রাসুল (সা.)–এর জীবনের একটি আবেগপূর্ণ ও শিক্ষণীয় ঘটনা দিয়ে শুরু করি।
এক ব্যক্তি নবীজি (সা.)–এর কাছে এসে বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আমি এক নারীর সঙ্গে এমন কিছু করেছি, যা ব্যভিচার নয়, তবে খুব কাছাকাছি। এখন আপনি আমাকে বিচার করুন।’ উমর (রা.) বললেন, ‘আল্লাহ তা গোপন রেখেছেন, আপনারও রাখা উচিত ছিল।’
নবীজি (সা.) তখন কিছু বলেননি। লোকটি চলে গেলে তিনি এক সাহাবিকে পাঠিয়ে তাকে ফিরিয়ে আনেন এবং সুরা হুদের এই আয়াত তিলাওয়াত করে শোনান, ‘দিনের দুই প্রান্তে ও রাতের কিছু অংশে নামাজ কায়েম করো। নিশ্চয়ই ভালো কাজগুলো মন্দ কাজগুলোকে মুছে দেয়। এটি স্মরণকারীদের জন্য উপদেশ।’ (সুরা হুদ. আয়াত: ১১৪)
একজন প্রশ্ন করলেন, ‘এটা কি শুধু তার জন্য?’ নবীজি (সা.) বললেন, ‘না, এটা সবার জন্য।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৭৬৩) দিনের দুই প্রান্তে ও রাতের কিছু অংশে নামাজ কায়েম করো। নিশ্চয়ই ভালো কাজগুলো মন্দ কাজগুলোকে মুছে দেয়।
সুরা হুদ. আয়াত: ১১৪
এই হাদিস আমাদের শিক্ষা দেয়—পাপ করা মানুষের স্বভাবসুলভ, এমনকি সাহাবিদের মতো মহান মানুষদেরও ভুল হতো। কিন্তু তাঁরা পাপকে বৈধতা দিতেন না; বরং অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে ফিরে যেতেন। আল্লাহ সীমাহীন দয়ার আধার, সে থেকে নিজের ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ কখনো শেষ হয়ে যায় না। আর নামাজ হলো ক্ষমা চাওয়ার সর্বোত্তম উপায়। এ ক্ষেত্রে উমর (রা.)–এর উপদেশও গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলতেন, ব্যক্তিগত গুনাহ প্রচার নয়; বরং গোপনে তওবার মাধ্যমেই সংশোধন সম্ভব।
নামাজ একমাত্র ফরজ ইবাদত, যা নিয়মিতভাবে পাপ ধুয়ে ফেলে। এক হাদিসে নবীজি (সা.) বলেন, ‘তোমরা কি মনে কর, যদি কারও দরজার সামনে একটি নদী থাকে এবং সে প্রতিদিন তাতে পাঁচবার গোসল করে, তবে কি তার দেহে কোনো ময়লা থাকবে?’ সাহাবিরা বলেন, ‘না।’ তিনি বলেন, ‘এটাই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের দৃষ্টান্ত। এগুলোর মাধ্যমে আল্লাহ পাপ মুছে দেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫২৮)
এই আয়াত ও হাদিস আমাদের জন্য আশার বাতিঘর। যত বড় ভুলই হোক, খাঁটি তওবা ও নিয়মিত নামাজ আমাদের আল্লাহর দিকে ফেরায়। বিশেষ করে তরুণদের জন্য এই কথাগুলো পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ সুসংবাদ নিয়ে আসে। তোমরা কি মনে কর, যদি কারও দরজার সামনে একটি নদী থাকে এবং সে প্রতিদিন তাতে পাঁচবার গোসল করে, তবে কি তার দেহে কোনো ময়লা থাকবে?
সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫২৮
প্রথমত, আল্লাহর রাসুল (সা.)–এর সাহাবিরাও ভুল করে ফেলতেন, শয়তান তাঁদের কাছেও আসত।
দ্বিতীয়ত, আপনার করা একটি ভুল আপনার গায়ে কোনো স্থায়ী ‘পাপী বান্দা’ নামের চিহ্ন নয়; বরং সে কাজটি করে আপনি অনুতপ্ত না হলে আপনি পাপী বান্দার কাতারে পড়ে যেতে পারেন।
তৃতীয়ত, দেরি করবেন না। পাপ কাজের লজ্জা, অনুশোচনা ইত্যাদিকে সঙ্গে নিয়েই অজু করুন, দুই রাকাত নামাজ পড়ে ক্ষমা চান তাঁর কাছে, যিনি বান্দার ক্ষমা চাওয়ার আহ্বানে সাড়া দেন।
চতুর্থত, গুনাহর অপরাধবোধ যেন আপনাকে সিজদার স্বাদ থেকে বঞ্চিত না করে। যে অপরাধবোধ এ কাজ থেকে আপনাকে ফিরিয়ে রাখবে, জানবেন, সেটি আসলে শয়তানের দেওয়া অনুভূতি।
পঞ্চমত, আপনার ভুলকে নিজের ও আল্লাহর মধ্যেই রাখুন। ইসলামে কিন্তু ক্ষমা চাওয়াকে উৎসাহিত ও স্বীকারোক্তি দিয়ে বেড়ানোকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
‘নিশ্চয়ই ভালো কাজগুলো মন্দ কাজগুলোকে মুছে দেয়’—এ কথাটিকে কখনো ভুলে যাবেন না।