মোঃ কামরুল আহসান তালুকদার (পিএএ ) : একজন আপাদমস্তক রাজনীতিক ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। জ্ঞান-বিজ্ঞানে, শিল্প-সাহিত্যে, প্রজ্ঞা ও বুদ্ধিমত্তায় উপমহাদেশের সবচেয়ে অগ্রসরবাঙালি জাতিকে তিনি তাইপ্রথমবারের মতো স্বতন্ত্র রাষ্ট্র উপহার দিতে পেরেছিলেন। বর্তমান বিশ^ তাই তাঁকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বলে অভিহিত করে।গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার নিভৃত পল্লীতে জন্মগ্রহণ করেও তিনি কালে কালে হয়ে উঠেছিলেন আপামর বাঙালির ‘বঙ্গবন্ধু’ এবং স্বাধীন বাংলাদেশের জাতির পিতা।ইতিহাস, রাষ্ট্র এবং রাজনীতির বাইরেও পদ্মা-যমুনা-মেঘনা বিধৌত এই ভূখন্ডের প্রকৃতি ও প্রতিবেশ সম্পর্কেও তাঁর প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতা বিস্ময়কর। বাংলাদেশ তথা এতদ্্ অঞ্চলেরনদ-নদী, খাল-বিল এর সঙ্গে তার যে আত্মার সম্পর্ক, সমসাময়িক অন্যান্য রাজনীতিকের মধ্যে তা আমরা দেখতে পাই না। ভূ-প্রকৃতির জ্ঞানও ছিল তাঁর অগাধ, তুলনাহীন। গেল শতাব্দীর পঞ্চাশ বা ষাটের দশকে কেবল আজকের বাংলাদেশ নয়, গোটা ভারতীয় উপমহাদেশে যেসব প্রধান রাজনৈতিক নেতৃত্ব দেখা যায়, তাদের প্রায় সবাই ছিলেন নাগরিক আবহে বেড়ে ওঠা। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু ব্যতিক্রম, কারণ তিনি পূর্ব বাংলার জলহাওয়ায় কেবল বেড়েই ওঠেননি, একটি রাষ্ট্রের স্থপতি হয়েও নিভৃত পল্লী ও প্রান্তিক শিকড়কে ভুলে যাননি, স্মৃতিভ্রমও হননি কখনো।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু প্রায়ই নিজেকে পরিচয় দিয়েছেন ‘পানির দেশের মানুষ’ হিসেবে। চল্লিশের দশকে রাজস্থানের মরু অঞ্চলে হ্রদ দেখে তাঁর নিজের দেশের কথা মনে হয়েছে। তিনি অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে লিখছেন- ‘পানির দেশের মানুষ আমরা। পানিকে বড় ভালবাসি। আর মরুভূমির ভিতর এই পানির জায়গাটুকু ছাড়তে কত যে কষ্ট হয় তা কি করে বোঝাব!’
বঙ্গবন্ধুর শৈশবে নদীর ভূমিকার কথা লিখেছেন তার কন্যা বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি তাঁর ‘শেখ মুজিব আমার পিতা’ বইতে লেখেন- ‘আমার আব্বার শৈশব কেটেছিল টুঙ্গিপাড়ার নদীর পানিতে ঝাঁপ দিয়ে, মেঠোপথের ধুলোবালি মেখে। বর্ষার কাঁদাপানিতে ভিজে।’ এখানে বঙ্গবন্ধুর আত্ম কথনের ভূমিকা আমরা খুঁজে পাই। বঙ্গবন্ধুতো খাল, বিল আর নদী কিংবা মেঠো পথে চলতে চলতে বেড়েছেন টুঙ্গিপাড়ার ঘাস-পাতার সবুজ মায়ায়।
স্বাধীন দেশের রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধান হিসেবে বঙ্গবন্ধু বিভিন্ন বিষয়ে সুদূরপ্রসারী চিন্তাভাবনা করে সিদ্ধান্ত নিতেন। নদ-নদীর সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর যে আত্মিক যোগাযোগ সেটা কেবল ব্যক্তিগত ভাবনায় নয়; তাঁর রাজনৈতিক জীবনের উষালগ্ন থেকেই ফুটে উঠেছে। সংগঠন গোছাতে গিয়ে তাঁকে যেহেতু ঘন ঘন ভ্রমণ করতে হত, সেখানে ৪০-৫০ দশকের নৌপথেরও জীবন্ত বর্ণনা আমরা দেখতে পাই তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে । এক স্থানে তিনি লিখেছেন- ‘পরের দিন নৌকায় আমরা রওয়ানা করলাম আশুগঞ্জ স্টেশনে ট্রেন ধরতে। পথে পথে গান চলল। নদীতে বসে আব্বাসউদ্দিন সাহেবের ভাটিয়ালি গান তাঁর নিজের গলায় না শুনলে জীবনের একটি দিক অপূর্ণ থেকে যেত। তিনি যখন আস্তে আস্তে গাইতেছিলেন তখন মনে হচ্ছিল, নদীর ঢেউগুলিও যেন তাঁর গান শুনছে। বঙ্গবন্ধুর আমার দেখা নয়াচীন থেকে আরও দেখতে পাই নদীর এমন মনোমুগ্ধকর বর্ণনা । যেমন চীন সফরে হংকং থেকে ক্যান্টন বা গুয়াংজু যেতে যেতে বঙ্গবন্ধুর উপলব্ধি- ‘‘মনে হলো এ তো আমার পূর্ব বাংলার মতো সকল কিছু। সবুজ ধানের ক্ষেত, চারদিকে বড় বড় গাছ। মাঝে মাঝে মাটির ঘরের গ্রাম, ছোট ছোট নদী, ট্রেনটা পার হয়ে যাচ্ছে’’। বঙ্গবন্ধু এমন বৃত্তান্ত লিখে গেছেন তাঁর সদ্য প্রকাশিত বইগুলিতে ।
বঙ্গবন্ধু তাঁর পিতার অসুস্থতার সংবাদ পেয়ে বাড়ী রওয়ানা করেছিলেন। অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে তিনি লিখেছেন- ‘‘আমি স্টিমারে চড়ে বসলাম, সমস্ত রাত বসে রইলাম। নানা চিন্তা আমার মনে উঠতে লাগল। আমি তো আমার আব্বার বড় ছেলে। আমি তো কিছুই বুঝি না, কিছুই জানি না সংসারের। কত কথা মনে পড়ল, কত আঘাত আব্বাকে দিয়েছি, তবুও কোন দিন কিছুই বলেন নাই। সকলের পিতাই সকল ছেলেকে ভালোবাসে এবং ছেলেরাও পিতাকে ভালোবাসে ও ভক্তি করে। কিন্তু আমার পিতা যে ¯েœহ আমি পেয়েছি, আর আমি তাকে কত যে ভালোবাসি সে কথা প্রকাশ করতে পারবো না।
ভোরবেলা পাটগাতি স্টেশনে স্টিমার এসে পৌঁছালো। আমার বাড়ি থেকে প্রায় আড়াই মাইল হবে। স্টেশন মাস্টারকে ও অন্যান্য লোকদের জিজ্ঞাসা করলাম তারা কিছু জানে কিনা আমার আব্বার কথা? সকলেই এক কথা বলে, ‘‘আপনার আব্বার খুব অসুখ শুনেছি’’। নৌকায় গেলে অনেক সময় লাগে। মালপত্র স্টেশন মাস্টারের কাছে রেখে হেঁটে রওনা করলাম। মধুমতি নদী পার হতে হল। সোজা মাঠ দিয়ে বাড়ির দিকে রওনা করলাম। পথঘাটের বালাই নেই। সোজা চষা জমির মধ্য দিয়ে হাঁটলাম। বাড়ি পৌঁছে দেখি আব্বার কলেরা হয়েছে। অবস্থা ভালো না, ডাক্তার আশা ছেড়ে দিয়ে বসে আসে। আমি পৌঁছেই ‘আব্বা’ বলে ডাক দিতেই চেয়ে ফেললেন। চক্ষু দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ল কয়েক ফোঁটা। আমি আব্বার বুকে উপর মাথা রেখে কেঁদে ফেললাম; আব্বার হঠাৎ যেন পরিবর্তন হলো কিছুটা। ডাক্তার বলল, নাড়ির অবস্থা ভালো মনে হয়। কয়েক মুহূর্তের পরেই আব্বা ভালোর দিকে। ডাক্তার বললেন, ভয় নাই। আব্বার প্র¯্রাব বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। একটু পরেই প্র¯্রাব হলো। বিপদ কেটে যাচ্ছে। আমি আব্বার কাছে বসেই রইলাম। একঘন্টার মধ্যে ডাক্তার বললেন, আর ভয় নাই। প্র¯্রাব হয়ে গেছে। চেহারাও পরিবর্তন হচ্ছে। দুই তিন ঘন্টা পরে ডাক্তার বাবু বললেন, আমি এখন যাই, সমস্ত রাত ছিলাম। কোন ভয় নাই বিকেলে আবার দেখতে আসবো।’’
গোপালগঞ্জ মহাকুমা আওয়ামী-মুসলিম লীগের কনভেনর করা হয়েছিল কাজী আলতাফ হোসেনকে। লালবাগ মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা শামসুল হক সাহেবের বাড়ীও বঙ্গবন্ধুর একই ইউনিয়নে। মাওলানা সাহেবের সাথে দেখা করার জন্য গোপালগঞ্জ মহাকুমা আওয়ামী মুসলিম লীগের কনভেনরকে সাথে নিয়ে নৌকায় রওয়ানা দিয়েছিলেন। অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন- ‘‘আমরা দুই জন রাত দশটায় একটা এক মাঝির নৌকায় রওয়ানা করলাম। নৌকা ছোট্ট, একজন মাঝি। মধুমতি দিয়ে রওনা করলাম। কারণ, তার বাড়ি মধুমতীর পাড়ে। মধুমতির একদিকে ফরিদপুর, অন্যদিকে যশোর ও খুলনা জেলা। নদীটা এক জায়গায় খুব চওড়া। মাঝে মাঝে, সেই জায়গায় ডাকাতি হয়, আমাদের জানা ছিল। ঠিক যখন আমাদের নৌকা সেই জায়গায় এসে হাজির হয়েছিল আমি তখন ক্লান্ত ছিলাম বলে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। পানির দেশের মানুষ নৌকায় ঘুমাতে কোন কষ্ট হয় না। কাজী সাহেব তখনো ঘুমান নাই। এই সময় একটা ছিপ নৌকা আমাদের নৌকার কাছে এসে হাজির হলো। চার জন লোক নৌকার মাঝিকে জিজ্ঞেস করল, আগুন আছে কিনা? আগুন চেয়েই এই ডাকাতরা নৌকার কাছে আসে, এই তাদের পন্থা। আমাদের নৌকার কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, ‘‘নৌকা যাবে কোথায়’’? মাঝি বলল, টুঙ্গিপাড়া, আমাদের গ্রামের নাম। নৌকায় কে? মাঝি আমার নাম বলল। ডাকাতরা মাঝিকে বৈঠা দিয়ে ভীষণভাবে একটা আঘাত করে বলল, ‘‘শালা আগে বলতে পারো নাই শেখ সাহেব নৌকায়’’। একথা বলে নৌকা ছেড়ে দিয়ে তারা চলে গেলো। মাঝি মার খেয়ে চিৎকার করে নৌকার হাল ছেড়ে দিয়ে ভিতরে ঢুকে পড়ল। মাঝির চিৎকারে আমার ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছিল। কাজী সাহেব জেগে ছিলেন, তার ঘড়ি টাকা আংটি সবকিছুই লুকিয়ে ফেলেছিলেন ভয়ে। কাজী সাহেব শৌখিন লোক ছিলেন, ব্যবসায়ী মানুষ, টাকা পয়সাও ছিলো অনেক। আমি জেগে উঠে জিজ্ঞাসা করলাম, ব্যাপার কি? কাজী সাহেব ও মাঝি আমাকে এ গল্প করল। কাজী সাহেব বললেন,‘‘ ডাকাতরা আপনাকে শ্রদ্ধা করে, আপনার নাম করেই বেঁচে গেলাম, না হলে উপায় ছিলো না’’। আমি বললাম ‘‘বোধ হয় ডাকাতরা আমাকে ওদের দলের একজন ধরে নিয়েছে।’’
১৯৫০ সালে বঙ্গবন্ধুকে ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জ জেলখানায় নিয়ে যাওয়া হয়। বঙ্গবন্ধু অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে লিখেছেন- ‘‘পাটগাতি স্টেশন থেকে আমরা উঠানামা করি। আমাকে সকলেই জানে। স্টেশন মাস্টারকে জিজ্ঞাসা করলাম, আমাদের বাড়ির খবর কিছু জানেন কিনা? যা ভয় করেছিলাম তাই হলো, পূর্বের রাতে আমার মা, আব্বা, রেনু ছেলেমেয়ে নিয়ে ঢাকায় রওনা হয়ে গেছেন আমাকে দেখতে। এক জাহাজে আমি এসেছি আরেক জাহাজে ওরা ঢাকায় গিয়েছে। দুই জাহাজের দেখা ও হয়েছে একই নদীতে। শুধু দেখা হলো না আমাদের। এক বৎসর দেখি না ওদের। মনটা খুবই খারাপ হয়ে গেল।’’
পূর্ব বাংলার লোকদের সাথে নদীর কি সম্পর্ক বঙ্গবন্ধু আমার দেখা নয়াচীনে তা উদ্বৃত করেছেন। তিনি লিখেছেন- ‘‘নানকিং শহর নদীর পাড়ে। এখানে জাহাজে করে প্যাসেঞ্জার ট্রেন পার করা হয়। নামতে হয় না প্যাসেঞ্জারদের। ট্রেনটা এপার থেকে জাহাজে ওপারে চলে যায় আমরা দেখতে পেলাম। পীর সাহেবও পশ্চিম পাকিস্তানের ভাইয়েরা নদীর পার, বিরাট নদী, নদীর পাড়ে কারখানা, নদীর ঢেউ দেখতে ভালোবাসে। কারণ পাঞ্জাব ও সীমান্তের ভাইদের কপালে এসমস্ত কম জোটে। আমরা পূর্ব বাংলার লোক নদীর পাড়ে যাদের ঘর, নদীর সাথে যাদের বন্ধুত্ব, ঢেউয়ের সাথে যাদের কোলাকুলি, তারা কি দেখতে ভালোবাসে এগুলি? তাই পীর সাহেবকে বললাম, চলুন, বিশ্ববিদ্যালয় দেখতে যাই। খাবার সময় প্রায় হয়ে এলো। আমরা হোটেলে ফিরে এসে খেলাম, তারপর আবার বেরিয়ে পড়লাম নানকিং বিশ্ববিদ্যালয় দেখতে।’’
বঙ্গবন্ধু নৌকা খুব ভালো চালাতে পারতেন। আমার দেখা নয়াচীনে এ বিষয়ে ভালো ধারণা পাওয়া যায়। বঙ্গবন্ধু লিখেছেন- ‘‘আমাদের জন্য চারখানা নৌকা ঠিক হলো। নৌকার ভিতরে চারজন করে বসতে পারে। মোটর গাড়ির মত গদি দেওয়া বসবার জায়গা। আমাদের সাথে চা, ফল-ফলাদি কিছু নেওয়া হয়েছিল। নৌকা ছাড়া হলো। আমাদের মধ্যে অনেকে নৌকা বাইবার জন্য ব্যস্ত হয়ে গেল। অনেকে চেষ্টা করল দাঁড় টানতে, হাল ধরতে, কেউই ঠিকমত নৌকা বাইতে পারে না। শেষ পর্যন্ত আমি বললাম, ‘‘তোমরা বালুর দেশের লোক, নৌকা বাইবা কী করে? ঘোড়া দাবড়াতে পারো।’’
আমার নৌকায় সামনের যে দাঁড় ছিল, প্রথমে আমি দাঁড়টা টানতে শুরু করলাম। কার নৌকা আগে যায় দেখা যাবে! কেউই পারে না, কারণ আমি পাকা মাঝি, বড় বড় নৌকার হাল আমি ধরতে পারি। দাঁড় টানতে, লগি মারতে সবই পারি। পরে আবার হাল ধরলাম। পাকা হালিয়া-যারা আমাদের নৌকার মাঝি তারাতো দেখে অবাক! এ আবার কোন দেশের লোক! এক মাঝি জিজ্ঞাসা করল, আপনাদের বাড়ি কোন দেশে? দোভাষী সাথে ছিল, বললাম, পূর্ব পাকিস্তান। মুখের দিকে চেয়ে রইল। মনে হলো কেনোদিন নামও বোধ হয় শোনে নাই, তাকে বুঝাইয়া বললাম, তারপর সে বুঝল। তাকে বললাম, আমাদের পানির দেশ, বৎসরে ৬ মাস আমরা পানির মধ্যে বাস করি।’’
বঙ্গবন্ধু খুব ভালো সাঁতার জানতেন। আমার দেখা নয়াচীনে বঙ্গবন্ধু উল্লেখ করেছেন- ‘‘আমাদের নৌকার কাছে এসে বলল, আপনারা আমাদের নৌকায় কয়েকজন আসুন। কেউই যেতে চায়না বলে আমি ওদের নৌকায় উঠে পড়লাম। অনেকেই গেল না, কারণ সাঁতার জানে না, ভয়ে এমনিতেই জড়সড়ো। আমার তো সাঁতার কিছুটা জানা আছে। ২/১ মাইল আস্তে আস্তে সাঁতরাইয়া যাওয়ার অভ্যাসও ছোট কালে ছিল। ওদের নৌকায় উঠে দেখি ছাত্রছাত্রীরা কেউ নৌকা এদিক টান দেয় কেউ ওদিক টান দেয়, আর মাঝি যে ছাত্রটা হয়েছিল সে তো মাঝে মাঝে নৌকা ঘুরাইয়া দেয়। জিজ্ঞাসা করলাম, আপনারা কোথায় পড়েন? বলল, আমরা ক্যান্টন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি। এখানে ছুটি উপভোগ করতে এসেছি। আমাদের নৌকাগুলি সব এগিয়ে গেছে, তাড়াতাড়ি আমি বললাম, আমার কাছে বইঠা দেন। আমি ভালো নৌকা বাইতে পারি। বইঠা দিয়ে বাওয়া শুরু করলাম। বেচারারা দেখে হতবাক!’’
দৈনিক আজাদ পত্রিকার ২০ মে ১৯৫৬ সালের সংখ্যায় আমরা দেখতে পাই- নদীরপ্রতি নিছক ব্যক্তিগত মুগ্ধতা নয়; নদী ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কেও তিনি ভেবেছেন পঞ্চাশ দশক থেকে। বলা যায় কেবল রাজনৈতিক দিক থেকে নয়, নদী-ভাবনার ক্ষেত্রেও বঙ্গবন্ধু ষ্পষ্টতই নিজের সময়ের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন। তখন আন্তর্জাতিক পর্যায়েই সবেমাত্র আইএইচই ডেলফটের মতো নদী ব্যবস্থাপনার প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। সেই ১৯৫৬ সালে বঙ্গবন্ধু নদী ও পানি ব্যবস্থাপনা বিষয়ে কথা বলছেন। আওয়ামী লীগ কাউন্সিলে তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমানের বক্তব্যটা এমন ছিল- ‘‘বন্যা পূর্ব্ব পাকিস্তানিদের জীবনে নূতন নয়। কিন্তু বিজ্ঞান সমৃদ্ধ ও সম্পদ বলিষ্ঠ মানুষ অসহায়ের মত আজও প্রকৃতির রুদ্্র পীড়ন সহ্য করিবে কিনা ইহাই হইল সবচেয়ে বড় সওয়াল। হোয়াংহো নদীর প্লাবন, ট্যানিসিভ্যালির তান্ডব ও দানিয়ুবের দুর্দমতাকে বশে আনিয়া যদি মানুষ জীবনের সুখ সমৃদ্ধির পথ রচনা করিতে পারে, তবে পদ্মা, মেঘনা ও যমুনার মত শান্ত নদীকে আয়ত্ত করিয়া আমরা কেন বন্যার অভিশাপ হইতে মুক্ত হইব না?’’
কারাগারের অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রকাশিত ‘কারাগারের রোজনামচা’ বইটিতে আমরা দেখি, কষ্ট, নির্যাতন ও দুশ্চিন্তার মধ্যেও বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের নদী ও প্রকৃতির কথা ভাবছেন। বন্যায় মানুষের দুর্দশা মোচনের উপায় খুঁজছেন। তিনি তখনই বুঝতে পেরেছিলেন, নদী ব্যবস্থাপনা কেন জরুরি। একুশ শতকে দাঁড়িয়ে আমরা নদী ব্যবস্থাপনার যথার্থ পদ্ধতি নিয়ে বিতর্ক করতে পারি। কিন্তু বিংশ শতাব্দীর, ষাটের দশকে বা সত্তরের দশকে সেটা সহজ ছিল না। কারণ তখনও নদী ব্যবস্থাপনার পশ্চিমা পদ্ধতির সীমাবদ্ধতাগুলো প্রকট হয়ে ওঠেনি। আওয়ামী লীগ প্রধান হিসেবে সত্তরের নির্বাচনের প্রাক্কালে রেডিও ও টেলিভিশনে প্রদত্ত ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছেন- ‘পানি সম্পদ সম্পর্কে গবেষণা এবং নৌ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার জন্য অবিলম্বে একটি নৌ-গবেষণা ইনস্টিটিউট স্থাপন করা প্রয়োজন। বন্যা নিয়ন্ত্রণকে অবশ্যই প্রথম কর্তব্য হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। জরুরি অবস্থার ভিত্তিতে একটা সুসংহত ও সুষ্ঠু বন্যা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা আশু প্রয়োজন। যমুনা নদীর উপর সেতু নির্মাণ করে উত্তরবঙ্গের সাথে সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপনের বিষয়টিকে আমরা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিই। আভ্যন্তরীণ নৌ ও সামুদ্রিক বন্দরের উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।’ আজকের বঙ্গবন্ধু সেতুটির প্রয়োজনীয়তা বঙ্গবন্ধুর তখনকার ভাবনাতেই ষ্পষ্ট। বোঝাই যায়, বঙ্গবন্ধু মনে করতেন যে পানিকে ভয় নয়, জয় করতে হবে।১৯৭০ সালের অক্টোবরের ওই ভাষণের পরপরই নভেম্বরের ১২ তারিখ দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ¡াস উপকূলে আঘাত হানে। এতে কমবেশি ৫ লাখ মানুষ প্রাণ হারায়। ২৬ নভেম্বর ঢাকার তৎকালীন হোটেল শাহবাগে (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়) বঙ্গবন্ধু ওই দুর্বিপাক নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে তিনি স্পষ্টত বলেন- ‘আজাদীর (ব্রিটিশ থেকে স্বাধীনতার) ২৫ বছর পরেও বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্যে এমনকি পরিকল্পনা পর্যন্ত তৈরী হয়নি। ঘূর্ণিবার্তা প্রতিরোধ আশ্রয়স্থল নির্মাণের জন্যে গত ১০ বছরে মাত্র ২০ কোটি টাকার সংস্থান হয়নি। অথচ ইসলামাবাদের বিলাস বৈভবের জন্য ২২০ কোটি টাকার অভাব হয়নি। বন্যা নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনা প্রণয়নের পূর্বেই পশ্চিম পাকিস্তানে বাঁধ নির্মাণের জন্য ১০০ কোটি ডলার বরাদ্দের ব্যাপারে কোনো অসুবিধা দেখা দেয়নি। দেশবাসীকে আরেকটি ঘূর্ণিবার্তা ও গোরকীর (জলোচ্ছ¡াস) অভিশাপ থেকে মুক্ত করতে হলে এক ব্যাপক পূণঃনির্মাণ পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। এজন্যে ব্যাপকভাবে উপকূলীয় বাঁধ ও ঘূর্ণিপ্রতিরোধী পর্যাপ্ত আশ্রয়স্থল নির্মাণ, সুষ্ঠু বিপদ সংকেত ব্যবস্থা, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন সাধন করতে হবে।’
নদ-নদীর ভূ-রাজনৈতিক ও প্রতিরক্ষা সম্পর্কিত গুরুত্ব বুঝতে এবংমুক্তিযুদ্ধে নদী ও পানির অবদান সম্পর্কে জানতে এখন আমরা গবেষণা করছি । কিন্তু একজন দূরদর্শী রাজনীতিক হিসেবে বঙ্গবন্ধু সেই একাত্তরেই নদীর গুরুত্ব অনুধাবন করতে পেরেছিলেন। লক্ষণীয়, ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে তিনি নদীকে প্রতিরক্ষার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের নির্দেশনা দিয়ে বলছেন- ‘আমরা ওদের পানিতে মারবো’। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তার দূরদর্শিতা হাতে-কলমে প্রমাণ হয়েছিল। হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী বৃহৎ-নদী, বিচ্ছিন্ন পানির আধার বা বিল ও হাওর এলাকাগুলোতে যেতে পারেনি সহসা। সেখানে গড়ে ওঠা মুক্তাঞ্চলে মুক্তিযোদ্ধারা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এবং অধিকৃত এলাকায় গেরিলা হামলা চালিয়েছেন। বর্ষাকালে যখন দেশের নদীগুলো টইটম্বুর হয়ে উঠেছিল; মুক্তিযোদ্ধারা যখন নদীপথ ধরে একের পর এক পাল্টা আক্রমন করতে শুরু করেন; তখন পাকিস্তানি বাহিনীর সদস্যদের ক্রমাগত ঢাকার দিকে পিছু হটা ছাড়া উপায় ছিল না। স্বাধীন স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করে বঙ্গবন্ধু নদীর মাধ্যমেই তার ভালোলাগা প্রকাশ করছেন। ১৯৭১ সালের ১০ জানুয়ারি, স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে, রেসকোর্স ময়দানের অসম্পাদিত ভাষণটিতে দেখা যায়, তিনি কান্নারুদ্ধ কণ্ঠে বিশ^ কবি রবীন্দ্র্রনাথ ঠাকুরকে উদ্ধৃত করে বলছেন- ‘নম নম নম সুন্দরী মম জননী বঙ্গভূমি/ গঙ্গার তীর স্নিগ্ধ সমীর জীবন জুড়ালে তুমি।’১৯৭২ সালে সদ্য স্বাধীন দেশে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেও বঙ্গবন্ধু নদ-নদীর ভূ-রাজনৈতিক ও প্রতিরক্ষাগত গুরুত্বের কথা ভুলে যাননি। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে নদী ও বন্দরের প্রয়োজনীয়তা ও পরিস্থিতি সম্পর্কে১৯৭২ সালের এপ্রিল মাসের ২ তারিখে ঠাকুরগাঁওয়ে এক জনসভায় বঙ্গবন্ধু বলেন- ‘আমার যে পোর্টগুলে আছে চট্টগ্রাম, চালনা পোর্ট। জাহাজ আসতে পারে না ভালোভাবে। জাহাজগুলো ডুবাইয়া দিয়ে গেছে নদীর মুখে, যাতে জাহাজ আসতে না পারে।’
সদ্য স্বাধীন দেশে, ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু চাঁদপুরে এক জনসভায় বলেছেন- ‘২৫ বৎসর বন্যা নিয়ন্ত্রণের কোনো উপায় তারা করে নাই। নদী খাল প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। না হলেও ১৫০০ মাইল নদীপথ নষ্ট হয়েছে। জানি মেঘনায় ভাঙে, মাঝে মাঝে কিছু দিই, যোগাড় করে কিছু কিছু দেয়া হয়।’ কিন্তু নৌপথ নষ্ট হয়ে যাওয়ার সংকট আমরা মাত্র কয়েক বছর ধরে জোরেশোরে বলছি, যা বঙ্গবন্ধু যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে বারবার উচ্চারণ করেছিলেন।
১৯৭৩ সালের এক জনসভায় দেওয়া বক্তব্যে নদী ভাঙন নিয়ে বঙ্গবন্ধুর দুশ্চিন্তা দেখা যায় কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ২৭ সেপ্টেম্বর তারিখে – ‘নদীর সঙ্গে যুদ্ধ করতে কষ্ট হয়। নদী ভাঙছে কত, তোমার জানা আছে যে, বাংলাদেশের মানুষ গান গায়- একূল ভাঙ্গে ওকূল গড়ে, এই তো নদীর খেলা। আমরা চেষ্টা করতে পারি।’
এখনকার পাম্পভিত্তিক সেচ ব্যবস্থার মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের কুফল হিসেবে আর্সেনিক এসেছে। নেমে যাচ্ছে সুপেয় পানির স্তর। যদি আমরা ভূ-পৃষ্ঠের জলাশয় ব্যবহার করে সেচ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারতাম, তাহলে হয়তো এই সংকট দেখা দিত না। ১৯৭৫ সালের ২১ জুলাই নবনিযুক্ত জেলা গভর্নরদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু বলছেন- ‘পাম্প পেলাম না, এটা পেলাম না- এসব বলে বসে না থেকে জনগণকে মবিলাইজ করুন। যেখানে খাল কাটলে পানি হবে, সেখানে সেচের পানি দিন। সেই পানি দিয়ে ফসল ফলান।’ বঙ্গবন্ধুর এই আঁকুতি এখন আমরা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। ১৯৭৩ সালেই বঙ্গবন্ধু নদী খননে উদ্যোগী হয়েছিলেন। রাজবাড়ীর পাংশায় চন্দনা-বারাসিয়া নদী খননের মধ্য দিয়ে এই কাজের উদ্বোধন করেছিলেন। তিনি তখনই, রাষ্ট্রের সীমিত সামর্থ্যের মধ্যেও কিনেছিলেন অন্ততপক্ষে সাতটি ড্রেজার। সমুদ্র ও নদীবন্দর সংস্কার, নৌযান মেরামত এবং বিদেশ থেকে বার্জ-টাগবোট কেনার ক্ষেত্রে তিনি মোটেও কালক্ষেপণ করেননি তখন। হালে আমরা দেখছি, ড্রেজিং আমাদের নৌপথ বা পানি প্রবাহ ঠিক রাখতে কতটা জরুরি। একটা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষার বাইরেও বঙ্গবন্ধু নদীর কথা ভাবছেন, তা আমরা তার বিভিন্ন বক্তৃতায় দেখতে পাই। তিনি পাকিস্তানের কারাগার থেকে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বাংলাদেশে ফিরলেন আর ১৯ মার্চে ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে বৈঠকে নদীর প্রসঙ্গ তুললেন। কী হবে অভিন্ন নদীগুলোর ভবিষ্যৎ! মাত্র দুই মাসের কিছু সময়ের বেশি, তিন মাসও না। অথচ তখনই যৌথ নদী কমিশন বা জেআরসি গঠনের আলোচনা হচ্ছে এবং ওই বছরের নভেম্বরে চুক্তি স্বাক্ষরিত হচ্ছে, ভাবা যায়! এই-ই ছিল বঙ্গবন্ধু উপাধি পাওয়া বাঙালি জাতির পিতার আসল চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য।
অভিজ্ঞতা ও সংকট দিয়ে দেশের অভ্যন্তরীণ নদী ব্যবস্থায় আঞ্চলিক অভিন্ন নদী কতটা ভূমিকা রাখে এখন তা জানার চেষ্টা করছি আমরা। অথচ বঙ্গবন্ধু তখনই বুঝেছিলেন, আমাদের অভিন্ন প্রায় সব নদীর উজান যেহেতু ভারতে, সেখান থেকে পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে হবে সর্বাগ্রে। দেশভাগের ইতিহাসের প্রত্যক্ষদর্শী বঙ্গবন্ধু জানতেন, এই সীমান্ত নির্ধারণে ব্রিটিশ ভারতের শেষ বড়লাট লর্ড মাউন্ট ব্যাটেন ও সীমান্ত মানচিত্র আঁকার দায়িতপ্রাপ্ত সিরিল জন র্যাডক্লিফ ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর দ্বারা নানাভাবে প্রভাবিত ছিলেন। ভূ-রাজনীতিতে দক্ষ নেহেরু তৎকালীন ভারত ও পাকিস্তানের সীমারেখা এমনভাবে চেয়েছিলেন, যাতে করে তৎকালীন পাকিস্তান পানিসম্পদের ক্ষেত্রে ভারতনির্ভর থাকে। আর পাকিস্তান নেতৃত্ব ভূ-রাজনীতি ভুলে গিয়ে তাৎক্ষণিক ও ব্যক্তিগত সুবিধার জন্য কীভাবে একের পর এক হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, সেই আক্ষেপ আমরা দেখি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে।
নদী বিশেষজ্ঞদের মতে বাংলাদেশের নদনদীর প্রধান সংকট ছয়টি, যেমন- প্রবাহস্বল্পতা, ভাঙন, দখল, দূষণ, বালু উত্তোলন ও সাংস্কৃতিক বিচ্ছিন্নতা। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে নদী ভাঙন ছাড়া বাকি পাঁচটি সংকট তখনওপ্রকট হয়নি। কিন্তু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বালু উত্তোলন ছাড়া বাকি পাঁচটি সংকট নিয়েই সুদূরপ্রসারী চিন্তাভাবনা করেছিলেন, নিজের সামর্থ্যের মধ্যে সর্বোচ্চ উদ্যোগ নিয়েছিলেন বাঙলার পানি ও নদীর একান্ত আত্মীয় বাঙালি জাতির ভবিষ্যতের কথা ভেবেই।
তথ্য সূত্রঃ
(বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রচিত অসমাপ্ত আত্মজীবনী,
কারাগারের রোজনামচা, আমার দেখা নয়াচীন)
লেখকঃ পানি সম্পদ উপমন্ত্রীর একান্ত সচিব (উপসচিব)
পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়