ইসলাম ও ধর্ম ডেস্ক, আজনিউজ২৪: পার্থিব জীবনের শৃঙ্খলা ও পরকালীন জীবনে মুক্তির উপায় হিসেবে মহান আল্লাহ দ্বিন ও শরিয়ত দান করেছেন। কিন্তু যুগে যুগে বহু মানুষ আল্লাহর দ্বিন ও শরিয়তের প্রতি সংশয় পোষণ করেছে। তারা আল্লাহর প্রেরিত নবী ও রাসুলের প্রতি মিথ্যারোপ করেছে। মূলত যাদের অন্তরে ব্যাধি ও বক্রতা রয়েছে তারাই দ্বিনের ব্যাপারে সংশয় পোষণ করে। আল্লাহ বলেন, ‘তাদের অন্তরে কি ব্যাধি আছে? না তারা সংশয় পোষণ করে, আর না তারা ভয় করে যে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল তাদের প্রতি অবিচার করবেন? বরং তারাই তো অবিচারকারী।’ (সুরা নূর, আয়াত : ৫০)
নবী-রাসুলদের অভিন্ন দ্বিন : মৌলিকভাবে সব নবী ও রাসুল অভিন্ন দ্বিনের আহ্বান জানিয়েছেন। তা হলো এক আল্লাহর ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা এবং তাঁর ইবাদত করা। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনি তোমাদের জন্য বিধিবদ্ধ করেছেন দ্বিন, যার নির্দেশে দিয়েছিলেন তিনি নুহকে, আর যা আমি ওহি করেছি তোমাকে এবং যার নির্দেশ দিয়েছিলাম ইবরাহিম, মুসা ও ঈসাকে এ বলে যে তোমরা দ্বিনকে প্রতিষ্ঠিত করো এবং তাতে মতভেদ কোরো না।’ (সুরা শুরা, আয়াত : ১৩)
দ্বিনের পূর্ণতা লাভ : আল্লাহ আদম (আ.)-এর মাধ্যমে পৃথিবীতে যে দ্বিনের সূচনা করেছিলেন মুহাম্মদ (সা.)-এর মাধ্যমে তার পূর্ণতা সাধন করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বিন পূর্ণাঙ্গ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বিন মনোনীত করলাম।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত : ৩)
দ্বিন মানুষের জীবনকে সহজ করে : আল্লাহ মানুষের জন্য দ্বিন ও শরিয়তের যেসব বিধান দান করেছেন তার কোনোটিই তার সাধ্যাতীত নয়; বরং আল্লাহ দ্বিনকে করেছেন সহজ পালনীয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ কোনো ব্যক্তিকে তার সাধ্যাতীত কোনো বিধান দান করেননি।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৮৬)
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজতা চান, তোমাদের প্রতি কঠোরতা চান না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৫)
দ্বিনের আনুগত্য কল্যাণ নিশ্চিত করে : দ্বিনের আনুগত্যই মানবজীবনের যাবতীয় কল্যাণ নিশ্চিত করে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যদি তারা বলত, শুনলাম ও মান্য করলাম এবং শোনো ও আমাদের প্রতি লক্ষ করো, তবে তা তাদের জন্য ভালো ও সংগত হতো। কিন্তু তাদের কুফরির জন্য আল্লাহ তাদের অভিশাপ করেছেন। তাদের অল্পসংখ্যকই বিশ্বাস করে।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ৪৬)
দ্বিনের অনুরাগ আল্লাহর দান : দ্বিনের প্রতি অনুরাগ আল্লাহর একান্ত অনুগ্রহ। তিনি যাকে ইচ্ছা দ্বিনের প্রতি আকৃষ্ট করেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তুমি মুশরিকদের যার প্রতি আহ্বান করছ তা তাদের কাছে দুর্বহ মনে হয়। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা দ্বিনের প্রতি আকৃষ্ট করেন এবং যে তাঁর অভিমুখী, তাকে দ্বিনের দিকে পরিচালিত করেন।’ (সুরা শুরা, আয়াত : ১৩)
দ্বিনের ব্যাপারে সংশয় পোষণ করা পাপ : পবিত্র কোরআনের একাধিক স্থানে দ্বিনের প্রতি সংশয় পোষণকারীদের নিন্দা করা হয়েছে এবং তা পরিহার করতে বলা হয়েছে। যেমন ইরশাদ হয়েছে, ‘তাদের অন্তরে কি ব্যাধি আছে? না তারা সংশয় পোষণ করে, আর না তারা ভয় করে যে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল তাদের প্রতি অবিচার করবেন? বরং তারাই তো অবিচারকারী।’ (সুরা নূর, আয়াত : ৫০)
দ্বিনের প্রতি সংশয় পোষণ পাপ কেন? : দ্বিন আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত এবং হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) দ্বিনকে সর্বতোভাবে কল্যাণ বলেছেন। তাই দ্বিনের প্রতি সংশয় পোষণ করার অর্থ হলো আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি সংশয় পোষণ করা এবং কল্যাণের পথ পরিহার করে অকল্যাণের পথ অনুসরণ করা। আল্লামা ইবনুল কায়্যিম জাওজি (রহ.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই শরিয়তের (দ্বিনের মুহাম্মদির) উৎস ও ভিত্তি বান্দার পার্থিব ও অপার্থিব প্রজ্ঞা ও কল্যাণের ওপর। দ্বিন সর্বতো কল্যাণ, সর্বতো অনুগ্রহ, সর্বতো কল্যাণ, সর্বতো প্রজ্ঞাময়। যে বিষয়টি ন্যায় থেকে অন্যায়ের দিকে, দয়া থেকে নির্মমতার দিকে, কল্যাণ থেকে অকল্যাণের দিকে, প্রজ্ঞা থেকে অর্থহীনতার দিকে বেরিয়ে যায়, তা অবশ্যই দ্বিনের অন্তর্ভুক্ত নয়।’ (ইলামুল মুওয়াক্কিয়িন আন রাব্বিল আলামিন, পৃষ্ঠা ৪৮৩)
জ্ঞানীরা দ্বিনের ব্যাপারে সংশয় রাখে না : যারা জ্ঞানী, যারা দ্বিনের কল্যাণ বিষয়ে অবগত, তারা দ্বিনের ব্যাপারে সংশয় পোষণ করে না। ইরশাদ হয়েছে, ‘যাদের জ্ঞান দেওয়া হয়েছে তারা জানে, আপনার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তা-ই সত্য। এটা পরাক্রমশালী প্রশংসার্হ আল্লাহর পথ নির্দেশ করে।’ (সুরা : সাবা, আয়াত : ৬)
সংশয় পোষণকারীর ঠিকানা জাহান্নাম : যারা দ্বিনের ব্যাপারে সংশয় পোষণ করে এবং যারা দ্বিনি কাজে বাধা প্রদান করে তাদের ঠিকানা জাহান্নাম। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আদেশ করা হবে তোমরা উভয়ে নিক্ষেপ করো জাহান্নামে প্রত্যেক উদ্ধত অবিশ্বাসীকে, যারা কল্যাণকর কাজে প্রবল বাধাদানকারী, সীমা লঙ্ঘনকারী ও সন্দেহ পোষণকারী।’ (সুরা কাফ, আয়াত : ২৫)
দ্বিনের ওপর অবিচল থাকার পুরস্কার জান্নাত : যারা সংশয়ের পরিবর্তে দ্বিনের প্রতি আস্থাশীল হয় এবং তার ওপর অবিচল থাকে তাদের পুরস্কার জান্নাত। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা বলে আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ; অতঃপর অবিচল থাকে, তাদের কাছে অবতীর্ণ হয় ফেরেশতা এবং বলে, তোমরা ভীত হয়ো না, চিন্তিত হয়ো না। তোমাদের যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল তার জন্য আনন্দিত হও।’ (সুরা হা-মিম-সাজদা, আয়াত : ৩০)
আল্লাহ সবাইকে সংশয়হীনভাবে দ্বিন পালনের তাওফিক দিন। আমিন।