ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনে মুসলিম দেশগুলোর তাদের কিছু ভূমি ছেড়ে দেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন ইসরায়েলে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মাইক হাকাবি।
বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হাকাবি বলেন, ‘মুসলিম দেশগুলোর কাছে ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রিত ভূমির চেয়ে ৬৪৪ গুণ বেশি জমি রয়েছে।’
‘তাহলে যদি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের এমন কোনো আকাঙ্ক্ষা থাকে, তবে এমন কারও (মুসলিম দেশ) থাকা দরকার, যে বলবে, ‘‘আমরা সেটা (ফিলিস্তিন রাষ্ট্র) আমাদের এখানে রাখতে চাই’”, বলেন মাইক হাকাবি।
কট্টর ইহুদিবাদী কূটনীতিক হাকাবি আগে থেকেই ‘গ্রেটার ইসরায়েল’ ধারণার প্রবল সমর্থক। তিনি দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূমিতে ইসরায়েলের স্থায়ী কর্তৃত্ব চান এবং পশ্চিম তীরকে বর্ণনা করতে বাইবেলের ‘জুদিয়া ও সামারিয়া’ শব্দযুগল ব্যবহার করেন।
এই মার্কিন কূটনীতিকের কিছু বক্তব্য ইসরায়েলের অতিরাষ্ট্রবাদী গোষ্ঠীগুলোর মতোই, যারা দাবি করে, দখলকৃত পশ্চিম তীর ও গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের তাড়িয়ে আরব বা মুসলিম দেশগুলোতে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন করা যেতে পারে।
তবে এ রকম নীতি কার্যকর হলে তা আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হবে বলে মনে করে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলো।
অধিকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সহিংসতায় বারবার উসকানি দেওয়ায় ইসরায়েলের কট্টরপন্থী দুই মন্ত্রীর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘটনায় হাকাবি যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়াসহ যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদেরও কড়া সমালোচনা করেন। সাক্ষাৎকারে হাকাবি ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ব্যাপকভাবে সমর্থন পাওয়া দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের প্রস্তাবকে ‘একটি উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্য’ হিসেবে আখ্যা দেন।
এই সমাধান অনুযায়ী, দখলকৃত পশ্চিম তীর ও গাজায় একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠিত হবে, যার রাজধানী হবে পূর্ব জেরুজালেম এবং এটি ইসরায়েলের পাশাপাশি অবস্থান করবে।
ব্লুমবার্গে দেওয়া আরেকটি সাক্ষাৎকারে হাকাবি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এখন আর স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে কাজ করবে না।
পরে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস জানান, রাষ্ট্রদূত তাঁর ব্যক্তিগত মত প্রকাশ করেছেন, আর মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ে মার্কিন নীতির দায়িত্ব প্রেসিডেন্টের।
এ মাসের শেষ দিকে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ফ্রান্স ও সৌদি আরবের কূটনীতিকেরা এক সম্মেলন আয়োজন করবেন। ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের একটি রূপরেখা নির্ণয় করা হবে এর লক্ষ্য। যদিও হাকাবি ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্র কোথায় গঠিত হতে পারে বা যুক্তরাষ্ট্র এ ধরনের চেষ্টাকে সমর্থন করবে কি না, সে বিষয়ে স্পষ্ট করে বলেননি। তবে সম্মেলনটিকে ‘সময়োপযোগী ও যথাযথ নয়’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘একটি যুদ্ধ চলার মধ্যে ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলোর এমন কিছু চাপিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা সম্পূর্ণ ভুল দৃষ্টিভঙ্গি।’ এতে ইসরায়েলের নিরাপত্তা আরও দুর্বল হবে বলে যুক্তি দেন তিনি।
বিবিসির নিউজআওয়ার অনুষ্ঠানে হাকাবি বলেন, ‘ফিলিস্তিন রাষ্ট্র কেন ঠিক ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রিত জমিতেই গঠিত হতে হবে? আমি মনে করি, যাঁরা দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের পক্ষে কথা বলছেন, তাঁদের সবার কাছে এ প্রশ্ন তোলা উচিত।’
পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন করা উচিত নয়—যুক্তরাষ্ট্র এমন দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে কি না, জানতে চাইলে হাকাবি বলেন, ‘আমি বলছি না, কখনোই হবে না। আমি বলছি, এ নিয়ে সংস্কৃতিগত পরিবর্তন ঘটতে হবে।’