ইসলাম ও ধর্ম ডেস্ক, আজনিউজ২৪: বর্তমানে কিছু মানুষ শুধু এ জন্য ইসলামকে অপছন্দ করেন যে, ইসলাম ধারণ করলে নিজের নেতৃত্ব, ক্ষমতা, পার্থিব ও ব্যক্তিস্বার্থ হুমকির মুখে পড়বে। অথচ এই ধারণা নিতান্তই ভুল। তারা মারাত্মক প্রতারণার মধ্যে আছে। ইসলাম কখনোই মানুষের অধিকার নষ্ট করে না, তাদের যোগ্যতা ও উন্নতির পথে অন্তরায় হয় না। ইসলাম সমাজের সব শ্রেণির অধিকার সংরক্ষণ করে, তার অবস্থান ও মর্যাদার মূল্যায়ন করে ন্যায় ও ভারসাম্যের সঙ্গে, নৈতিক ও সামাজিক সুবিচারের মাধ্যমে সাম্য ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করে। মানবরচিত বিধি-বিধান থেকে ইসলাম সম্পূর্ণ আলাদা।
বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেসব নীতিতে রাষ্ট্র পরিচালিত হচ্ছে তার পরিণতি ধ্বংসাত্মক। বাহ্যত তা সুন্দর হলেও ভেতরটা খুবই কুিসত। অদূরদর্শী ও সরলপ্রাণ মানুষ তার বাহ্যিক সৌন্দর্য ও চমক দেখে ধোঁকায় পড়ে যায় এবং বাহক ও রক্ষকে পরিণত হয়। অথচ পরিণতি বিবেচনা করলে তা খুবই ভয়াবহ। বাহ্যিক সৌন্দর্য দেখিয়ে সে তার অসৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে তৎপর হয়। তা হলো অন্যায় সুবিধা গ্রহণ, মানুষের ওপর অবিচার করা, অপরাধীদের প্রশ্রয় দেওয়া ইত্যাদি। কিন্তু সাধারণ মানুষ তাদের এ বীভৎস চেহারা দেখে না বলে তা থেকে আত্মরক্ষার চিন্তা করে না।
ইসলাম এসব শাসনব্যবস্থার মুখোশ উন্মোচন করে, কুিসত চেহারার পর্দা সরিয়ে দেয়, স্পষ্ট বলে দেয় এসব অপরাধ। ফলে যারা ধোঁকা ও প্রতারণার মধ্যে পড়ে ছিল, তাদের হুশ ফেরে, তারা দেখতে পায় সমাজ নিয়ন্ত্রণকদের চেহারায় আমিত্ব, অবৈধ উপার্জন, অন্যায় সুযোগ গ্রহণ ও অপরাধের কত দাগ রয়েছে। এরপর ইসলাম প্রকৃত মানুষের চেহারাও তাদের তুলে ধরে, তাদের বলে আল্লাহ মানবজাতিকে এত উঁচু মর্যাদা দান করেছেন অন্য কোনো সৃষ্টি তার অংশীদার হতে পারে না। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি মানবজাতিতে মর্যাদা দান করেছি; স্থলে ও সমুদ্রে তাদের চলাচলের বাহন দিয়েছি; তাদেরকে উত্তম জীবিকা দান করেছি এবং আমি যাদেরকে সৃষ্টি করেছি তাদের বহুজনের ওপর তাদের দিয়েছি শ্রেষ্ঠত্ব।’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৭০)
মৌলিক অধিকারের বিচারে ইসলাম সমগ্র মানবজাতিকে একই কাতারভুক্ত করে। তার অন্তরে এ সত্য প্রতিস্থাপন করে যে তোমরা সবাই এক আদমের সন্তান এবং তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি আল্লাহভীতি। যদি আল্লাহভীতিতে কোনো মানুষ পিছিয়ে থাকে, তবে আরবের ওপর অনারবের এবং অনারবের ওপর আরবের কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মানব! আমি তোমাদেরকে একজন পুরুষ ও একজন নারী থেকে সৃষ্টি করেছি। তোমাদেরকে বিভিন্ন গোত্র ও সম্প্রদায়ে বিভক্ত করেছি, যেন তোমরা পরস্পরকে চিনতে পারো। নিশ্চয়ই তোমাদের ভেতর আল্লাহর কাছে সেই বেশি সম্মানিত যে বেশি আল্লাহভীরু। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্ববিষয়ে জ্ঞাত এবং সব কিছুর খবর রাখেন।’ (সুরা : হুজুরাত, আয়াত : ১৩)
ইসলামের সাম্যনীতির কারণে যখন সর্বশ্রেণির মানুষকে এক কাতারে দাঁড়াতে দেখা যায় এবং তাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি হিসেবে শুধু আল্লাহভীতিকে অনুমোদন দেওয়া হয়, তখন অন্যান্য মতাদর্শকে পুঁজি করে যারা অন্যায় সুযোগ-সুবিধা ভোগ করত তাদের ভয়ংকর ও কুিসত চেহারা প্রকাশ পেয়ে যায়। তাদের কায়েমি স্বার্থ হুমকির মুখে পড়ে, ফলে তারা ইসলামের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনায় ব্যস্ত হয়। ইসলাম শুধু তাদের মুখোশ উন্মোচন করে না, বরং শোষণ ও জুলুমের হাতিয়ার সব মন্ত্র-তন্ত্রের পরিবর্তে সাম্য ও ন্যায়ের বাহক ইসলামকে আঁকড়ে ধরার নির্দেশ দিয়েছে। মুখোশধারী জুলুমবাজরা আরো বেশি অসহায় বোধ করে যখন আল্লাহ নির্দেশ দেন, ‘রাসুল তোমাদের কাছে যা নিয়ে এসেছেন তা ধারণ করো এবং যা থেকে নিষেধ করেছেন তা পরিহার করো।’ (সুরা : হাশর, আয়াত : ৭)
ইসলাম রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে আদর্শ হিসেবে উপস্থাপন করেছে। তাঁর জীবনে রয়েছে মানবজাতির জন্য পূর্ণাঙ্গ নির্দেশনা। তিনি তাঁর জীবন, আদর্শ, চরিত্র, কথা, কাজ, ইঙ্গিত ও নির্দেশাবলির মাধ্যমে অত্যন্ত সুস্পষ্ট ও বিশদভাবে মানবজাতিকে সর্ববিষয়ে পথ প্রদর্শন করেছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘রাসুলের জীবনে তোমাদের জন্য রয়েছে উত্তম আদর্শ, যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালীন কল্যাণ কামনা করে এবং বেশি বেশি আল্লাহকে স্মরণ করে।’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ২১)
কোনো মানুষ তাঁর পবিত্র জীবনের অনুসরণ করলে এবং আদর্শের আলোকে জীবন সাজালে তার সাফল্য ও সৌভাগ্য নিশ্চিত। মুসলিম জাতি তাঁর পবিত্র জীবনকে ধারণ করতে পারলে কোনো মানুষ ইসলামকে ঘৃণা করতে পারবে না, ইসলামের ব্যাপারে তাদের কোনো অসন্তোষ থাকবে না। কেননা ইসলামের প্রায়োগিক ও প্রকৃত রূপ মানবপ্রকৃতির অনুকূল। আর মানবপ্রকৃতি নিজের অনুকূল বিষয়ে শান্তি ও আত্মিক প্রশান্তি খুঁজে পায়। মানবপ্রকৃতি ও মানবাধিকার রক্ষার চিরন্তন পথপ্রাপ্তির পর শুধু কারা ইসলামের বিরোধিতা করবে? কারা এর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাবে? তারাই করবে যারা বৃহত্তর স্বার্থের চেয়ে ব্যক্তিস্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয় এবং মানবিক মূল্যবোধের বিপরীতে প্রবৃত্তির অসুরণ করে। যারা সামান্য স্বার্থের জন্য সত্য বিসর্জন দিতে পারে এবং সত্য গোপন করে তার ওপর কালিমা লেপন করতে পারে। যারা সমগ্র মানবজাতির কল্যাণ চিন্তা করতে পারে না।
যারা ইসলামের ব্যাপারে বিদ্বেষ পোষণ করে তাদের প্রতি আহ্বান থাকবে আপনারা ইসলাম অনুসরণ করে দেখুন। এতে মানব হৃদয়ের বিস্ময়কর প্রশান্তি ও আনন্দ, অন্তরের প্রফুল্লতা ও নির্ভরতা রয়েছে। মুসলিমরা মহান স্রষ্টার সংরক্ষণ ও নিরাপত্তার ভেতর বসবাস করে। প্রশান্তি ও নির্ভরতার জায়গা থেকে সম্পদ, ক্ষমতা ও জীবন আল্লাহর জন্য উৎসর্গ করে। এমনকি তারা নিজেদেরকে পার্থিব ক্ষমতা ও সম্পদ থেকে অমুখাপেক্ষী মনে করে। জীবনের চরম দুর্দিনেও তারা হতাশ হয় না, জীবনের স্বাদ হারিয়ে ফেলে না এবং তার ওপর অর্পিত দায়িত্বও ভুলে যায় না। আল্লাহ সবাইকে ইসলামের প্রকৃত রূপ দর্শন ও তার কল্যাণ লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।
তামিরে হায়াত থেকে আবদুল মজিদ মোল্লার ভাষান্তর