অন্তর্বর্তী সরকারের দুই ছাত্র উপদেষ্টাকে নিয়ে গভীর যড়যন্ত্র হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ছাত্র উপদেষ্টারা এনসিপির কেউ নয়, তারা গণঅভ্যুত্থানের প্রতিনিধি। গণঅভ্যুত্থানকে শক্তিশালী করতে, গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে তারা সরকারে রয়েছেন।’
দেশব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে বুধবার (৩০ জুলাই) বিকালে নরসিংদী পৌরসভার সামনে ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ শেষে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
রংপুর থেকে শুরু হওয়া পদযাত্রা মাসব্যাপী সারা দেশ ঘুরে আজ (বুধবার) বিপ্লবের নগরী নরসিংদীতে উপস্থিত হয়েছে উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পরও আমরা দেখেছি এক বছরে নানা ষড়যন্ত্র হয়েছে, নানাভাবে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে, সংস্কার কাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে দেওয়া হয়নি। নতুন সংবিধানকে প্রতিষ্ঠা করতে দেয়া হয়নি এবং ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রপতি চুপ্পুকে অপসারণ করতেও দেওয়া হয়নি, আমাদের ঘোষণাপত্র দেওয়া হয়নি। আমরা কিছুই বলি নাই; কোনো দাবি থেকে সরেও আসি নাই। আমরা সংগঠিত হয়ে এই দাবিগুলো আদায় করে ছাড়ব।’
জুলাই পদযাত্রায় হামলা ও বাধা সৃষ্টি করে এনসিপিকে থামানো যাবে না উল্লেখ করে এনসিপি আহ্বায়ক আরও বলেন, ‘গত বছর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে কোটা সংস্কারের দাবিতে সারা দেশব্যাপী আন্দোলন শুরু করেছিলাম। সেই আন্দোলন পর্যায়ক্রমে মানুষের মুক্তির দাবিতে গণঅভ্যুত্থানে রূপ নিয়েছিল। এ বছর পহেলা জুলাই দেশ গড়তে পদযাত্রা শুরু করেছিলাম শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের মাধ্যমে। আমরা এক মাসব্যাপী পদযাত্রা করে বিপ্লবের এই নগরী নরসিংদীতে এসেছি।’
তিনি বলেন, ‘বিপ্লবের ইতিহাস আমরা কেউ ভুলে যাই নাই। আমাদের এখনও মনে আছে ১৮ জুলাইয়ের কথা। জানি ১৮ জুলাই নরসিংদীতে কী হয়েছিল। ১৭ জুলাই যখন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে শিক্ষার্থীদের বের করে দেওয়া হয়েছিল। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ পথে নেমে আসতে কমপ্লিট শাটডাউন ঘোষণা করেছিলাম। সেই কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে নরসিংদীর ছাত্র-জনতা নেমে এসেছিল। ১৮ জুলাই নরসিংদীর শিক্ষার্থী তাহমিদ শহীদ হয়েছিলেন। নরসিংদী জেলার ২২জন শহীদ হয়েছেন। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজমুক্ত একটি বাংলাদেশের দাবিতে আমরা ৩ আগস্ট শহীদ মিনারে জড়ো হবে।’
এর আগে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে নিহত শহীদ পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন এনসিপির নেতারা। শহীদ পরিবারের সদস্যদের তারা সমবেদনা জানান। এরপর ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের জেলখানা মোড় এলাকা থেকে জুলাই পদযাত্রা শুরু হয়। নরসিংদী সরকারি কলেজ এলাকাসহ শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পৌরসভা চত্বরের জনসভাস্থলে এসে পদযাত্রাটি শেষ হয়।
নরসিংদীর স্থানীয় নেতাকর্মী, শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষ ছাড়াও এ সময় উপস্থিত ছিলেন এনসিপির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারা প্রমুখ।