ন্যাশনাল ডেস্ক: তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু করতে হার্ডিঞ্জ ব্রিজের তুলনায় ৩০ থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করেছেন। সোমবার (২৮ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ১৯১০ সালে পদ্মা নদীর ওপর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ নির্মাণ করা হয়। যেটি শেষ হয় ১৯১৫ সালে। পৃথিবীতে কোনো কিছুর মূল্যমান নির্ধারণ করা হয় স্বর্ণের মূল্যের ভিত্তিতে। এছাড়া তখন ডলার ছিল না। হার্ডিঞ্জ ব্রিজের জন্য খরচ হয় ৪ কোটি ৭৫ লাখ ৫০ হাজার রুপি। স্বর্ণের মূল্য ছিল তখন প্রতি ১০ গ্রাম ১৮.৯৮ রুপি। আজকে যার মূল্যমান ৬৮ হাজার টাকা।
তিনি বলেন, সেই হিসাবে হার্ডিঞ্জ ব্রিজে খরচ হতো ১৭ হাজার ৩৫ কোটি টাকা। আর এর দৈর্ঘ্য হলো ১.৮ কিলোমিটার। কিন্তু পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য হলো ৬.১৫ কিলোমিটার। অর্থাৎ সাড়ে তিন গুণ বেশি। যদি আজকে পদ্মাসেতুর সমান হার্ডিঞ্জ ব্রিজ নির্মাণ করা হতো, তাহলে খরচ হতো ৯৮ হাজার কোটি টাকা স্বর্ণের মূল্যবান হিসাবে।
ড. হাছান বলেন, হার্ডিঞ্জ ব্রিজ হচ্ছে একটি রেল সেতু। আর পদ্মা সেতু হলো একটি বহুমুখী সেতু। যেখানে রয়েছে রেললাইন, চার লেনের রাস্তা। আর এই দোতালা সেতুতে যে শুধু ট্রেন ও গাড়ি চলবে তা নয়, বরং এতে আরো রয়েছে গ্যাসলাইন এবং ফাইবার অপটিক্যাল ক্যাবল। সেই হিসাবে পদ্মা সেতুর সমান হার্ডিঞ্জ ব্রিজ বানাতে খরচ হতো ১ লাখ হাজার কোটি টাকা।
নিজের বক্তব্যকে যুক্তি দিয়ে খণ্ডানোর জন্য বিরোধীদলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু করতে গিয়ে হার্ডিঞ্জ ব্রিজের তুলনায় ৩০ থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করেছেন।
আরও পড়ুন: ৪২ মণ ওজনের চাঁপাই সম্রাটের দাম ৩০ লাখ টাকা
তথ্যমন্ত্রী বলেন, দুদিন আগে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হয়েছে। এটি এদেশের মানুষের আবেগ, ভালোবাসা ও সক্ষমতার প্রতীক। জাতির সক্ষমতার প্রতীক। পদ্মা সেতু হচ্ছে শেখ হাসিনার বিশ্ব বেনিয়াদের বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রজেক্ট বাস্তবায়নের প্রতীক।
তিনি বলেন, এই পদ্মাসেতু কখনো হতো না যদি আমাদের একজন প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা না থাকতেন। ২০১১ সালে যখন পদ্মা সেতু প্রকল্পের কথা উল্লেখ করা হয়, তখন প্রায় পৌনে ৩ কোটি বিলিয়ন ডলার খরচ হবে বলে ধরা হয়েছিল। এর মধ্যে ১.২ বিলিয়ন ডলার আমরা বিশ্বব্যাংকের কাছে চেয়েছিলাম। আর অন্যান্য দাতা সংস্থার কাছে বাকিটা।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আজকে যখন এটি বাস্তবায়িত হলো, তখন ৩.২৫ বিলিয়ন ডলারে শেষ হয়েছে আজকের ডলারের মূল্যমান অনুযায়ী। তখনকার ডলারের মূল্যমান অনুযায়ী, এটি পৌনে ৩ বিলিয়ন ডলার ছিল। আর আজকের মান অনুযায়ী ৩.২৫ বিলিয়ন ডলারে কাজ সমাপ্ত হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার সানফ্রান্সিস্কো অকল্যান্ড ব্রিজের দৈর্ঘ্য হচ্ছে ৭.১৮ কিলোমিটার। ১৯৯৯ সালে শুরু হয়। আর ২০১৩ সালে এর নির্মাণকাজ শেষ হয়। ১৯৯৯ সালে খরচ ধরা হয়েছিল ১ বিলিয়ন ডলার। অথচ ২০১৩ সালে ১৪ বছর পর খরচ হয় ৬.৫ মিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ প্রায় সাড়ে ছয় গুণ বেশি। ২০২২ সালে শেষ হলে খরচ হতো ১২ বিলিয়ন ডলার। কত টাকায় পদ্মা সেতুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাশ্রয় করেছেন সেটা সহজেই অনুমেয়।