সঙ্গীতাঙ্গনে এ সময়ের সম্ভাবনাময় তরুণ যন্ত্রসঙ্গীত শিল্পী মাসুম হোসেন। অক্টোপ্যাড বাদক হিসেবে তিনি এরইমধ্যে যথেষ্ঠ কুশলতার পরিচয় দিয়েছেন। বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন ও মঞ্চের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বাজানো তার অক্টোপ্যাডের ছন্দ নজর কেড়েছে সবার। স্বপ্ন তার একজন প্রতিষ্ঠিত রিদমার হওয়ার। পাশাপাশি হতে চান একজন ভালো মানুষ। পরিশ্রম আর একাগ্রতার মাধ্যমে সেই চেষ্টাই করে চলেছেন মাসুম হোসেন।
সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে জন্ম ও বেড়ে মাসুম হোসেনের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না নিলেও হাতেগোনা কয়েকজন জনপ্রিয় শিল্পীর হাত ধরে অক্টোপ্যাড বাজানোর ক্যারিয়ার গড়ে উঠে। তার মধ্যে রয়েছেন অক্টোপ্যাড শিল্পী আপেল, পাপ্পু ও হানিফ। তাদের হাত ধরেই আজকের ফেমাস মিউজিশিয়ান মাসুম। তারা অত্যন্ত স্নেহ, ভালবাসা ও নির্দেশনা দিয়ে নিজের সন্তানের মত তাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পথ প্রদর্শক হিসেবে ভূমিকা রেখে চলেছেন। এছাড়া বিভিন্ন ব্যান্ড তারকারা বিশেষ স্নেহে তাকে অনুপ্রাণিত করে চলেছেন।
অল্প সময়ের ব্যবধানে নিজ এলাকার গণ্ডি পেরিয়ে জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী এস আই টুটুল, পার্থ বড়ুয়া, আলম আরা মিনু, এফ এ সুমন, রফিকুল আলম, পথিক নবী, ফাহমিদা নবী, লিজা, কর্নিয়া, নোলক বাবু, পলাশ, বাদসা বুলবুল, ডলি শায়ন্তনি, শফিক তুহিন, হায়দার হোসেন, সুকন্যা ও পিন্টু ঘোষ দাদার সঙ্গে প্রোগ্রাম করার সৌভাগ্য গড়ে তোলেন মাসুম হোসেন। শো করেছেন ঢাকা সোনারগাঁও হোটেল, শেরাটন হোটেল, রেডিসন ব্লু, হোটেল রেজেন্সি, হলিডে ইন, লা মেরিডিয়ান, হোটেল ফার্স, হোটেল কন্টিনেন্টাল, হোটেল ৭১, হোটেল ওয়েস্টিন হোটেল লেকসিওর, আমারই ঢাকা, হোটেল দা কক্স টুডে, দ্য প্যালেস, গ্র্যান্ড সুলতান,লং বিচ, মম ইন, রয়েল টিউলিপে। ঢাকা শিল্পকলা একাডেমি, ঢাকা কলেজ, জগন্নাথ কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, ফ্যান্টাসি কিংডম, নন্দন পার্ক, ড্রিম হলিডে পার্কজাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ স্কুল কলেজ ভার্সিটি সব জায়গায় প্রোগ্রাম করেন মাসুম হোসেন।
এশিয়ান টিভি, এটিএন বাংলা, চ্যানেল আই, মোহনা টেলিভিশন, নিউজ ২৪, আনন্দ টিভি চ্যানেলে প্রোগ্রাম করেছেন এই তরুণ শিল্পী। এছাড়া সারা রিসোর্ট, ভাওয়াল রিসোর্ট, ছুটি রিসোর্ট ড্রিম স্কয়ার রিসোর্ট, গ্রীন ভিউ রিসোর্ট, ফাহিমবাগ রিসোর্ট, গ্রীন টেক রিসোর্ট, ওয়াটার ফ্রন্ট রিসোর্ট, হেরিটেজ রিসোর্টসহ নিয়মিত বিভিন্ন মঞ্চে লাইভ অনুষ্ঠানে বাজানোর সুযোগও তিনি এরই মধ্যে পেয়েছেন।
জন্মলগ্ন থেকেই অক্টোপ্যাড শিল্পী মাসুম হোসেন রাজধানীর তেজগাঁও নাখালপাড়ায় বেড়ে ওঠেন। তিনি সেখানকার স্থায়ী বাসিন্দা। এসএসসি পাস করেন নাখালপাড়া হোসেন আলী স্কুল থেকে। পরবর্তীতে তেজগাঁও কলেজ থেকে এইচএসসি ও অনার্স সমাপ্ত করেন।
বাবা মরহুম তারা মিয়া সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে সকলের কাছে অতি পরিচিত। আর মা আছিয়া খাতুন গৃহিণী। তিনভাই আর দুই বোনের মধ্যে মাসুম হোসেন চার নাম্বার। তার মা ছাড়াও প্রায় সবাই পারিবারিক অনুষ্ঠানে গান করতেন।
জন্মের পর থেকে গান বাজনা শুনতে শুনতেই তার বড় হওয়া। বাড়িতে বাবা প্রয়াত তারা মিয়া তালিম দিতেন। শুদ্ধ সঙ্গীতের চর্চা হতো। তাই সুর তালের প্রতি ছোটবেলা থেকেই ছিল তার বিশেষ অনুরাগ। সঙ্গীতের প্রতি দুর্বলতা এবং ভালবাসার সঙ্গে বাবার অনুপ্রেরণা আর ভাইবোনের আগ্রহে যন্ত্রসঙ্গীতের দিকে ঝুঁকেন তিনি।
তেজগাঁও নাখালপাড়ায় সদা হাস্যোজ্জল হিসেবে সকলের কাছেই বিলাস এক প্রিয়মুখ। স্বভাবসুলভ বিনয় আর ভদ্র ব্যবহারের মাধ্যমে তিনি সবার মন জয় করে নিয়েছেন। বিশেষ করে এলাকার বিশিষ্টজনদের কাছ থেকে পেয়েছেন সর্বোচ্চ সহযোগিতা ও অনুপ্রেরণা।
অক্টোপ্যাড শিল্পী মাসুমের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, শুরুটা ছিল ২০০৩ সাল থেকে সখ করেই মিউজিকে আসা। বাংলাদেশের বড় বড় কনসার্টগুলোতে এটেন্ড করতাম। যত বড় কনসার্টই হোক আর যত টাকার টিকেট হোক সেখানে উপস্থিত হতাম। আর এভাবেই স্বপ্ন দেখতাম আমি একদিন স্টেজে বাজাবো গান গাইবো। ২০০০ সালে এসএসসি পরীক্ষা শেষ করে কিবোর্ড কিনি। কিবোর্ড শিখি। বাট ওইভাবে কিবোর্ড বাজানো হয়নি। পরে আস্তে আস্তে ড্রামস প্লে করলাম। অমিত ভাই, ব্ল্যাক ব্যান্ডের টনি ভাই ও বিকাশ দাদার কাছে ড্রামস শিখা, এলাকার বড় ভাইদের নিয়ে একটা ব্যান্ড (অসমাপ্ত) করলাম। কিছুদিন যাওয়ার পর মোটামুটি ভালই সাড়া পেলাম। আশেপাশে অনেকগুলো প্রোগ্রাম ও করলাম। ২০১০ সালে অক্টোপ্যাড কিনলাম, আমার গুরু আপেল ভাই, পাপ্পু ভাই এবং হানিফ ভাই তাদের কাছ থেকে শেখা। পারিবারিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ায় আর পিছনের দিকে তাকাতে হয়নি। অভাব কি জিনিস সেটা কখনো বুঝতে পারিনি। এক এক করে ঢাকাসহ পুরো বাংলাদেশে প্রোগ্রাম করা শুরু করলাম। আমার স্বপ্ন একদিন বড় কোন ব্যান্ডের সঙ্গে বাজাবো আর ভালো ভালো কাজ করবো। সামনে কিছু প্ল্যানিং আছে ওপেন এয়ার কনসার্ট। বাংলাদেশের বাহিরে কিছু প্রোগ্রামের কথা আলোচনা হচ্ছে। বিশেষ করে ইন্ডিয়া, কানাডা ও আমেরিকা খুব শিগগিরই এয়ার কনসার্ট করার কথা রয়েছে।
নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে তিনি জাতীয় পর্যায়ে অবস্থান করে নেয়ার অবিরাম চেষ্টা করে চলেছেন। জাতীয় পর্যায়ের অনেক বিশিষ্ট কন্ঠশিল্পীর সঙ্গে বাজানোর সুবাদে একজন ভালো অক্টোপ্যাড বাদক হিসেবে ইতোমধ্যে তিনি নিজের মেধা ও যোগ্যতার পরিচয় তুলে ধরতে সমর্থ হয়েছেন।
সকলের দোয়া এবং সহযোগিতা পেলে ভবিষ্যতে নিজেকে একজন ভালো রিদমার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন, এমন আত্মবিশ্বাস রয়েছে বিলাস চন্দ্র বনিকের। সেই স্বপ্নপূরণের পথেই হাঁটছেন প্রতিভাবান এই তরুণ।