যে সব রপ্তানিকারকরা বন্ড সুবিধায় পণ্য এনে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করছে অর্থাৎ বন্ড সুবিধার যারা অপব্যবহার করছে তাদেরকে প্রকাশ্যে আনতে আহ্বান জানিয়েছেন পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা। এমনকি তাদের দু’একজনকে প্রকাশ্যে শাস্তি প্রদানেরও দাবি জানিয়েছেন। রবিবার রাজধানীর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ‘মিট দ্য বিজনেস’ অনুষ্ঠানে এ দাবি জানান বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএর শীর্ষ নেতারা।
অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হাতেম বলেন, আমি আপনাদেরকে (এনবিআর) আগেও বহুবার বলেছি যারা বন্ডের অপব্যবহার তারা কখনোই কোনো প্রকার হয়রানি বা সমস্যায় পড়ে না। কারণ তারা যখন বন্ডের অপব্যবহারকারী তারা তো জানে সে অপব্যবহার করবে। তাই পণ্য আসার সকল পথে যেখানে যা করা দরকার সব দিয়ে পথ ঠিক করে রাখে। আসার সঙ্গে সঙ্গে এত দ্রুত এটা বের হয়ে যায় কখনোই সে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে নাই। এই পর্যন্ত কোনো রেকর্ড নাই।
এ সময় তিনি এনবিআর চেয়ারম্যানের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, যার বন্ডের অপব্যবহারকারী তাদের অন্তত দু’একজনকে ধরে দৃষ্টান্তমূলক ও দৃশ্যমান কিছু শাস্তি দেন। এরপর জনসম্মুখে ও পত্রিকায় প্রকাশ করে তাদেরকে সামাজিকভাবে হেয় করার ব্যবস্থা করেন এবং ভবিষ্যতে বাংলাদেশের কোনো ব্যবসায়ী যেন আর না করতে পারে সেই ব্যবস্থা নেন। এই ধরনের লোকদের কারণে প্রকৃত ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাদেরকে দৃশ্যমান করেন, আমরা দেখি যে এই প্রতিষ্ঠান, এই ব্যক্তি বন্ডের অপব্যবহার করে। তাহলে হয়ত বন্ডের অপব্যবহার অনেকটা কমে আসবে এবং আপনারা আপনারাও স্বস্তিতে থাকবেন আমরাও স্বস্তিতে ব্যবসা করতে পারব। একইভাবে বন্ড অপব্যবহারকারীদের প্রকাশ্যে আনার কথা বলেছেন বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) প্রেসিডেন্ট মাহমুদুল হাসন খান। তিনি বলেন, আজকের বৈঠকের যে বিষয়টি মিডিয়াতে আসবে বলে আমি আশঙ্কা করছি, সেটা হলো বন্ডের ব্যাপক অপপ্রয়োগ। যদি ব্যাপক অপপ্রয়োগ হতো তাহলে ইন্ডাস্ট্রি এতদূর আগাত না। আমি এনবিআরের কাছে অনুরোধ করব আমাদেরকে স্পেসিফিক বলবেন আমাদের কোন কোন মেম্বার অপপ্রয়োগ করেছে।
অসাধু ব্যবসায়ীদের জন্য পুরো ব্যবসায়ী সম্প্রদায় দায় বহন করবে না-এমনটা জানিয়ে তিনি বলেন, বিজিএমইএতে আমাদের নতুন পর্ষদ এ ব্যাপারে অত্যন্ত সিরিয়াস। আমরা জোর গলায় বলছি, আমাদের কোনো মেম্বার যদি অপব্যবহার করে তার সার্ভিস আমরা বন্ধ করেছি। ইতোমধ্যে আমরা ইন্ডিকেশন দিয়ে ২২টা প্রতিষ্ঠানকে বলেছি এসব চলবে না। এগুলো প্রকাশ্য কথা, কোন গোপনের বিষয় না। কারণ মুষ্ঠিমেয় কিছু লোকের জন্য যে পুরো কমিউনিটি দায়ী হবে- এটা আমরা একসেপ্ট করবো না। অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেন, বন্ড ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও গতি আনতে ইউটিলাইজেশন পারমিশন (ইউপি) ইস্যুর পুরো প্রক্রিয়া অনলাইনভিত্তিক সিস্টেমে আনার উদ্যোগ নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এ লক্ষ্যে আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে ‘সিবিএমএস’ নামের স্বয়ংক্রিয় সফটওয়্যার ব্যবহারে বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, পৃথিবীর অনেক দেশ অ্যাসাইকুডা সিস্টেম ব্যবহার করে না। আমরাও বিকল্প ব্যবস্থায় যাচ্ছি। সামগ্রিকভাবে কাস্টমস ব্যবস্থাকে অনলাইন করা হবে। সিঙ্গেল উইন্ডো প্রকল্পের আওতায় এটি করা যাবে। বিশ্ব ব্যাংকও অর্থায়ন করতে চায়। এখন শুধু সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়। এছাড়া পণ্যের এইচএস কোডের হেরফেরে কাস্টমসে মাল পড়ে থাকার সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।
জানা গেছে, বর্তমানে এনবিআরের অধীন তিনটি কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের মাধ্যমে এই সফটওয়্যারের ২৪টি মডিউল ব্যবহার করে বন্ডেড ওয়্যারহাউস লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনলাইনে সেবা প্রদান করা হচ্ছে। বন্ডেড ওয়্যারহাউস লাইসেন্সধারী রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো শুল্ক মুক্তভাবে কাঁচামাল আমদানির জন্য শুল্ক রেয়াত ও প্রত্যর্পণ পরিদপ্তরের অনুমোদিত নিয়ম অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট থেকে ইউপি গ্রহণ করে থাকে। সিবিএমএস-এর ইউপি মডিউল চালু হলেও এখনো বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে তা নিচ্ছে। মাত্র অল্প কিছু প্রতিষ্ঠান অনলাইনে এই সেবা নিচ্ছে। সফটওয়্যারটির ব্যবহার বাধ্যতামূলক না হওয়ায় গত ১০ মাসেও এর ব্যবহার কাক্সিক্ষত মাত্রায় পৌঁছায়নি।
বন্ড সুবিধার ‘অপব্যবহারকারী’ কারা
অর্থনীতি
5,748 Views

