‘বড় দল হয়ে উঠতে হলে বাংলাদেশকে ট্রফি জিততে হবে’ –ভাবনাটা বিপিএল চলাকালেই প্রকাশ করেছিলেন রংপুর রাইডার্সের কোচ মিকি আর্থার। সবশেষ আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জেতা এই কোচের কথাটার সুর শোনা গিয়েছিল বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর কণ্ঠেও। দেশ ছাড়ার আগে সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, ‘চ্যাম্পিয়ন হতেই যাচ্ছে বাংলাদেশ’। তবে প্রস্তুতি ম্যাচটা জানান দিল, দিল্লি বহু দূর!
বিষয়টা আগেই আঁচ করতে পেরেছিলেন রিকি পন্টিং। বলেছিলেন, নিজেদের কন্ডিশনে খেলছে না, সঙ্গে তারকা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবালরা নেই— এই বাংলাদেশ খুব বেশি দূর এগোতে পারবে না। একই কথা বলেছেন দক্ষিণ আফ্রিকান কিংবদন্তি এবি ডি ভিলিয়ার্সও।
আর সব সময় কী হয়? বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কোনো টুর্নামেন্টের আগে এমন কোনো কথা কেউ বললে বাংলার ক্রিকেটোস্ফিয়ারে আগুন ধরে যায়, তার আঁচ টের পান মন্তব্যকারী সে ক্রিকেটারও, ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ভালো বলতে পারবেন বোধ হয়, ২০১৯ বিশ্বকাপের আগে এমন মন্তব্য করে তোপের মুখেই পড়তে হয়েছিল তাকে।
কিন্তু এবার কী হলো? পন্টিং ডি ভিলিয়ার্সদের সে মন্তব্যের খবরে ‘হাহা’ প্রতিক্রিয়া দিয়েই কাজ সারা সবার। এই ‘হাহা’ অবশ্য দুই ক্রিকেটারের উদ্দেশ্যে নয়, খোদ নিজেদের ক্রিকেট দলের উদ্দেশ্যেই। নিজেদের পারফর্ম্যান্সই এর বড় কারণ।
মাঝে অনেক বছর ধরে বাংলাদেশ ওয়ানডে ক্রিকেটে ছিল অন্যতম ‘ডার্ক হর্স’। তবে শেষ তিন বছর ধরে সে ‘স্ট্যাটাসে’ ভাঙন ধরেছে। আফগানিস্তানের কাছে দুবার সিরিজ হার, এবারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগে না থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে সবশেষ সিরিজেও হোয়াইটওয়াশ হয়েছে বাংলাদেশ। সব মিলিয়ে দলের অবস্থাটা আর যাই হোক, ট্রফি জেতার ফেভারিট তো নয়ই, ডার্ক হর্স হিসেবে হিসেবের বাইরে থেকে অঘটন ঘটিয়ে দেওয়ার মতো অবস্থানেও নেই বাংলাদেশ। সমর্থকরাও ঠাহর করতে পারছেন তা, সে কারণেই পন্টিংদের সেসব কথায় কোনো প্রতিক্রিয়া নেই একেবারে।
দলের সে সামর্থ্যহীনতার প্রমাণ দেখা গেল সোমবার। দুবাই ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত একমাত্র অনানুষ্ঠানিক প্রস্তুতি ম্যাচে দলের ব্যাটিং ব্যর্থতা আবারও জানান দিল দলের দৌড় হবে কতদূর!
শেষ অনেক দিন ধরেই দলটা ওয়ানডে ক্রিকেট খেলেনি। হিসেবে তা দুই মাসের কিছু বেশি সময়। মাঝের সময়টা আবার বিপিএলে কেটেছে। তাতে দলের ব্যাটারদের টেম্পো নিয়ন্ত্রণেও সমস্যা হয়েছে বেশ করে।
কোভিড-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ বিপিএলের পর যখন ওয়ানডে খেলতে নেমেছে, তখনই ধুঁকেছে। ২০২২, ২০২৩ সবশেষ ২০২৪ সালে এমন কিছু হয়েছে। সেসব বছরে যথাক্রমে আফগানিস্তান, ইংল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দলের ব্যাটিং লাইন আপকে রীতিমতো সংগ্রাম করতে হয়েছে।
এবারও পরিস্থিতিটা এক। দল বিপিএল খেলে সরাসরি চলে এসেছে টুর্নামেন্টটা খেলতে, কোনো প্রকার ওয়ানডে না খেলেই। তাই এবারও শঙ্কা ছিল বেশ।
দেশ ছাড়ার আগে এক ম্যাচ মেজাজের অনুশীলনে ৪৮ ওভারে ৩৯৬ রান তুলে দলের ব্যাটাররা আশা দেখিয়েছিলেন। তবে সে আশার ফানুস চুপসে গেল আসল অনুশীলন ম্যাচে নামতেই। ৭৪ বল ব্যবহারই করা গেল না, বাংলাদেশ অলআউট হলো তারও আগে, স্কোরবোর্ডে উঠল মাত্র ২০২ রান। জবাবে পাকিস্তান শাহিন্স এই রান তাড়া করে ফেলে ৩৪.৫ ওভার হাতে রেখে।
এই ম্যাচে বাংলাদেশ শেষ অনেক বছরের ‘ধারাবাহিকতা’ ধরে রেখেছে। ১১৯ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর ১৩৭ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল গত রাতে। গেল বছরও এমন হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে বাংলাদেশ ম্যাচ হেরেছিল আফগানিস্তানের কাছে।
এই ধসটা নামিয়েছেন উসামা মির। রিস্ট স্পিনে বাংলাদেশের দুর্বলতা বহু দিনের, সেটা প্রস্তুতি ম্যাচেও গেল না। তার প্রমাণ দেন উসামা— মেহেদী হাসান মিরাজ, তাওহীদ হৃদয়, মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে জাকের আলী অনিকও তার শিকার বনে যান। আরেক লেগি সুফিয়ান মুকিমকেও এক ব্যাটার উইকেট দিয়ে এসেছেন।
‘পোস্ট বিপিএল ব্লুজ’, হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়া, আর রিস্ট স্পিনে থরহরিকম্পমান দশা— এই তিন সমস্যা টুর্নামেন্ট শুরুর আগে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপকে ভালোভাবেই নাড়িয়ে দিয়ে গেল বৈকি!