আমাদের ছিল বড় বোন-ছোট বোন সম্পর্ক। আমার সেই ছোট বোনটা কয়েক দিনে ধরে হাসপাতালে আছে। শুনলাম, লাইফ সাপোর্টে আছে। আজ (রোববার) ঘুম থেকে উঠেই শুনি, আর কোনো দিন সে ফিরবে না। আমাদের আর দেখা হবে না।
প্রায় ৫০ বছরের সম্পর্ক। এই দীর্ঘ সময়ে ফরিদাকে নানাভাবে দেখেছি। এত স্মৃতি, এত স্মৃতি—সকাল থেকে মনে হচ্ছে আর কষ্ট হচ্ছে। মনে পড়ে ওর সঙ্গে প্রথম দিনের পারফরম্যান্সের কথা। আশির দশকের শুরুতে রোটারী ক্লাবের একটা অনুষ্ঠান ছিল। ঢাকার শ্যামলীতে। সেই ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত ছিল আমার স্বামী। তাই ওদের কাছে আমি ছিলাম ভাবি। ক্লাবের অনুষ্ঠান নিয়ে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে বলল, ফরিদাকে চায়। আমি কথা বলতে পারব কি না। ফোন করলাম ফরিদাকে, গাইতে পারবে কি না জিজ্ঞেস করতেই বলল, পারব, কিন্তু আমার মেয়েটা (জিহান ফারিয়া) তো ছোট।
বললাম, একদম টেনশন কোরো না। ছোট বাচ্চারা আমার কাছে একদম ঠিক থাকে। কেউ না থাকলে আমিই কোলে নিয়ে রাখব।
সাদামাটা চলত ফরিদা। অনুষ্ঠানের আগে আমার ব্যাগের মধ্যে যা যা ছিল, তা দিয়ে ফরিদাকে সাজিয়ে দিয়েছিলাম। ওকে মঞ্চে পাঠিয়ে বাচ্চাটাকে জড়িয়ে ধরে বসে থাকলাম। সেদিন ফরিদা কী অপূর্ব একটা পারফরম্যান্স দিল, বলে বোঝানো যাবে না। হয়তো মনটায় শান্তি ছিল, ফেরদৌসী আপার কোলে বাচ্চা ঠিক থাকবে—তাই সে–ও মনের আনন্দে গাইল। ওই প্রথম তার কোনো পরিবেশনা সামনাসামনি উপভোগ করলাম। ফরিদাকে নিয়ে পরে বেশ কয়েকটি দেশেও গেছি। মনে পড়ছে যুগোস্লাভিয়া ও যুক্তরাজ্য সফরের কথা। প্রতিটি জায়গায় এত মজার মজার অভিজ্ঞতা, সব মনে পড়ছে। ফরিদা একদম ভেতো বাঙালি ছিল। দেশের বাইরেও ভাত না হলে তার চলত না। যুগোস্লাভিয়ায় আমরা বেশ কয়েক দিন ছিলাম। যাওয়ার পরই বলল, আমার না ভাত ছাড়া চলবে না। এখন কী হবে? আয়োজকদের কাছে জিজ্ঞেস করলাম, এখানে বাঙালি কে আছে ভাত খাওয়াতে পারবে? তখন আয়োজকেরা অস্থির হয়ে গেল। বলল, কত ভাত লাগবে? আমরা আছি বাঙালি। কতজন ভাত খাবে? ফরিদা খুব খুশি। আরেকবার লন্ডনে গেলাম। তখন আবার ও অন্তঃসত্ত্বা। গাড়িতে যাচ্ছে আর বমি করছে। বলছি, এই ফরিদা, এসব কী হচ্ছে? জানাল ঘটনা। ওখানে গিয়েও তার সেই ভাতের ক্ষুধা। লন্ডনে আমার ননদের একটা রেস্টুরেন্ট ছিল। সেখান থেকে বাঙালি সব খাবার খেত।