসি জীবন-যাপন করবেন, আর কেউ সৎভাবে, সাদাসিধে জীবন-যাপন করতে গিয়ে তাঁর জীবনটাকে নিয়ে কষ্ট পাবেন, এটা হতে পারে না।’
শেখ হাসিনা আজ দুুপুরে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করে বিরানী-পোলাও খাওয়া আর ব্রান্ডের জিনিস পরার চেয়ে সাদাসিধে জীবন যাপন করা অনেক সম্মানের। অন্তত, এটা অবৈধ, চোরা টাকা এই কথাটা সারাক্ষণ মনে আসবে না। শান্তিতে ঘুমানোও যাবে।’
তিনি বলেন, ‘আসলে এই টাকা বানানোটা একটা রোগ, এটাও একটা অসুস্থতা। একবার টাকা বানাতে থাকলে তার শুধু বানাতেই ইচ্ছে করে। কিন্তু, ঐ টাকার ফলে তার ছেলে-মেয়ে বিপথে যাবে, পড়াশোনা নষ্ট হবে, তারা মাদকাসক্ত হবে, সেটা দেখারও সময় নাই। টাকার পেছনে ছুটছেতো ছুটছেই। আর নিজের পরিবার ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে।’
‘এই ধরনের একটা সামাজিক অবস্থা আমরা চাই না,’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন,‘আমরা চাই সৎ পথে কামাই করে সম্মানের সাথে চলবে। আর চোরা টাকা, দুর্নীতির টাকা, অবৈধ পথে অর্জিত টাকার বিলাসিতাকারিকে নিয়ে মানুষ মুখে যাই বলুক পেছনে একটা গালি দেবে। এই গালিটা শোনা না গেলেও গালিটা কিন্তু খেতে হয় সেকথাটা মনে রাখতে হবে।’
সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসনাতের সভাপতিত্বে সম্মেলনে
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি একেএম রহমতউল্লাহ এবং সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান, ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামী লীগের শাহে আলম মুরাদ বক্তৃতা করেন।
সম্মেলনে মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণের দপ্তর সম্পাদক এম সাইফুল্লাহ সাইফুল এবং গোলাম রব্বানী বাবলু শোক প্রস্তাব পাঠ করেন।প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা কোনো রাজনৈতিক মামলা নয়… এটা সম্পূর্ণভাবে দুর্নীতির মামলা। তবে, অনেকেই এটাতে রাজনৈতিক রং মেশাতে চান। আমরা রাজনৈতিক কোনো উদ্দেশ্যে তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা দেইনি।’ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, কবুতর ও বেলুন উড়িয়ে ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধন করেন।
খালেদা জিয়ার মামলা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এতিমের জন্য আসা টাকা তাদের না দিয়ে খালেদা জিয়ার নিজের অ্যাকাউন্টে জমা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সেনাশাসিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার এতিমের টাকা আত্মসাতের ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মামলা করেছিল। ‘সে মামলার রায়ে সাজা পেয়ে তিনি এখন জেলে আছেন।’

সম্প্রতি হাইকোর্টের সামনে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাস ভাঙচুরের ঘটনার সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনো কারণ ছাড়াই তারা হঠাৎ করে এ হামলা করে। ‘বিএনপির নেতা-কর্মীদের জন্য এটা নতুন কিছু নয়… তাদের এসব করার অভ্যাস আছে।’
২০১৩, ২০১৪ এবং ২০১৫ সালে বিএনপির সহিংসতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিএনপির নেতা-কর্মীরা দেশের মানুষ ও সম্পদের ওপর বারবার হামলা চালিয়েছে।

মানুষ কিভাবে বিএনপি’র অত্যাচার-নির্যাতনের কথা ভুলে যায় সে প্রসঙ্গ উত্থাপন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় তারেক রহমান সাজাপ্্রাপ্ত, এতিমের টাকা আত্মসাতের জন্য খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে আর সেই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে সে এখন কারাগারে। এটা কোন রাজনৈতিক মামলা নয়, সরাসরি দুর্নীতির মামলা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ তার বিরুদ্ধে (খালেদা জিয়া) কোন মামলা করেনি। যদিও এটাকে অনেকে রাজনৈতিক রঙ দিতে চান। অথচ ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে খালেদা জিয়া আমার বিরুদ্ধে ১২টি মামলা দিয়েছিল।’
তিনি বলেন, আহসানউল্লাহ মাষ্টার এবং শাহ এএমএস কিবরিয়াকে হত্যাসহ আমাদের বহু নেতা-কর্মীর ওপর হামলা, মামলা নির্যাতন করেছে, অনেককে হত্যা করেছে। একই সময়ে ৬৩ জেলার ৫শ’ জায়গায় বোমা হামলা করেছে। উত্তর জনপদে বাংলাভাই সৃষ্টি করে সমগ্র দেশটাতে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। তাদের অত্যাচারের স্টিম রোলার সর্বক্ষেত্রে চলেছে।
বিএনপি’র সময় সরকারের মধ্যে আরেকটি সরকার হিসেবে হাওয়া ভবন প্রতিষ্ঠা করে সবকিছু থেকে চাঁদা খাওয়ার প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, সে সময় বাংলাদেশ বিশ্বে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের দেশ এবং দুর্নীতি ও মানি লন্ডারিংয়ের দেশ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি অভিযোগ করেন, তাঁর দলের নেতা-কর্মীরা সে সময় ঘরে থাকতে পারেনি, কারো হাত কেটে নিয়েছে, কারো চোখ তুলে নিয়েছে, হাজার হাজার মেয়েকে পাকিন্তানী হানাদার বাহিনীর কায়দায় ধর্ষণ করেছে, কারো কারো ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করে সেখানে পুকুর কেটেছে, কলাগাছের চারা রোপন করে দিয়েছে, যেন বাড়ি-ঘরের কোন চিহ্নই না থাকে।
এসব অত্যাচার নির্যাতন খালেদা জিয়া এবং তার ছেলে তারেক রহমানের নির্দেশেই বিএনপি’র ক্যাডাররা করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সে সময় ২৩, বঙ্গবন্ধু অ্যাভেনিউ এবং ধানমন্ডির আওয়ামী লীগ অফিস হাসপাতাল হয়ে গিয়েছিল, সবাইকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাটুকু সে সময় দেওয়া যায়নি।’
আমেরিকার এফবিআই’র এজেন্টকে কিনে নিয়ে সজিব ওয়াজেদকে হত্যা প্রচেষ্টা এবং সেই এফবিআই’র তদন্তেই জিয়া পরিবারের মানি লন্ডারিং এর তথ্য উঠে আসার কথাও তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি এ সময় বিগত নির্বাচন নিয়ে বিএনপি’র বিএনপি’র সমর্থকদের কঠোর সমালোচনা করে জিয়াউর রহমানের হ্যাঁ, না ভোট থেকে শুরু করে খালেদা জিয়ার ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন এবং তাদের সময়কার বিভিন্ন নির্বাচনে জনগণের ভোটাধিকার হরণের চিত্র তুলে ধরেন।
খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকাকালিন ঢাকা শহরে বিদ্যুৎ ও পানির জন্য জনগণের হাহাকারের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তখন বিদ্যুৎ ও পানি দিতে না পারার কারণে বিএনপি’র অনেক নেতা কর্মী জনগণের ধাওয়া খেয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘৯৬ সালে সরকার গঠনের সময় দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ১৬শ’ মেগাাওয়াট থেকে বাড়িয়ে ২০০১ সালে ক্ষমতা ছাড়ার সময় ৪ হাজার ৩শ মেগাওয়াটে উন্নীত করে রেখে গেলেও পরবর্তীতে ২০০৯ সালে সরকার গঠনের সময় সে বিদ্যুৎ ৩২শ’ মেগাওয়াটে নেমে এসেছিল।
তাঁর সরকারের সময়ে রাজধানীর সম্প্রসারণ এবং নাগরিকদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকা শহরের সঙ্গে সংযুক্ত ১৭টি ইউনিয়নকে তাঁর সরকার ওয়ার্ডে রূপান্তরিত করেছে। নতুন করে ৩৬টি ওয়ার্ড সিটি কর্পোরেশনের আওতাভূক্ত করা হয়েছে এবং আরো পানি শোধনাগার সৃষ্টি করে সুপেয় পানি সরবরাহের পরিমানও বাড়ানো হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ঢাকা শহরে এখন যে উন্নয়নের ছোঁয়াটা বিদ্যমান তা অতীতে কোন সরকারই করেনি এবং জনগণও তা দেখেনি। একইসঙ্গে রাজধানীর পরিধি বেড়ে গেলেও সকলের সেবা পাওয়া নিশ্চিত করার জন্যই সরকার একে উত্তর এবং দক্ষিণ দু’টি অংশে ভাগ করেছে।
এ সময় তিনি জনগণকে পানি এবং বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান পুণর্ব্যক্ত করে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রতিও মনযোগী হওয়ার পরামর্শ দেন। সূত্র : বাসস ও ইউএনবি

