মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি: কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, প্রতিবছর আমাদের ২৪ হাজার কোটি টাকার ভোজ্য তেল আমদানি করতে হয়। সম্প্রতি ইউক্রেনের যুদ্ধ, করোনা এসব কারণে বিদেশ থেকে তেল আসছে না। ৬০০ ডলার টনের ভোজ্য তেল বেড়ে হয়েছে ১৮০০-২০০০ ডলার। শিপের ভাড়া বাড়ছে, জাহাজের ভাড়া বাড়ছে, এজন্য তেলের দাম কমানো যাচ্ছে না।
বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) সকাল ১০টার দিকে মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বানিয়াজুরি এলাকায় ব্রি ধান-৯২ জাতের বীজ উৎপাদনকারী ব্লকের কৃষকদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, শিক্ষিত ছেলে-মেয়েরা মাঠে কাজ করতে চায় না বলেই আমরা কৃষিতে বিভিন্ন ধরনের মেশিন ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছি। আমরা কম্বাইন হার্ভেস্টার, ধান লাগানোর যন্ত্র, ধান মাড়াইয়ের যন্ত্রসহ বিভিন্ন কৃষিযন্ত্র দিচ্ছি। যাতে কৃষকদের ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে সময় ও খরচ কম লাগে।
তিনি আরও বলেন, দেশে যথেষ্ট খাদ্যশস্য আছে, কোনো হাহাকার নেই। সাংবাদিক, সুশীল সমাজ, বুদ্ধিজীবী এবং বিএনপির ফখরুল ইসলাম প্রতিদিন টেলিভিশনের সামনে আসে। বলে- বাংলাদেশ ডুবে গেল, বাংলাদেশের মানুষ না খেয়ে মরল। এ রকম একটা অবস্থা। মনে হয় যে, বাংলাদেশের দুর্ভিক্ষ শুরু হয়েছে।
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ২০০৩-০৬ সালে বিএনপি ক্ষমতায় ছিল। সেসময় প্রতি বছর শত-শত মানুষ আশ্বিন-কার্তিক মাসে মঙ্গার কারণে না খেয়ে মারা গেছে। বর্তমান সরকারের সময়ে একজন মানুষ না খেয়ে মারা গেছে- এই তথ্য যদি কোনো গণমাধ্যমকর্মী দেখাতে পারে মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেব।
ব্রি ধান-৯২ জাতের প্রশংসা করে মন্ত্রী বলেন, একজন শ্রমিক, দিনমজুর, রিকশাচালক সেও সরু চাল খেতে চায়। ৯২ জাতের ধান থেকে পাওয়া চাল চিকন। এ যাবতকালের সবচেয়ে বেশি উৎপাদনশীল ৯২ জাতের ধান। কোনো ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে প্রতি শতকে কমপক্ষে ১ মণ ধান পাওয়া যায়। ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা প্রতিনিয়ত গবেষণার মাধ্যমে নতুন-নতুন জাত উদ্ভাবন করছে। আমরা এর সুফল পেতে শুরু করেছি। সবার মুখে পুষ্টিকর খাবার দেওয়ার জন্য আমরা সরকারের পক্ষ থেকে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছি।
তিনি বলেন, একাত্তরের যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে দেশে সাড়ে সাত কোটি মানুষ ছিল। জমি ছিল মাথাপিছু ২৮ শতাংশ। এখন ১৭ কোটি মানুষ, জমি মাথাপিছু ১০ শতাংশ। আগে খাদ্যের অভাব ছিল, খাদ্য ঘাটতি ছিল। খাদ্যের জন্য সারা পৃথিবীতে আমরা খাদ্যের ঝুড়ি নিয়ে ঘুরে বেড়াতাম। অন্য দেশের সাহায্য-সহযোগিতা ছাড়া মানুষকে খাওয়ানো কঠিন হয়ে যেত। তখন দেশে দুর্ভিক্ষ হতো। প্রতি বছর আশ্বিন-কার্তিক মাসে মঙ্গা হতো। কোনো মানুষের ঘরে খাবার থাকতো না। সেই বাংলাদেশে আজকে কোনো মানুষ দুই বেলার কম খায় না। সবাই দুই বেলার বেশি খায়। কোনো কোনো বছর খাদ্য উদ্বৃত্ত হচ্ছে। আমরা বহির্বিশ্বে তা রপ্তানি করছি। আমদের এই সাফল্য এবং অর্জন সফল হয়েছে সরকারের দূরদর্শী নেতৃত্বে।
এ সময় কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর, জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ গোলাম আজাদ খান, ঘিওর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হামিদুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।