গত সোমবার ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোয় ক্যারিওকা চ্যাম্পিয়নশিপে দ্বিতীয় বিভাগের ম্যাচে দুকি দে কাশিয়াসের বিপক্ষে দলের জয়সূচক গোলটি করেন পেরোলাস নেগরাস মিডফিল্ডার পেপে।
এই গোলে পেরোলাস সেদিন গুরুত্বপূর্ণ একটি জয়ই শুধু পায়নি, বরং নিশ্চিত হয়েছিল ১০০টি গাছের চারা রোপণও। বেশ অভিনব হলেও ২০২৩ সাল থেকে রিও ডি জেনিরোর দক্ষিণ অংশ এবং প্যারাইবা উপত্যকার ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে পুনর্বনায়ন উদ্যোগের অংশ হিসেবে এই কর্মসূচি পালন করছে ক্লাবটি।
একটি গোলের বিপরীতে ১০০ গাছ রোপণের এই উদ্যোগ নিয়ে ম্যাচ শেষে গোলদাতা পেপে বলেছেন, ‘আমি আশা করি, আমরা হাজার হাজার গাছ লাগাতে পারব। যে পৃথিবীতে আমরা বাস করি, সেখানে আমাদের অন্যদের কথাও ভাবতে হবে।’ পেরোলাস ক্লাবের এই ক্যাম্পেইনে দলটির পুরুষ ও নারী পেশাদার দল এবং পুরুষদের অনূর্ধ্ব-২০ দল অন্তর্ভুক্ত আছে। যেখানে এই দলগুলোর করা প্রতিটি গোলের জন্য স্থানীয় প্রজাতির ১০০টি গাছের চারা রোপণ ও পরিচর্যা করা হয়। দুই বছর আগে ক্লাবের গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণে ভারসাম্য আনতে এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই প্রকল্প অন্য ক্ষেত্রগুলোতেও বিস্তৃত হয়েছে। এর মধ্যে চালু করা হয়েছে পরিবেশবিষয়ক শিক্ষা কার্যক্রম। যেখানে খেলোয়াড়, ক্লাবের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং স্কুলের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণির মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৮ হাজার গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে, যা প্রায় ১৯টি ফুটবল মাঠের সমান এলাকাকে আচ্ছাদিত করে রেখেছে। আশা করা হচ্ছে চার বছর পর গাছগুলো বড় হয়ে উঠবে এবং সেই এলাকা ছোটখাটো একটি বনাঞ্চলে পরিণত হবে। নিজেদের এই উদ্যোগ সম্পর্কে পেরোলাস নেগরাসের পরিবেশ সমন্বয়কারী লুইজ ওটাভিও সিলভা বলেছেন, ‘ক্লাবেরও দায়িত্ব আছে। তাদেরও উচিত যেকোনো কোম্পানির মতো, তারা যে দূষণ করে তার ক্ষতিপূরণ দেওয়া। পেরোলাস শুধু ক্ষতিপূরণই দেয় না, বরং খেলোয়াড়দেরও এতে যুক্ত করার মাধ্যমে বিষয়টা বুঝতে পেরেছে। পাশাপাশি এটাও উপলব্ধি করা যে ভবিষ্যতের জন্যও আমাদের কিছু রেখে যেতে হবে।’
পেরোলাস তাদের পরিবেশবিষয়ক এই প্রকল্প সচল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারদের সঙ্গে সফলভাবে কাজ করছে। সম্প্রতি পশুপালন করা হতো এমন জমিতে তারা গাছ রোপণের কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছে, যা একটি দাতব্য কোম্পানি দান করেছে। সেখানে ক্লাবের খেলোয়াড়েরা রিও ডি জেনিরো রাজ্যের সরকারি পানি ও স্যানিটেশন সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ‘সেডায়ে’ পরিচালিত সামাজিক ও পরিবেশগত কর্মসূচি ‘রেপ্লান্তান্ডো ভিদা’র দলের সঙ্গে একযোগে কাজ করেছেন। এই কর্মসূচিতে সেমি-ওপেন কারাগারের বন্দীরাও শ্রম দিয়ে সহযোগিতা করেন। এখানে তাঁরা শুধু কাজের দক্ষতা অর্জন ও বেতনই পাচ্ছেন না, বরং সাজাও কমে যাচ্ছে। তিন দিন কাজের বিনিময়ে মওকুফ হচ্ছে এক দিনের কারাদণ্ড।
২০০৯ সালে ব্রাজিলের শান্তি মিশনের অংশ হিসেবে হাইতিতে প্রতিষ্ঠিত হয় পেরোলাস নেগরাস। ২০১৬ সালে তারা ব্রাজিলে আসে এবং রিও ডি জেনিরোর ফুটবল লিগে খেলা শুরু করে। ফুটবলের পাশাপাশি সামাজিক উন্নয়ন ও পরিবেশ সুরক্ষায়ও তারা কাজ করে যাচ্ছে।