জানা অজানা ডেস্ক: প্রতিনিয়ত হারিয়ে যাচ্ছে ভাত থেকে আমিষ, জিংক, আয়রনসহ ৮৫ ভাগ পুষ্টি উপাদান। শুধু চালের দাম নয়, পুষ্টি নিয়েও চলছে কারসাজি। ভাত থেকে হারিয়ে যাচ্ছে আমিষ, জিংক, আয়রনসহ ৮৫ ভাগ পুষ্টি উপাদান। ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণায় মিলেছে এ তথ্য। এ অবস্থায় মেশিনে কাটা চাল না কেনার পরামর্শ দিচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। রাইস মিলের ছাটাই যন্ত্রে মোটা চাল কেটে করা হয় চিকন, যা বিক্রি হয় মিনিকেট কিংবা নাজিরশাইল নামে।
চিকন চালে ভোক্তার আগ্রহ এবং মিলারদের কারসাজিতে হারিয়ে যাচ্ছে চালে থাকা আমিষ, আয়রন, জিংকসহ অত্যাবশ্যকীয় সব পুষ্টি উপাদান। এমনটাই দাবি করছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট।
প্রতিষ্ঠানটির গবেষণা বলছে, মেশিনের ব্লেডে চাল নয়, ছাটাই হয় চালের ৮৫ ভাগ পুষ্টি। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) মহাপরিচালক ড. মো.শাহজাহান কবির বলেন, মিলিংয়ের ক্ষেত্রে ১০ ভাগ মিলিং করা যেতে পারে। এর বেশি মিলিং করা হলে পুষ্টি উপাদানগুলো চলে যাবে। ফলে মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টগুলো থাকছে না। তখন শুধু কার্বোহাইড্রেট খাওয়া হয় বলে জানান এ বিশেষজ্ঞ।
পুষ্টিবিজ্ঞানীরা বলছেন, মেশিনে চিকন করা চালের ভাত খেয়ে ভোক্তার পেটে ঢুকছে শুধুই শর্করা। ফলে শরীরে জমছে খারাপ কোলেস্টেরল।
পুষ্টিবিজ্ঞানী ড. মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আয়রন, ভিটামিন এবং বিশেষ করে ফাইবার যা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় তা অনেকাংশেই পাওয়া যায় না। আগে সংক্রমণজনিত রোগ বেশি ছিল। এখন ডায়াবেটিস, হৃদরোগ- এই ধরনের অসংক্রামক রোগ বেড়েই চলেছে।’
পুষ্টির ঘাটতি মেটাতে ভাতের মাধ্যমে জিংক, আয়রন ও ভিটামিন-এ ভোক্তার পাতে আনতে যেখানে গবেষণা চলছে। সেখানে মিলারদের এমন পদক্ষেপ আত্মঘাতী বলে দাবি করছেন ধান বিজ্ঞানী ড. জীবন কৃষ্ণ বিশ্বাস।
তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্যমাত্রা সাসটেইনেবল ফুড সিকিউরিটি। ২০৩০ সালের মধ্যে আমরা টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাব। কিন্তু আমাদের আরেকটি লক্ষ্যমাত্রা আছে, আমরা উন্নত দেশে পরিণত হব ২০৪১ সালের মধ্যে। তাহলে আমাদের এখনই যে প্রস্তুতির প্রয়োজন তা হলো টেকসই খাদ্য নিরাপত্তার জন্য চাল থেকে আমরা যেন অবশ্যই যথাযথ পুষ্টি পাই, তা নিশ্চিত করা।’
জাতিসংঘের হিসাবে দেশের এখনও প্রায় আড়াই কোটি মানুষ পুষ্টিহীনতায় ভুগছেন। তাই টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা-এসডিজি বাস্তবায়নে, চালের পুষ্টি নিয়ে চালবাজি ঠেকাতে সরকারের হস্তক্ষেপ জরুরি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।