স্টাফ রিপোর্টার : নৌ পুলিশ প্রতিষ্ঠার ৯ বছর পূর্তি হলো আজ। দিবসটি উপলক্ষে নৌ পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। দিবস উপলক্ষে আগামী সোমবার (১৪ নভেম্বর) রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ অডিটরিয়ামে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে বলে নৌ পুলিশ প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন।
বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকবেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান, আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে রাষ্ট্রপতি নৌ-সম্পদ সুরক্ষায় পেশাদারিত্ব ও আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করার জন্য নৌ পুলিশ সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। নৌ পুলিশের সব সদস্যকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বাংলাদেশ পুলিশ দেশের সর্ববৃহৎ ঐতিহ্যবাহী একটি প্রতিষ্ঠান। ১৯৭১ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ২৫ মার্চ কালরাতে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে পুলিশের অকুতোভয় সদস্যরা প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধসহ বিভিন্ন সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালনকালে আত্মোৎসর্গকারী বীর পুলিশ সদস্যদের গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে জনসাধারণের আস্থা অর্জনে দৃঢ় মনোবল নিয়ে সেবা দেওয়ার জন্য নৌ পুলিশ সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি আশা করি, আধুনিক প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ ও জ্ঞান লাভের মাধ্যমে নিজেদের দক্ষতাকে উন্নতিসাধন করে সেবা প্রদানের দৃঢ় মনোবল নিয়ে নৌ পুলিশ জনসাধারণের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হবে।
এদিকে, নৌ পুলিশ প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, নদী পথে জনগণকে নিরাপত্তা প্রদানে নৌ পুলিশ কাজ অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করছে। দেশের মৎস্য সম্পদরক্ষার্থে নৌ পুলিশ প্রত্যক্ষভাবে কাজ করছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম একটি উৎস হচ্ছে এই মৎস্য সম্পদ।এই মৎস্য সম্পদ রক্ষা ও সংরক্ষনের জন্য নৌ পুলিশ সারা বছরব্যপি বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করে থাকে।পাশাপাশি মৎস্য পেশার সাথে জড়িত সকল সংগঠনের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের সাথে নিয়ে জনসচেতনতা বাড়াতেও নৌ পুলিশ কাজ করে চলেছে। এরই ধারাবাহিকতায়,বিগত সময়ের তুলনায় বর্তমানে মাছের উৎপাদন ব্যপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়াও,নদীতে নিয়মিত টহল ও অভিযান পরিচালনা করায় নৌ অধিক্ষেত্রে অপরাধের পরিমান বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে। নৌ পুলিশ প্রতিষ্ঠার নবম বছরের অগ্রযাত্রায় নৌ পুলিশ নৌ পথে জনগনের ভরসাস্থলে পরিনত হয়ে উঠেছে।
নৌ পুলিশের মিডিয়া কর্মকর্তা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাথী রানী শর্মা জানান, অভ্যন্তরীণ নদীপথে চোরাচালান, দস্যুতা ও চাঁদাবাজিসহ সব ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ এবং নদীর সম্পদ রক্ষার লক্ষ্যে ২০১৩ সালের ১২ নভেম্বর নৌ পুলিশ প্রতিষ্ঠিত হয়। নদীমাতৃক এই দেশের নৌ পথের নিরাপত্তা প্রদানের জন্য নৌ পুলিশ নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। এরই ধারাবাহিকতায় অত্যন্ত সফলতার সাথে নৌ পুলিশ আজ নবম বছরে পদার্পণ করেছে।বিশেষায়িত এই ইউনিটটি গৌরব, এতিহ্য ও সংগ্রামের নবম বর্ষ উদযাপন করছে।
নৌ পথ বাংলাদেশের জনগনের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম। নৌ পথে প্রাকৃতিক দুর্যোগ সহ যেকোন বিপদে জনগনের প্রয়োজনে সদা তৎপর নৌ পুলিশ । বৈরী আবহাওয়ার কারণে নৌকা ডুবি, নৌযান ত্রুটির কারণে দুর্ঘটনা ,নৌ পথে পথ হারানোসহ বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনা হতে নৌ পুলিশ এ পর্যন্ত ৩৯০০ জন কে উদ্ধার করেছে।
সাম্প্রতিক সময়ে বন্যায় ও ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় নৌ পুলিশ সক্রিয় ছিল। সিলেটে বন্যার্তদের প্রাথমিক সাহায্য প্রদান সহ বন্যার গৃহবন্দীদের উদ্ধার করে আশ্রয়কেন্দ্রে পৌঁছে দিয়েছে নৌ পুলিশ।এছাড়া ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং মোকাবেলায় নৌ পুলিশ আবহাওয়া বিজ্ঞপ্তি প্রতিটি নৌ অধিক্ষেত্রে প্রচারের মাধ্যমে জনগণকে সচেতন করে এবং ১৪৫ জন সাধারন মানুষকে ঘূর্ণিঝড় “সিত্রাং” কবলিত এলাকা হতে উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছানো সহ গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে ।