বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, নগদ টাকার ব্যবহার কমাতে কাজ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক । অর্থাৎ ক্যাশলেস বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য রয়েছে। কেননা বাংলাদেশে নগদ টাকার চাহিদা প্রতিবছর ১০ শতাংশ হারে বাড়ছে। কয়েক বছর ধরেই হারটি একই রকম। এই প্রবণতা ভাঙতে ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আরও স্বচ্ছ করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একীভূত তাৎক্ষণিক পেমেন্ট সিস্টেম চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। এছাড়া দেশের স্থানীয় সরকারের সব পর্যায়ে থেকে যেকোন ট্রেড লাইসেন্স নিতে হলে কিউআর কোড বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। যদিও এ প্রচেষ্ঠা আগেই শুরু হয়েছিল। আমরা সেটিকে এগিয়ে নিতে চাচ্ছি।
সোমবার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে ‘স্টেকহোল্ডার ডিসকাশন অন ইন্টারঅপারেবল পেমেন্টস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন তিনি।
পলিসি রিসার্স ইন্সটিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. খুরশিদ আলমের সঞ্চালনায় সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। বিশেষ অতিথি ছিলেন, ডেপুটি গভর্নর জাকির হোসেন চৌধুরী। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেম ডিপার্টমেন্টের নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান। বক্তব্য দেন গেটস ফাউন্ডেশনের বাংলাদেশ কান্ট্রি প্রধান স্নিগ্ধা আলী, ডেপুটি ডিরেক্টর জেসন ল্যাম্ব, প্যানেল আলোচক ছিলেন, সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, ইসলামী ব্যাংকের এডিশনাল ম্যানেজিং ডিরেক্টর ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন, বিকাশের চিফ এক্সটার্নাল এন্ড কর্পোরেট এ্যাফোয়ার্স অফিসার মোজর জেনারেল শেখ মো.মনিরুল ইসলাম, নগদের অ্যাডমিনিস্ট্রেটর মো. মোতাসিম বিল্লাহ প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে গভর্নর বলেন, দেশের সব আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস), ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান ও ডিজিটাল ব্যাংক আমাদের নতুন এই একক প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হবে। বাংলাদেশে ডিজিটাল ব্যাংক চালুর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে ইন্টারঅপারেবল ইনস্ট্যান্ট পেমেন্ট সিস্টেম চালু করতে গেটস ফাউন্ডেশনের সহায়তা নেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, আগেও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, কাজ হয়নি, তবে এবার প্রমাণিত আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে কার্যকর সিস্টেম চালু করতে চাই। তিনি বলেন. আমাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, একটা ইন্টারঅপারেবল ইনস্ট্যান্ট পেমেন্ট সিস্টেম ডেভেলপ করা, যেটার মাধ্যমে যেকোনো ব্যক্তি যেকোনো স্থান থেকে যখন ইচ্ছা তখনই পেমেন্ট করতে পারবেন বা বিনিময় করতে পারবেন। আমরা এই প্রক্রিয়ায় দ্রুত এগোতে চাই। এই পদ্ধতি সফলভাবে চালু হলে দেশের প্রতিটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান এক প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হবে এবং নগদহীন অর্থনীতির দিকে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।
সেমিনারে গভর্নর বলেন, নগদনির্ভর অর্থনীতি আমাদের জন্য ব্যয়বহুল। ব্যাংকিং খাতকে প্রতিবছর প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা ও সরকারকে প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকার রাজস্ব হারাতে হচ্ছে। তাই ধাপে ধাপে নগদ ব্যবহার কমিয়ে ডিজিটাল লেনদেনে যেতে হবে। দেশের প্রায় ৬৪ শতাংশ মানুষ আর্থিক খাতের আওতায় এসেছে, যদিও ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ জনগণ এখনো এর বাইরে আছেন। শুধু আওতা বাড়ানোই যথেষ্ট নয়; বরং গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে গভীরভাবে আর্থিক খাতের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে।
আহসান এইচ মনসুর বলেন, ক্ষুদ্রঋণ খাত বিশাল হলেও ব্যাংকিং খাতের কম ১০ শতাংশ জায়গা দখল করে আছে। এ খাতকে প্রযুক্তিনির্ভর না করলে টেকসই হবে না। একইভাবে এজেন্ট ব্যাংকিং দ্রুত বাড়ছে, তবে ঋণ বিতরণে এখনো সীমাবদ্ধতা রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক স¤প্রতি সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের অন্তত ৫০ শতাংশ এজেন্ট নারী হতে হবে। এছাড়া ক্রেডিট কার্ড গ্রহণের ক্ষেত্রে আয়কর দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। কিন্তু এখন তা বাতিল করা হয়েছে। এতে ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ড ব্যবহার বাড়বে। পাশাপাশি এমএফএস খাতে ক্ষুদ্রঋণের সীমা ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে।