কৃষি, প্রকৃতি ও পরিবেশ ডেস্ক: সাইট্রাস বা লেবুজাতীয় ফল ভিটামিন-সি এর অন্যতম প্রধান উৎস। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা (ইম্যূনিটি) বৃদ্ধিতে সাইট্রাস ফল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পুষ্টিবিদদের মতে একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের প্রতিদিন ৭৫ (পঁচাত্তর) মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি গ্রহণ করা উচিত। সেই হিসেবে ১৬ (ষোল) কোটি জনসংখ্যার জন্য প্রতিদিন ১২,০০০ কেজি বা ১২ মে.টন ভিটামিন-সি এর প্রয়োজন। বছরে প্রয়োজন ৪৩৮০ মে.টন। ভিটামিন-সি এর উৎস হিসেবে মাল্টা, কমলালেবু, লেবু, বাতাবিলেবু প্রভৃতি গ্রহণ করা হলে প্রতি বছর ৩০ (ত্রিশ) লক্ষ মে.টন সাইট্রাস জাতীয় ফলের
প্রয়োজন। সে নিরিখে চাহিদার তুলনায় বাংলাদেশে সাইট্রাস জাতীয় ফলের আবাদ ও উৎপাদন খুবই কম (২০১৭-১৮ অর্থ বছরে লেবুজাতীয় ফসলের আবাদ ২৯,২২৪ হেক্টর, উৎপাদন ৩,৮০,০৬৬ মে.টন তথ্য সূত্র-হর্টিকালচার উইং, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর)। দেশের চাহিদা মিটাতে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময়ে মাল্টা ও কমলা আমদানি করতে হয় (২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ব্যয় হয় ১৯০ কোটি টাকা)। সেই বিবেচনায় মূলত ভিটামিন-সি ও অন্যান্য পুষ্টির চাহিদা পূরণ ও বিপুল পরিমান বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় ঘটানোর জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ২০১৯-২০ অর্থ বছওে “লেবুজাতীয় ফসলের সম্প্রসারণ, ব্যবস্থাপনা ও উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্প” টি শুরু করেছে।
প্রকল্প পরিচালক কৃষিবিদ ড. ফারুক আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে ৩০টি জেলাধীন ১২৩ টি উপজেলায় এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ প্রকল্পের আওতায় কমলা, মাল্টা, বাতাবিলেবু ও লেবুজাতীয় ফসলের ৫৪,১০০টি প্রদর্শনী স্থাপন ও ৫,০০০ টি পুরাতন বাগান পরিচর্যা প্রদর্শনী স্থাপন, ৫৯,১০০ জন প্রদর্শনী কৃষককে প্রশিক্ষণ প্রদানের সংস্থান রয়েছে। এ ছাড়া ২০টি হর্টিকালচার সেন্টারে বিভিনড়ব লেবু ফসলের উনড়বত জাতের মাতৃবাগান স্থাপনের সংস্থান রয়েছে। আরও রয়েছে লেবু চাষে উদ্ধুদ্ধকরণে বিভিনড়ব কর্মকান্ড যেমন-মাঠ দিবস/কৃষক সমাবেশ ও উদ্ধুদ্ধকরণ ভ্রমণ। তিনি আরো জানান ইতোমধ্যে বিগত দুই বছরে (২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ অর্থ বছর) ২৬,৮৫০ টি প্রদর্শনীর মাধ্যমে ২,০০০ হেক্টর জমি মাল্টা, কমলা, লেবু ও বাতাবিলেবুর আওতায় আনা হয়েছে। প্রদর্শনীর ২৬,৮৫০ জন কৃষককে লেবু ফসল উৎপাদনের আধুনিক প্রযুক্তির উপর প্রশিক্ষণ করা হয়েছে। যথাযথ বাগান পরিচর্যার জন্য প্রত্যেক প্রদর্শনী কৃষককে ১টি সিকেচার, ১টি গ্রাফটিং নাইফ ও ১টি স্প্রে- মেশিন প্রদান করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তাবায়ন শেষে ২০২৪ সালে লেবু ফসলের উৎপাদন ২০% বৃদ্ধি পারে, অতিরিক্ত ৪০,০০০ মে.টন কমলা ও মাল্টা উৎপাদনের মাধ্যমে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে। ইতোমধ্যে প্রকল্পটির প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে- বাজারে সবুজ রঙ্গের মাল্টা (বারি
মাল্টা-১) সর্বত্রই পাওয়া যাচ্ছে। টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর উপজেলায় সাম্প্রতিক পরিদর্শনে বিষয়টি লক্ষ্য করা গেছে। মধুপুর উপজেলা আনারস উৎপাদনে ঐতিহ্যগতভাবেই প্রসিদ্ধ। এই আনারসের রাজ্যে ঠাঁই করে নিয়েছে লেবুজাতীয় ফসল-প্রধানত মাল্টা (সবুজ মাল্টা-বারি মাল্টা-১)। উপজেলার মহিষমারা ইউনিয়নের কৃষক ছানোয়ার হোসেন, মোঃ পাপুল, মোঃ সাহেব আলী, মিজানুর রহমান (মজনু) মিয়া প্রমুখ কৃষকের জমিতে আনারসের পাশাপাশি সবুজ রঙ্গের মাল্টা শোভা পাচ্ছে। প্রগতিশীল আধুনিক ধ্যান ধারনার কৃষক ছানোয়ার হোসেন জানান গত সাইট্রাস প্রকল্পে আওতায় ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ১০০ টি চারা (৬০টি মাল্টা, ১০ টি কমলা, ৪০টি লেবু) পেয়েছেন। এবং নিজ উদ্যোগে আরো ১০০টি চারা রোপণ করেছেন। গত বছর (২০২০ সাল) এক লক্ষ টাকার মাল্টা বিμি করেছেন এবং এ বছর দুই লাখ টাকার মাল্টা বিত্রিæ করতে পারবেন বলে আশা করছেন। উপজেলা কৃষি অফিসার জানান অত্র প্রকল্পের বিভিন্ন প্রদর্শনীর মাধ্যমে ৪৭ একরসহ মোট ৮০ একর প্রায় জমিতে মাল্টা আবাদ হচ্ছে, এই আবাদ দিন দিন বাড়ছে।
বাড়ছে মাল্টার আবাদ
অর্থনীতি
0 Views