বিয়ে ইসলামে একটি পবিত্র বন্ধন, যা ভালোবাসা, বিশ্বাস ও আল্লাহর প্রতি নির্ভরতার ওপর প্রতিষ্ঠিত। এটি কেবল দুজন মানুষের মিলন নয়; বরং একটি আধ্যাত্মিক যাত্রা, যেখানে দোয়া বা প্রার্থনা দম্পতির জীবনে আল্লাহর রহমত, হেদায়েত ও সুরক্ষা নিয়ে আসে। নববিবাহিত দম্পতি হিসেবে হোক বা কাছের কারও বিয়েতে অংশগ্রহণকারী হিসেবে, তিনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দোয়া রয়েছে, যা প্রত্যেক মুসলিমের জানা উচিত।
১. অভিনন্দন ও আশীর্বাদের দোয়া
বিয়ের পর নবদম্পতিকে অভিনন্দন জানানোর সময় একটি বিশেষ দোয়া পড়ার সুন্নাহ রয়েছে, যা হাদিস থেকে গৃহীত। এই দোয়া হজরত মুহাম্মদ (সা.) নববিবাহিত দম্পতির জন্য পড়তেন, যা আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে পাওয়া যায় (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ২,১৩০)।
দোয়াটি হলো: বারাকাল্লাহু লাকা, ওয়াবারাকা আলাইকা, ওয়াজামাআ বাইনাকুমা ফী খইর। (অর্থাৎ আল্লাহ তোমার জন্য বরকত দিন, তোমার ওপর বরকত বর্ষণ করুন এবং তোমাদের দুজনকে কল্যাণে মিলিত করুন।)
এই দোয়া নবদম্পতির জন্য আল্লাহর রহমত ও কল্যাণ কামনা করে। এটি বিয়ের শুরুতে দুজনের জীবনে শান্তি, সমৃদ্ধি এবং পারস্পরিক সমঝোতার জন্য একটি আধ্যাত্মিক আশীর্বাদ। এই দোয়া পড়া কেবল সুন্নাহ পালনই নয়; বরং নবদম্পতির জন্য একটি স্নেহময় ও আন্তরিক শুভকামনার প্রকাশ।২. বিয়ের প্রথম রাতের দোয়া
বিয়ের প্রথম রাত একটি বিশেষ মুহূর্ত, যা নতুন জীবনের সূচনা। এই রাতে স্বামীর জন্য সুন্নাহ হলো তাঁর স্ত্রীর কপালে হাত রেখে নিম্নলিখিত দোয়া পড়া (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,৩৮৮)।
আধুনিক সমাজে, যেখানে বিয়ের সম্পর্ক প্রায়ই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়, এই দোয়াগুলো দম্পতিদের আধ্যাত্মিকভাবে সংযুক্ত রাখে। এগুলো নবদম্পতিকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে তাদের সম্পর্ক আল্লাহর রহমতের ওপর নির্ভরশীল।
দোয়াটি হলো: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা খইরাহা ওয়া খাইরা মা জাবাল্তাহা আলাইহি, ওয়া আউযুবিকা মিন শাররিহা ওয়া শাররি মা জাবাল্তাহা আলাইহি।
(অর্থাৎ হে আল্লাহ, আমি তোমার কাছে তাঁর কল্যাণ এবং তাঁর মধ্যে যে কল্যাণ তুমি সৃষ্টি করেছ তা প্রার্থনা করি। আর আমি তার অনিষ্ট এবং তার মধ্যে যে অনিষ্ট তুমি সৃষ্টি করেছ, তা থেকে তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করি।)
এ দোয়ার মাধ্যমে নবদম্পতির নতুন জীবনের শুরুতে আল্লাহর কাছে হিদায়াত ও সুরক্ষা কামনা করা হয়। এই দোয়া স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার ভিত্তি গড়ে তুলতে সাহায্য করে।
দোয়ার মাধ্যমে স্বামী তার স্ত্রীর জন্য কল্যাণ প্রার্থনা করে এবং যেকোনো সম্ভাব্য কষ্ট থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ মাগে। এটি বিয়ের প্রথম রাতে আধ্যাত্মিক বন্ধন তৈরির একটি সুন্দর প্রথা।
৩. সৎ ও কল্যাণময় সন্তানের জন্য দোয়া
বিয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হলো সৎ ও ধার্মিক সন্তান লাভ, যারা পরিবার ও সমাজের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে। এ উদ্দেশ্যে কোরআনের সুরা আলে ইমরানের আয়াত: ৩৮ আয়াতে বর্ণিত একটি দোয়া পড়া সুন্নাহ।
দোয়াটি হলো: রব্বি হাবলি মিল্লাদুনকা যুর্রিয়াতান তাইয়িবাহ, ইন্নাকা সামীউদ্দ দুআ। (অর্থাৎ, হে আমার রব, আমাকে তোমার পক্ষ থেকে পবিত্র সন্তান দান কর। নিশ্চয়ই তুমি প্রার্থনা শ্রবণকারী।)
এই দোয়া নবী জাকারিয়া (আ.)-এর প্রার্থনা থেকে গৃহীত, যিনি সৎ সন্তানের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছিলেন। এটি দম্পতির জন্য একটি হৃদয়গ্রাহী দোয়া, যা তাঁদের ভবিষ্যৎ সন্তানদের জন্য ধার্মিকতা, সুস্বাস্থ্য এবং কল্যাণ কামনা করে। এ দোয়া পরিবার গঠনের আধ্যাত্মিক ভিত্তিকে শক্তিশালী করে।
আধুনিক সমাজে, যেখানে বিয়ের সম্পর্ক প্রায়ই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়, এই দোয়াগুলো দম্পতিদের আধ্যাত্মিকভাবে সংযুক্ত রাখে। এগুলো নবদম্পতিকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে তাদের সম্পর্ক আল্লাহর রহমতের ওপর নির্ভরশীল। এই দোয়াগুলো কেবল বিয়ের শুরুতেই নয়; বরং সারা জীবন পড়া যায়, যা দাম্পত্য জীবনে শান্তি ও সমৃদ্ধি বয়ে আনে।
সূত্র: মুসলিম গার্ল ডট কম