বাংলা চলচ্চিত্রে বিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে নিয়মিত অভিনয়, নান্দনিক উপস্থাপন ও প্রাসঙ্গিক চরিত্র বাছাইয়ের মাধ্যমে স্থায়ী জায়গা করে নেওয়া নন্দিত অভিনেত্রী সৈয়দা কামরুন নাহার শাহনূর আবারও রাজসিক ভঙ্গিতে ফিরছেন বড় পর্দায়। একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে সৌন্দর্য, অভিনয়শৈলী ও ক্যারিশমার অনন্য সমন্বয়ে যে স্বল্পসংখ্যক অভিনেত্রী দর্শক হৃদয়ে স্থায়ী আসন গড়তে পেরেছিলেন—শাহনূর তাদের অন্যতম। তিনি ২৪ বছরের পথ পেরিয়ে এখনও চিরসবুজ রয়েছেন দর্শকের মনে।
চলচ্চিত্রের শুরু থেকেই তার অভিনীত কাজগুলো পেয়েছে বিপুল দর্শকপ্রিয়তা। ব্যবসাসফল ছবিতে নিয়মিত অভিনয় করলেও তিনি কখনোই অযাচিত প্রতিযোগিতা বা গ্ল্যামার-শোডাউনে নিজেকে জড়াননি। বরং বেছে নিয়েছেন মানসম্মত গল্প, শক্তিশালী চরিত্র ও পরিচালনার উৎকর্ষ—যা বাংলা চলচ্চিত্রকে বারবার সমৃদ্ধ করেছে। শিল্পের প্রতি তার দায়বদ্ধতা ও আপসহীন অবস্থান তাকে আলাদা মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেছে।
এ পর্যন্ত ৬০টির বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন শাহনূর, যার অধিকাংশই বাণিজ্যিকভাবে সফল। জহির রায়হানের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত হাজার বছর ধরে ছবিতে ‘আম্বিয়া’ চরিত্রে তার অসাধারণ অভিনয় দর্শক-সমালোচক সবার প্রশংসা কুড়ায়। এই চরিত্রের জন্য তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের প্রাথমিক মনোনয়ন পান।
অভিনয়ের পাশাপাশি চলচ্চিত্র মূল্যায়নেও রেখেছেন গুরুত্বপূর্ন অবস্থান। ২০২০–২১ সালের ‘ঢাকা–ওআইসি ইউথ ক্যাপিটাল ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড’-এর চূড়ান্তপর্বের তিনজন সম্মানিত বিচারকের একজন ছিলেন তিনি, যা তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের আনুষ্ঠানিক প্রজ্ঞাপনে নিশ্চিত করা হয়।
অভিনয়ের বাইরেও বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে নিয়মিত অংশগ্রহণ করেন শাহনূর। বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনসহ একাধিক সরকারি প্রতিষ্ঠানের শুভেচ্ছাদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। নারী ও শিশু অধিকার, মাদকবিরোধী সচেতনতা এবং পরিবেশ রক্ষায় দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে কাজ করছেন তিনি।
একজন মুক্তিযোদ্ধার গর্বিত কন্যা হিসেবে দেশপ্রেম ও সংস্কৃতিচর্চাকে তিনি নিজের শিল্পযাত্রার অংশ মনে করেন। চলচ্চিত্রের পাশাপাশি অসংখ্য নাটক, টেলিফিল্ম ও তথ্যচিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে তৈরি করেছেন শক্তিশালী দর্শকভিত্তি। ধ্রুপদী সৌন্দর্য, মেধা এবং পরিপক্ক অভিনয়ের কারণে তিনি আজও দর্শকের কাছে সমান জনপ্রিয়।
শাহনূর যুক্তরাষ্ট্রের ফোবানা সম্মেলন-এ অংশ নিয়েছিলেন গত চার বছর আগে। সেখানে স্টেজ শো, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা এবং বিশেষ সেশনে অংশ নিয়ে প্রবাসী দর্শকদের মুগ্ধ করেন। ফোবানা আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকেও তাকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়।

