আইন ও আদালত ডেস্ক: গরীবের বন্ধু খ্যাত অ্যাডভোকেট আবদুল বাসেত মজুমদার দেশের আইনঙ্গনে মহীরুহ হয়ে চিরকাল বেঁচে থাকবেন। বাসেত মজুমদার গরিব মানুষের সেবা নিশ্চিত করতে অসামান্য অবদান রেখেছেন। পেশাগত জীবনে তিনি অসংখ্য মামলা বিনা পারিশ্রমিকে পরিচালনা করেছেন। অন্যদেরও উৎসাহ দিয়েছেন। এজন্য তিনি গরিবের আইনজীবী হিসেবে খ্যাত হয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার (২৭ অক্টোবর) বিকালে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে আইনজীবী বাসেত মজুমদারের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণসভা ও দোয়া অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আইনজীবী আবদুল বাসেত মজুমদার স্মৃতি পরিষদ।
আইন পেশাকে সেবা হিসেবে গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনাদের (আইনজীবী) কাছে সবসময় মক্কেল আসেন। মক্কেলের মুখের দিকে তাকালে আপনারা বুঝতে পারবেন, তাদের কষ্টটা। তারা কোত্থেকে কীভাবে পয়সা সংগ্রহ করে নিয়ে আসেন। তাদের ছেলে-মেয়েদের শিক্ষা, খাওয়া-দাওয়ার উদ্দেশ্যে পয়সা সংগ্রহ করেন। সেই পয়সা আপনাদের দেন। সেই পয়সা দিয়ে মোকদ্দমা করেন। ওদের মুখের দিকে তাকিয়ে যদি আমরা নিয়ত করি, প্রতি সপ্তাহে বা মাসে একদিন আমরা কিছু কেস করে দেবো বিনা পয়সায় বা মুখ দেখে মনে হলো এর পয়সা অত্যন্ত কষ্টে আহরিত, আমরা নিলাম না। না নিয়ে তাদের মোকদ্দমা করলাম। এটা খুব একটা কষ্টের ব্যাপার না।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে সাবেক প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, আমরা ছিলাম কুমিল্লার। এ কারণে তার (বাসেত মজুমদার) সঙ্গে অনেক ঘনিষ্ঠতা ছিল। আমি বাসেত মজুমদারকে দুলাভাই বলে ডাকতাম। আমার এত বড় শুভাকাঙ্ক্ষী সুপ্রিম কোর্টে বাসেত মুজমদারের পরে আর কেউ ছিল বলে জানি না।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. মোমতাজউদ্দিন ফকির বলেন, বাসেত মজুমদার কখনো মানুষকে ধিক্কার দিয়ে, অপমান করে কথা বলতেন না। তিনি নিজেকে উজাড় করে দিয়েছিলেন সব মানুষের জন্য।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন- জাতীয় সংসদের সাবেক স্পিকার আইনজীবী জমির উদ্দিন সরকার, আপিল বিভাগের বিচারপতি নুরুজ্জামান, আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. বোরহান উদ্দিন, বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন প্রমুখ।
আব্দুল বাসেত মজুমদারের জন্ম ১৯৩৮ সালের ১ জানুয়ারি কুমিল্লার লাকসামে। ১৯৬৬ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর তিনি আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। এরপর ১৯৬৭ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি তিনি হাইকোর্টে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আব্দুল বাসেত মজুমদার বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এবং সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
তিনি দুস্থ আইনজীবীদের জন্য নিজের নামে ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করেছেন। দেশের বিভিন্ন আইনজীবী সমিতিতে এ ফান্ড থেকে অর্থ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
আব্দুল বাসেত মজুমদার গত বছর ২৭ অক্টোবর রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।