নতুন কাপড় পরার মুহূর্ত আমাদের মনে আনন্দ বয়ে আনে। ইসলাম এই আনন্দকে আরও অর্থবহ করে তুলেছে একটি সুন্দর নিয়ম ও একটি দোয়ার মাধ্যমে। এই নিয়ম ও দোয়া আল্লাহর প্রতি যেমন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, তেমনি আমাদের জীবনেও আনে বরকত।
ইবনে কাসির (রহ.) তাঁর তাফসিরে বলেন, পোশাক আল্লাহর নিয়ামত, যা আমাদের সম্মান ও সৌন্দর্য রক্ষা করে। (তাফসিরে ইবনে কাসির, পৃষ্ঠা ২৮৬৫, দারুস সালাম প্রকাশনী, ২০০১)
নতুন কাপড় পরার সুন্নাহ নিয়ম
ইসলামে নতুন কাপড় পরার সুন্দর নিয়মটি আমরা নবীজি (সা.)-এর জীবন থেকেই শিখি।
১. শালীন পোশাক: এটি পোশাক পরা সম্পর্কীয় না হলেও পোশাক বাছাই করার ক্ষেত্র খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কাপড়টি অবশ্যই শরিয়তের সীমার মধ্যে হতে হবে। পুরুষদের জন্য সিল্ক বা সোনার অলংকার পরা নিষিদ্ধ। এ ছাড়া নারী–পুরুষ উভয়ের নির্দিষ্ট পরিমাণ ‘সতর’ ঢেকে রাখা জরুির।
২. পরিষ্কার করে নেওয়া: পরার আগে কাপড়টি পরিষ্কার ও পবিত্র করে নেওয়া জরুরি। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘পবিত্রতা ইমানের অংশ।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস ২২৩)
কাপড় নতুন হলেও তা ধুয়ে নেওয়া বা পরিষ্কার আছে কি না, তা নিশ্চিত করা উচিত।
৩. ডান দিক গ্রহণ: পরার সময় কাপড়টি ডান দিক থেকে পরা সুন্নত। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘কাপড় পরার সময় তোমরা ডান দিক থেকে পরা শুরু করো এবং খোলো বাঁ দিক থেকে।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ১,৭৬৬)
যেমন, জামা পরলে প্রথমে ডান হাতা পরুন, তারপর বাঁ হাতা। পাজামার বেলায় ডান পা–টি আগে প্রবেশ করান।
৪. কৃতজ্ঞতা প্রকাশ: নতুন কাপড় পরে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা উচিত। নবীজি (সা.) নতুন কিছু পেলে সব সময় আল্লাহর প্রশংসা করতেন। আলহামদুলিল্লাহ বলতেন।নতুন কাপড় পরার দোয়া
নতুন কাপড় পরার সময় নবীজি (সা.) একটি দোয়া পড়তেন। তাই সেই দোয়াটি পড়া সুন্নত। দোয়াটি হলো:
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা লাকাল হামদু আনতা কাসাওতানিহি, আসআলুকা মিন খাইরিহি ওয়া খাইরি মা সুনি’আ লাহু, ওয়া আউজুবিকা মিন শাররিহি ওয়া শাররি মা সুনি’আ লাহু।
অর্থ: হে আল্লাহ, সকল প্রশংসা তোমার জন্য। তুমিই আমাকে এই কাপড় পরিয়েছ। আমি তোমার কাছে এর কল্যাণ এবং যে উদ্দেশ্যে তা তৈরি হয়েছে, তার কল্যাণ প্রার্থনা করি। আর এর অকল্যাণ এবং যে উদ্দেশ্যে তা তৈরি হয়েছে, তার অকল্যাণ থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাই। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৪,০২০)
নিয়ম ও দোয়ার তাৎপর্য
নতুন কাপড় পরার নিয়ম ও দোয়ার পেছনে গভীর তাৎপর্য আছে।
প্রথমত, এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, নতুন জামার মতো প্রতিটি নেয়ামত আল্লাহর দান। দোয়া পড়ে আমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকলে নেয়ামত বৃদ্ধি পায়। (সুরা ইবরাহিম, আয়াত: ৭)
দ্বিতীয়ত, দোয়াটি আমাদের অহংকার থেকে বাঁচায়। নতুন কাপড় পরলে অনেক সময় গর্ববোধ হয়। কিন্তু দোয়া আমাদের মনে করিয়ে দেয়, সবকিছুই আল্লাহর ইচ্ছায়।
তৃতীয়ত, এই দোয়া আমাদের আল্লাহর কাছে কাপড়ের কল্যাণ প্রার্থনা করা হয় এবং যদি কোনো ফিতনার সম্ভাবনা থাকে, তা থেকে আশ্রয় চাওয়া হয়।
আল্লামা শানকিতি (রহ.) বলেন, পোশাক মানুষের সম্মান ও সৌন্দর্যের প্রতীক, তবে এটি আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায়ের মাধ্যমেই পূর্ণতা পায়। (আদ্বাউল বায়ান ফি ঈযাহিল কোরআন, পৃষ্ঠা ১২৩৪, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়া, ২০০৫)।
নিয়ম মেনে নতুন কাপড় পরলে সুন্নাহ পালন হয়। আর দোয়াটিও পড়তে মাত্র কয়েক সেকেন্ড লাগে। কিন্তু এর মাধ্যমে আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি ও বরকত লাভ করতে পারি।