থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে বিরোধপূর্ণ সীমান্ত এলাকায় তীব্র লড়াই চলছে। সংঘর্ষে থাইল্যান্ডে অন্তত আটজন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং দুই সেনা আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটি।
থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে বিবিসি বলেছে, সংঘাতে থাইল্যান্ডে বেসামরিক নিহত মানুষের সংখ্যা বেড়ে ৮ এবং আহত হয়েছেন ১৩ জন।
থাইল্যান্ডের সেনাবাহিনী আজ বৃহস্পতিবার বলেছে, কম্বোডিয়ার সেনারা উত্তর-পশ্চিম কম্বোডিয়ার অদ্দার মিনচেই প্রদেশের সীমান্তবর্তী বিরোধপূর্ণ তা মোয়ান থম মন্দিরের কাছে সীমান্ত এলাকায় প্রথমে গুলি চালায়। তার পর থেকে সেখানে তীব্র লড়াই চলছে।
সীমান্তবর্তী ৮৬টি গ্রামের প্রায় ৪০ হাজার থাই বেসামরিক নাগরিককে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
কম্বোডিয়া প্রথমে ওই এলাকায় একটি নজরদারি ড্রোন মোতায়েন করে, তারপর সেনা পাঠায়। কম্বোডিয়ার সেনারা সীমান্তে ভারী অস্ত্র ব্যবহার করে গোলা ছুড়ছে, যার মধ্যে কামানের গোলা এবং দীর্ঘ পাল্লার বিএম২১ রকেটও আছে।
থাইল্যান্ডের সুরিন প্রদেশের জেলা প্রধান সুত্তিরোত চারোয়নথানাসাক আজ সকালে কম্বোডিয়ার গোলাবর্ষণে দুজন নিহত এবং আরও কয়েকজন আহত হওয়ার খবর দিয়েছিলেন।
সীমান্তবর্তী ৮৬টি গ্রামের প্রায় ৪০ হাজার থাই বেসামরিক নাগরিককে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলেও জানান সুত্তিরোত।
সীমান্তে এই সংঘাত নিয়ে কম্বোডিয়ার জাতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় আজ একটি বিবৃতি দিয়েছে। বিবৃতিতে তারা থাইল্যান্ডের বিরুদ্ধে আগে হামলা চালানোর অভিযোগ এনেছে।
পাল্টা লড়াই ও হামলা প্রতিহত করা ছাড়া কম্বোডিয়ার সেনাবাহিনীর কাছে অন্য কোনো উপায় নেই।
হুন সেন, কম্বোডিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী
বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে, থাইল্যান্ডের সেনাবাহিনীর হামলার পর কম্বোডিয়ার সেনারা পাল্টা জবাব দিয়েছেন। তাঁরা কেবল আত্মরক্ষার জন্য এটা করেছেন।
কম্বোডিয়ার দীর্ঘদিনের শাসক সাবেক প্রধানমন্ত্রী হুন সেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্টে লিখেছেন, থাইল্যান্ডের সেনাবাহিনী কম্বোডিয়ার থাইল্যান্ড সীমান্তবর্তী দুটি প্রদেশ অদ্দার মিনচেই এবং প্রাহ ভিহেয়ারে গোলাবর্ষণ করেছে।
হুন সেন আরও বলেন, ‘পাল্টা লড়াই ও হামলা প্রতিহত করা ছাড়া কম্বোডিয়ার সেনাবাহিনীর কাছে অন্য কোনো উপায় নেই।’
হুন সেন সাধারণ মানুষকে শান্ত থাকার এবং আতঙ্কিত হয়ে চাল ও অন্যান্য খাদ্যসামগ্রী না কেনার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি সীমান্ত অঞ্চল ছাড়া অন্য সব জায়গায় এবং সব খাতে স্বাভাবিকভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য চালিয়ে যাওয়ার অনুরোধও করেছেন।
সর্বশেষ স্থলমাইন বিস্ফোরণের ঘটনার পর থাইল্যান্ডের ক্ষমতাসীন ফিউ থাই পার্টি জানিয়েছে, তারা কম্বোডিয়ায় নিযুক্ত থাইল্যান্ডের রাষ্ট্রদূতকে দেশে ফিরিয়ে এনেছে এবং কম্বোডিয়ার রাষ্ট্রদূতকে থাইল্যান্ড থেকে বহিষ্কার করা হবে। থাইল্যান্ড কম্বোডিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের স্তরও অবনমন করেছে।
কম্বোডিয়ার রাজধানী নমপেনে অবস্থিত থাইল্যান্ডের দূতাবাস বলেছে, সীমান্তে পরিস্থিতি ‘ক্রমাগত উত্তপ্ত হয়ে উঠছে’ এবং ‘সংঘাত দীর্ঘায়িত ও বিস্তৃত’ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই জরুরি কোনো কারণ না থাকলে থাই নাগরিকদের ‘যত দ্রুত সম্ভব’ কম্বোডিয়া ছেড়ে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
থাইল্যান্ডের দূতাবাস থেকে ঘোষণা আসার পরপরই দেশটির সেনাবাহিনী বলেছে, তারা সীমান্তে কম্বোডীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একটি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান মোতায়েন করেছে। থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার কূটনৈতিক সম্পর্কে অবনমন
সর্বশেষ এই সংঘাতের এক দিন আগে গতকাল বুধবার একটি স্থলমাইন বিস্ফোরণে এক থাই সেনা আহত হন, তিনি তাঁর ডান পা হারিয়েছেন। থাইল্যান্ড কর্তৃপক্ষ এ ঘটনার জন্য কম্বোডিয়াকে দায়ী করেছে।
এর আগে ১৬ জুলাই বিরোধপূর্ণ সীমান্ত এলাকায় টহলরত অবস্থায় একটি মাইন বিস্ফোরণে থাইল্যান্ডের আরও তিন সেনা আহত হন।