অর্থনীতি ডেস্ক: করোনা মোকাবেলাকে প্রাধান্য দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে আসছে বাজেট। তাই বাজেটে স্বাস্থ্য খাতকে দেওয়া হচ্ছে সর্বাধিক গুরুত্ব। এতে চলতি অর্থবছরের তুলনায় বরাদ্দ বাড়ছে ১১ শতাংশ। করোনা মোকাবেলা এবং ভ্যাকসিন কেনা বাবদ থাকছে পৃথক থোক বরাদ্দ। করোনা মোকাবেলায় যেসব পণ্য আমদানি করতে হয়, সেগুলো থাকবে করের আওতামুক্ত। এ ছাড়া করোনা সেবা তথা স্বাস্থ্যসেবা বিকেন্দ্রীকরণ করতে নেওয়া হচ্ছে মাস্টারপ্ল্যান। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, স্বাস্থ্য খাতে যেন দীর্ঘমেয়াদি সুফল নিয়ে আসে, বাজেটে এমন সব উদ্যোগ নিতে হবে। সেই সঙ্গে এই খাতে দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। সেবা বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। খরচের গুণগত মান নিশ্চিত করতে হবে।
সূত্র মতে, করোনাকালেও ইতিহাসের সর্ববৃহৎ বাজেট দিতে যাচ্ছে সরকার। আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকার ছয় লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। চলতি অর্থবছরের বাজেটের আকার পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিশাল এ বাজেট তৈরি করা হচ্ছে করোনা থেকে উত্তরণকে কেন্দ্র করে। এ জন্য বাজেটে কর্মসংস্থান, কৃষি, দেশীয় শিল্প ও বিনিয়োগকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তবে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে স্বাস্থ্য খাত। এবার স্বাস্থ্য খাতকে ‘আধুনিক খাতে’ রূপান্তরিত করতে চায় সরকার। আর তা করতে হলে এ খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। তাই আসছে বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে ৩২ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা। এটি মোট বাজেটের ৭.৪ শতাংশ। আর জিডিপির ১.৩ শতাংশ। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে ২৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকার বরাদ্দ রয়েছে। এটি মোট বাজেটের ৫.২ শতাংশ। সে হিসাবে চলতি অর্থবছর থেকে আগামী অর্থবছরে বরাদ্দ বাড়ছে তিন হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা বা ১১ শতাংশ।
করোনাকাল দেখিয়েছে স্বাস্থ্য খাত কতটা ভঙ্গুর। জনসংখ্যা অনুপাতে দেশে আইসিইউ বেডের সংখ্যা খুবই কম। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সরকারি হাসপাতালে ৫০৮টি আইসিইউ বেড ও বেসরকারি হাসপাতালে ৭৩৭টি আইসিইউ বেড আছে। আগামী বাজেটে তাই আইসিইউ বেড বাড়ানো, অক্সিজেন, ভেন্টিলেটরসহ স্বাস্থ্যসামগ্রীর দিকে বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে। এই সামগ্রীর বেশির ভাগ আমদানি করা হয়। তাই বাজেটে আমদানি করা স্বাস্থ্যসামগ্রী থাকবে করের আওতামুক্ত। চলতি অর্থবছরও এই সামগ্রী আনতে কোনো কর দিতে হচ্ছে না।
করোনা মোকাবেলায় ভ্যাকসিনকেই একমাত্র সমাধানের পথ ভাবা হচ্ছে। ভ্যাকসিনপ্রাপ্তিতে তাই কোনো ধরনের অনিশ্চয়তা যেন তৈরি না হয়, সে জন্য সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এ জন্য রাখা হচ্ছে পৃথক বরাদ্দ। চলতি অর্থবছর করোনা মোকাবেলায় ১০ হাজার কোটি টাকার পৃথক থোক বরাদ্দ রাখা আছে। আগামী বাজেটেও একই পরিমাণ বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। এ খাত থেকেই ভ্যাকসিন কিনতে অর্থ ব্যয় করা হবে।
করোনার তৃতীয় থাবায় দেশের স্বাস্থ্য খাতে যাতে ভারতের মতো অবস্থা তৈরি না হয় সে জন্য বিকেন্দ্রীকরণে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। দেশের জেলা-উপজেলার হাসপাতালগুলোর অবস্থা ভয়াবহ। সে জন্য ‘মাস্টারপ্ল্যানের’ মাধ্যমে সব হাসপাতালকে আধুনিকায়ন করা হবে। যাতে করোনার মতো ভয়াবহ রোগের চিকিৎসাও দেশের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে করা যায়। বলা হচ্ছে, পরিকল্পনার আওতায় সব সরকারি হাসপাতালে সেবার মান উন্নত করা হবে।
গত বছরের মার্চ থেকে করোনা রোগী বাড়ার পর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তার, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের অপ্রতুলতার বিষয়টি সরকারের নজরে আসে। আসছে বাজেটে তাই নতুন দুই হাজার চিকিৎসক, ছয় হাজার নার্স এবং ৭৩২ জন স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ দেওয়া হবে। এর জন্য আসছে বাজেটে ৫০০ কোটি টাকা রাখা হচ্ছে। চলতি বাজেটে গ্রামাঞ্চলে চিকিৎসকের সংখ্যা ও সেবার মান বৃদ্ধিতে বরাদ্দ রয়েছে ৩৭৫ কোটি টাকা।
করোনাকালে চিকিৎসক, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা জীবন বাজি রেখে কাজ করছেন। আগামী বাজেটে তাঁদের সম্মানী ভাতার পাশাপাশি দেওয়া হতে পারে ঝুঁকিভাতা। সেই সঙ্গে আসতে পারে প্রণোদনার ঘোষণা। প্রণোদনা এবং এসব ভাতায় আগামী বাজেটে বরাদ্দ থাকছে ৮৫০ কোটি টাকা।
করোনায় হাসপাতালের পাশাপাশি অনলাইন সেবা দেওয়ার গুরুত্ব বাড়ছে। যেসব রোগীর হাসপাতালে যাওয়ার প্রয়োজন নেই তারা অনলাইনেই সেবা নেন। বাজেটে এ খাতে তাই বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে। আগামী বাজেটে এ খাতে ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হতে পারে। চলতি অর্থবছর এই খাতে ১৩৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে।