হেল্থ ডেস্ক
# বোতলের পানি যতই ফুটিয়ে খান, তেমন কোনও উপকার পাওয়া যাবে না যদি বোতল পরিষ্কার না থাকে
# চিকিৎসকদের মতে, বোতল, ফ্লাস্ক বা যে কোনও পাত্রে আবদ্ধ পানিতে ২৪ ঘণ্টা পরে একটি আস্তরণ পড়ে, এতে পানিতে থাকা অণুজীবরা বংশবিস্তার করে
অফিসে, রাস্তাঘাটে পানি পান করার জন্য সবার ভরসা প্লাস্টিকের বা কাচের বোতল। বারবার ব্যবহার করা যায়- এজন্য এসব বোতল ব্যবহৃত হচ্ছে বাসা-বাড়িতেও।
এছাড়া ফলের রস বা জুস খেতেও সুবিধা হওয়ায় বেড়েছে এই ধরনের বোতল ব্যবহার। গরম আসলে এসব বোতলের ব্যবহার আরও বাড়ে।
তবে পানির এসব বোতল নিয়মিত পরিষ্কার করেন না অনেকেই। বোতলের পানি যতই ফুটিয়ে খান, তেমন কোনও উপকার পাওয়া যাবে না যদি বোতল পরিষ্কার না থাকে। কারণ না ধুলে এসব বোতলেই জন্মাতে পারে শত শত জীবাণু বা ব্যাকটেরিয়া।
এসব ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণুর কারণে ত্বকের সমস্যা থেকে শুরু করে নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, জন্ডিস, টায়ফয়েড, কলেরা ইত্যাদি পানিবাহিত রোগের দেখা দিতে পারে। আর তাই শরীর ও স্বাস্থ্য ভালো রাখতে নিয়মিত ভাল করে বোতল পরিষ্কার করা উচিত।
পানির বোতলে জীবাণু
চিকিৎসকদের মতে, বোতল, ফ্লাস্ক বা যে কোনও পাত্রে আবদ্ধ পানিতে ২৪ ঘণ্টা পরে একটি আস্তরণ পড়ে। একে বলা হয় বায়োফিল্ম। এটি চোখে দেখা যায় না সব সময়ে। এই ক্ষেত্রটিতে পানিতে থাকা অণুজীবরা বংশবিস্তার করে। যত বেশি দিন পানি রাখা থাকে, তত বংশবিস্তার বাড়তে থাকে। এই পানি খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়া একেবারেই অস্বাভাবিক নয়।
শিশু পানি খেতে চায় না? রইল উপায়শিশু পানি খেতে চায় না? রইল উপায়
এছাড়া বোতলে বা ফ্লাক্সে করে পানির পাশাপাশি গ্লুকোজ মেশানো পানি বা ফলের রস খান অনেকে। ফলের রস বা চিনিজাতীয় পানীয়ের ক্ষেত্রে জীবাণুর বংশবৃদ্ধি আরও বেশি হয়। সুতরাং বোতল ভাল করে পরিষ্কার করা আবশ্যিক।
পানি পান করার ক্ষেত্রে হাত পরিষ্কার রাখাটাও একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। অপরিষ্কার হাতে বোতল বা পানির গ্লাস ধরলে হাত থেকে জীবাণু সহজেই পেটে পৌঁছে যেতে পারে। সেখান থেকে ডায়রিয়া বা কলেরা হওয়া অস্বাভাবিক নয়।
এছাড়া বদ্ধ পানিতে লিজিয়োনেলা নামক একটি ব্যাকটেরিয়ার বংশবিস্তারের সম্ভাবনা থেকে যায়। লিজিয়োনেলার প্রকোপে ডায়রিয়াও হয়, নিউমোনিয়াও হয়।
বোতলে মুখ লাগিয়ে পানি খাওয়া স্বাস্থ্যকর নয়
বোতলে বারবার মুখ লাগিয়ে পানি খাওয়ার অভ্যেস আমাদের প্রায় সকলেরই রয়েছে। তবে চিকিৎসকদের তথ্যমতে, এই অভ্যাসটি একেবারেই স্বাস্থ্যসম্মত নয়। এতে বোতলের মুখে বা পানির মধ্যে লালা বা ঠোঁটের উপরের ঘাম মিশে যায়। এই ঘাম বা লালায় থাকা ব্যাকটেরিয়া পানিতে বংশবিস্তার করা অণুজীবগুলিকে আরও সহায়তা করে। সুতরাং নিজস্ব বোতলে বারবার মুখ দিয়ে পানি খেয়ে সেটি ভাল করে না ধুলে নিজের অসুস্থতাই ডেকে আনা হয়।
পাশাপাশি অন্যার বোতলেও মুখ লাগিয়ে পানি খাওয়া মোটেই উচিত নয়।
সাদা নাকি ব্রাউন রাইস, কোনটা বেশি উপকারিসাদা নাকি ব্রাউন রাইস, কোনটা বেশি উপকারি
কাচ, স্টিল, তামা না প্লাস্টিক… কোন বোতলে পানি খাবেন
বিশেষজ্ঞরা কাচ বা স্টিলের বোতলকে পানি খাওয়ার জন্য তুলনামূলক ভাবে সুরক্ষিত বলে মনে করেন। তবে পরিষ্কার না করলে সব বোতলেই জীবাণুর বিপদ লুকিয়ে রয়েছে।
অন্যদিকে দীর্ঘ ব্যবহারের ফলে প্লাস্টিকের বোতলের গায়ে সূক্ষ্ম ফাটল দেখা যায়। এতে করে জীবাণু খুব সহজেই নিজেদের কলোনি তৈরি করতে পারে।
তবে বাসা-বাড়িতে প্লাস্টিকের বোতল পরিষ্কার করা হলেও অফিসে বা রাস্তাঘাটে ব্যবহার ক্রয়া বোতল পরিষ্কার করার কথা মনে থাকে না প্রায়ই। রোদে গরমে প্লাস্টিকের মধ্যে থাকা পানি বিক্রিয়া করে। এতে পানিটি ধীরে ধীরে বিষিয়ে যায়।
বর্তমানে অনেক স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ তামার বোতলে পানি রাখেন। সেটি উপকারী বলে মনেও করা হয়। তবে তামার বোতল বেশি দিন না ধুয়ে পানি রাখলে বোতলের ভেতরে একটি আস্তরণ পড়ে যায়। সেখান থেকে বিস্বাদ এবং জীবাণুর বংশবৃদ্ধি দুই-ই হতে পারে৷
তাই তামা হোক বা প্লাস্টিক বা কাচ রোজ পানি ভরে নেওয়ার আগে বোতল ধুয়ে নেওয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি, মাসে এক বার লেবু বা তেঁতুল দিয়ে বোতল পরিষ্কার করা দরকার।