আইন ও অপরাধ ডেস্ক: পারিবারিক গ্যাং, কিশোর গ্যাং, নারীদের শ্লীলতাহানী, চাঁদাবাজি ও অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা থেকে শুরু করে বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে চাঁদপুরের হাইমচরের চরপোড়ামুখী গ্রামে সাবেক এক ইউপি মেম্বার ইসমাইল কাজীর বিরুদ্ধে। ইতোমধ্যে ওই সাবেক মেম্বার এলাকার আশপাশে গড়ে তোলেন এক ত্রাসের রাজত্ব। সাধারণ মানুষের মুখে প্রশ্ন উঠেছে, এই ইউপি মেম্বারের আশ্রয়দাতা কারা? কে বা কারা ইসমাইল কাজীকে মদদ দিচ্ছে? এত ক্ষমতার উৎস কোথায়? একের পর এক মামলার আসামি হলেও কী কারণে তিনি ও তার গ্যাংয়ের সদস্যরা থাকছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধরাছোঁয়ার বাইরে?
সরেজমিনে তথ্য পাওয়া গেছে, গোটা গ্রামের সাধারণ মানুষ জিম্মি হয়ে রয়েছে তাদের পেশিশক্তির কাছে। তাদের অন্যায়-অপরাধের প্রতিবাদ করলেই যে কারও ওপর চলে ভয়ংকর হামলা ও নির্যাতন। খেটে খাওয়া দিনমজুর থেকে শুরু করে এলাকার মসজিদ-মাদরাসার কমিটির সদস্যরাও রেহাই পায়নি তাদের হাত থেকে।
হাইমচরের ৩নং আলগী দূর্গাপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার ইসমাইল কাজী পুরো গ্রামের মানুষকে জিম্মি করে অত্যাচার-নির্যাতন করে আসছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তার পারিবারিক গ্যাংয়ে হাতে এলাকার কেউই নিরাপদ নয়। এমনই একটি ঘটনার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ আরটিভি নিউজের হাতে এসেছে। সেই ঘটনার অনুসন্ধানে গেলে তাদের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগের নথি হাতে আসতে থাকে।
ওই সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, মেম্বারের বড় ভাগ্নে শান্ত খানসহ অন্যরা স্থানীয় ছফিউল্ল্যারর স্ত্রীর শ্লীলতা হনন করছে এবং একাধিকবার হামলা চালিয়েছেন। যাতে সম্পৃক্ত রয়েছেন সাবেক ইউপি মেম্বার ইসমাইল কাজী।
ভুক্তভোগী মাদরাসা ও এতিমখানার উপদেষ্টা খাজা আহাম্মদ হাজী
ভুক্তভোগীদের একজন চরপোড়ামুখী নূরানী মাদরাসা ও এতিমখানার উপদেষ্টা খাজা আহাম্মদ হাজি। চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি তার ওপর প্রকাশ্যে হামলা চালায় ইসমাইল মেম্বারের পারিবারিক গ্যাং বাহিনীর সদস্যরা। দেশিয় অস্ত্র নিয়ে খাজে আহম্মদকে হত্যার চেষ্টা করা হয় বলে মামলার অভিযোগ থেকে জানা গেছে। পরে ঘটনাটি তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতাও পেয়েছে পুলিশ।
সরেজমিনে গেলে ভুক্তভোগী খাজা আহাম্মদ হাজীর ভাই স্থানীয় মসজিদ ও মদরাসার সভাপতি মকবুল আহাম্মদ বলেন, ‘মেম্বার হওয়ার পর থেকেই ইসমাইল কাজী পেশিশক্তি দেখিয়ে আসছে। তার নেতৃত্বে এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চলে। তার গ্যাংয়ের ডান হাত হিসেব দায়িত্ব পালন করে তারই ভাতিজা ফরিদ কাজী। তাদের খামখেয়ালির বিরুদ্ধ কেউ কিছু বললেই মারধর ও হামলা চলে। ইসমাইলের আরেক ভাতিজা কিশোর গ্যাংয়ের লিডার রাকিব কাজীর কাছে লম্বা একটি ছেনি আছে, যেটি দিয়ে মানুষকে কোপানো হয়। অস্ত্রটি তার ফুফু সালেহা বেগমের বাড়িতে লুকিয়ে রাখে সে।
ভুক্তভোগী ছফিউল্ল্যা কাজী
আরেক ভুক্তভোগী ছফিউল্ল্যা কাজী। জায়গা-জমি জবরদখলের চেষ্টায় গত ৩ ও ৪ মার্চ হত্যার উদ্দেশ্যে যার ওপর পরপর দু’বার হামলা চালানো হয়। একই সঙ্গে বাড়ীতে একা পেয়ে তার স্ত্রীর ওপর শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে অভিযোগ তার।
ছফিউল্ল্যার প্রতিবেশি আনোয়ার হোসেন অভিযোগ করে বলেন, কেবল সাবেক মেম্বার ইসমাইল কাজী নয়, তার বোন সালেহা বেগম, ভগ্নিপতি শাহজাহান এবং ভাগ্নে শান্ত খান ও রাতুল খানও এলাকার খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের ওপর অত্যাচার চালায়। আমরা নিরিহ মানুষ তাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে কিছু বলতে সাহস পাইনা। কিছুদিন আগে ছফিউল্ল্যার পরিবারের ওপর হামলা করার সময়ে আমার স্ত্রী গিয়েছিলো তাদের রক্ষা করতে। ওই সময়ে তারা উল্টো আমার স্ত্রীর উপরও হামলা চালিয়ে আহত করে।
যা বললেন ওসি
এসব বিষয়ে হাইমচর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহবুবুর রহমান মোল্লা বলেন, ছফিউল্ল্যার ছেলে জয়নাল আবেদীনের দায়ের করা মামলার তদন্ত চলমান রয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার তদন্তে আমরা অনেকটা অগ্রসর হয়েছি। সাক্ষ্য প্রমাণে ঘটনার সত্যতা পেয়েছি। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই আমার আসামিদের বিরুদ্ধ অভিযোগপত্র জমা দিতে সক্ষম হবো।
অভিযোগের বিষয়ে যা বললেন সাবেক ইউপি মেম্বার ইসমাইল কাজী
এদিকে বিস্তর অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক ইউপি মেম্বার ইসমাইল কাজী বলেন, ‘আমি কোন নেতাপেতারে সালাম দেই না। আমার বিরুদ্ধে সবই মিথ্যা অভিযোগ। থানা পুলিশ আমাদের পক্ষে নয়, আমাদের বিরুদ্ধেই কাজ করে। আমার বিরুদ্ধে যে চার্জশিট হয়েছে সেটিও মিথ্যা। আমি খুব সাধারণ মানুষ। আমি এসব অন্যায় অপরাধের ধারেকাছেও যাই না। মানুষজন কেবল আমাকে, আমার ছেলেকে, আমার ভাই-ভাতিজা-ভাগ্নেকে জড়িয়ে মিথ্যা মামলা দেয়। আমরা মানুষজনকে কোপাই না। তারা নিজেদের মাথা নিজেরাই ফাটিয়ে রক্তাক্ত করে আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলে। এসব ষড়যন্ত্র। আমরা কারো বিরুদ্ধে মামলা দেইনা। কেবল মানুষজনই আমাদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দেয়।
যা বললেন আরেক অভিযুক্ত ফরিদ কাজী
সাবেক ইউপি মেম্বার ইসমাইল কাজীর ডান হাত অভিযুক্ত ফরিদ কাজী বলেন,কেউ কোনো দিন আমাদের বিরুদ্ধ সামনাসামনি অভিযোগ করতে সাহস পাবে না। কারণ,আমরা কোনো অন্যায় অপরাধ করিনি। এটাই আমার শেষ কথা।
যা বললেন বর্তমান ইউপি মেম্বার
বর্তমান ইউপি মেম্বার মাহবুব কাজী সাবেক মেম্বার ইসমাইল কাজীরই আপন ভাতিজা। যে কারণে চাচা ও তার সঙ্গীয় লোকজনের অন্যায়-অত্যাচারের বিষয়ে কোন ব্যবস্থা নিতে সাহস পাচ্ছেন না তিনি। সরেজমিনে গেলে সাংবাদিকদের কাছে এমন অসহায়ত্বের কথা জানান বর্তমানে দায়িত্বপালন করা এই মেম্বার। তিনি বলেন, তাদের অভিযোগের বিষয়ে আমি ইউপি চেয়ারম্যানের সঙ্গে বসবো এবং এ বিষয়ে কি পদক্ষেপ নেওয়া যায় সে বিষয়ে চিন্তা করবো।