এক দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজে ৩০ টাকা বেড়ে সর্বোচ্চ ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ এই পেঁয়াজের সঙ্গে আমদানির কোনো সম্পর্ক নেই। পেঁয়াজ রপ্তানিতে ভারত টনপ্রতি ৮০০ ডলার নির্ধারণ করেছে-এমন খবর পেয়েই দেশের বাজারে ফের অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।
এছাড়া ভারতে নতুন দাম ঘোষণার পর সেই পেঁয়াজ এখনো দেশে ঢুকেনি। অর্থাৎ আগের দামে আমদানি করা পেঁয়াজই এখন বাজারে আছে। তবুও আমদানির পেঁয়াজ কেজিতে ২৫ থেকে ৩০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। অর্থাৎ কোনো কারণ ছাড়াই এভাবে অতিরিক্ত দাম বাড়িয়েছেন কতিপয় ব্যবসায়ী। তারা এই কারসাজি করে ভোক্তার পকেট থেকে স্বল্প সময়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন-এমন মন্তব্য সংশ্লিষ্টদের। তাদের মতে, পেঁয়াজের এমন অস্বাভাবিক দাম বাড়ানোর পরও কর্তৃপক্ষ একেবারেই নির্বিকার।
এছাড়া হরতালের অজুহাতে কেজি প্রতি ১৫ টাকা বাড়িয়ে আলুর দাম ৭০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। পাশাপাশি অন্য নিত্যপণ্যসহ সব ধরনের সবজির দামও বাড়তি। ফলে বাজারে গিয়ে ক্রেতার নাভিশ্বাস উঠছে। রোববার রাজধানীর বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে ক্রেতা ও বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
এদিকে দেশের বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ ও দাম সহনীয় রাখতে রপ্তানিতে প্রতি টন ৮০০ ডলার মূল্য বেঁধে দিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। দেশটির ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেড বা বৈদেশিক বাণিজ্যবিষয়ক মহাপরিচালকের কার্যালয় শনিবার এ সিদ্ধান্ত জানায়। আর চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকবে। আর রোববার থেকে এই আদেশ কার্যকর হবে। তবে যেসব পেঁয়াজ স্থলবন্দর দিয়ে দেশের বাজারে আসার জন্য অপেক্ষা করছে, সেখানে এই নতুন দর কার্যকর হবে না।
এদিকে রোববার দেশের বাজারে নতুন দামে আমদানি করা পেঁয়াজ না এলেও ভারত রপ্তানি মূল্য ঘোষণার সংবাদে দেশের বাজারে কেজিপ্রতি সর্বোচ্চ ৩০ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করছে বিক্রেতারা। এদিন রাজধানীর কাওরানবাজার, নয়াবাজার, মালিবাগ কাঁচাবাজার ও শান্তিনগর বজার ঘুরে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৪০ টাকা, যা এক দিন আগেও ১১০ টাকা ছিল। প্রতি কেজি আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০-১১০ টাকা, যা এক দিন আগেও ৮০-৮৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পাশাপাশি প্রতি কেজি আলু ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, যা দুই দিন আগেও ৫৫-৬০ টাকা ছিল।
রাজধানীর নয়াবাজারে পণ্য কিনতে আসা সোলাইমান শাওন যুগান্তরকে বলেন, এক দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৩০ টাকা বাড়ার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। সরবরাহে কোনো সংকট নেই। পাশাপাশি এমন অবস্থা হয়নি যে একদিনে আলুর দাম কেজিতে ১৫ টাকা বাড়বে। সব বিক্রেতাদের কারসাজি।
একই বাজারের পেঁয়াজ বিক্রেতা মো. তুহিন বলেন, পাইকারি বাজারে দাম বেশি। যে কারণে বেশি দামে এনে আমাদের বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। আর ক্রেতারা বাজারে এসে আমাদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি করছেন।
জানতে চাইলে কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান যুগান্তরকে বলেন, ভারত রপ্তানিতে দাম বাড়িয়ে মূল্য নির্ধারণ করলে দেশের বাজারে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম কিছুটা বাড়বে, সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু মূল্য বৃদ্ধি করলেও নতুন দামের পেঁয়াজ এখনো দেশে আশার কথা না। তবে দেখা যাচ্ছে, প্রতিবছরের মতো এবারও অসাধুরা পেঁয়াজের দাম নিয়ে কারসাজি করছে। এছাড়া আলুর বাজারেও এক ধরনের অস্থিরতা চলছে। আর বাজার তদারকি সংস্থার কোনো নজরদারি নেই। এটা কোনোভাবে কাম্য নয়। পরিস্থিতি এমন হয়েছে-বাজারে যেন কারও নিয়ন্ত্রণ নেই।
মূল্য নিয়ন্ত্রণে তিন স্তরে নজরদারি করা হবে জানিয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মণ্ডল যুগান্তরকে বলেন, পেঁয়াজের দাম নিয়ে কোন পর্যায়ে কারসাজি করা হয়েছে তা অভিযানের মাধ্যমে বের করা হবে। পাশাপাশি অনিয়মকারীদের শাস্তির আওতায় আনা হবে।
রোববার রাজধানীর খুচরা বাজার ঘুরে এবং বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুই দিনের ব্যবধানে ৪০-৫০ টাকার লাউ রোববার প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা। প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১৪০-১৬০ টাকা। গাজর বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৪০ টাকা। প্রতি কেজি বরবটি ১০০-১২০ টাকা, করলা ও বেগুন ৯০-১১০ টাকা, কচুর লতি ও কচুর মুখী ৯০-১০০ টাকা, মুলা ৭০-৮০ টাকা, পটোল, ঝিঙে, ধুন্দুল বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা। আর প্রতি পিস ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা, কুমড়া ৬০ টাকা এবং কাঁচা মরিচের কেজি ২০০ টাকা।