ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক: তুরস্ক প্রায় ৪০ লাখ শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে, যার ৩০ লাখই সিরীয়। আর এই সিরিয়ান শরণার্থীরা প্রায়শই হত্যার শিকার হচ্ছে স্থানীয় তুর্কিদের হাতে। যার সাম্প্রতিক মর্মান্তিক ঘটনা হলো ১৯ বছরের তরুণ নাইল আল-নাইফ হত্যাকাণ্ড।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা এ সংক্রান্ত একটি খবর প্রকাশ করেছে। যে খবরে নাইফ হত্যাকাণ্ডের মর্মান্তিক বর্ণনার উল্লেখ রয়েছে। আরও উল্লেখ রয়েছে এসব সহিংসতায় দেশটির উদ্বেগের কথা।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাত দুটোর সময় ক্যাম্পের ঘরে ঢুকে ঘুমন্ত নাইফকে ছুরিকাঘাত করে হত্যাকারীরা। ইস্তানবুলের বাইরামপাসা জেলার শরণার্থী ক্যাম্পে এই ঘটনায় সোমবার আট সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করেছে তুর্কি পুলিশ।
সেদিন রাতে ছুরিকাঘাতের পর রক্ত ঝরতে ঝরতে ধুকে ধুকে মৃত্যুমুখে পতিত হয় নাইফ। ঘটনাস্থল থেকে ফিরে নিহত নাইফের বন্ধু জানায়, হত্যাকারীদের কয়েকজনের কাছে অস্ত্রশস্ত্র ছিল। তারা নিজেদের পুলিশ দাবি করে ওই ভবনে ঢোকে এবং তার বন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যা করে।
বাইরামপাসা জেলার পুলিশ জানিয়েছে, এ ঘটনায় পাঁচ তুর্কি ও তিন আফগান নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে সাম্প্রতিক এই হত্যাকাণ্ডই শেষ নয় বলে জানিয়েছে সেখানকার শরণার্থী অধিকার বিষয়ক সংস্থা। দেশটিতে উদ্বাস্তুদের বিরুদ্ধে সহিংসতার একটি উদ্বেগজনক প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে বলে দাবি শরণার্থী অধিকার কর্মীদের।
এর আগে দিয়ারবাকির শহরে ১৮ বছরের এক সিরীয়কে পার্কে হাঁটার সময় ছুরিকাঘাত করা হয়। তুর্কি নাগরিককে সিগারেট না দেয়ায় এসেনাইরুতে একটি সিরীয় অধ্যুষিত বাজারে হামলার ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা সিরীয়দের বিরুদ্ধে প্রায়শই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বিক্ষোভ মিছিলও করে থাকে। সে মিছিলে স্লোগান ওঠে, ‘এটা তোদের সিরিয়া নয়, তুর্কি’।
এছাড়া গত ডিসেম্বরেও সিরিয়ান শ্রমিক হত্যাকাণ্ডে তুর্কি নাগরিককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওই তুর্কি নিজেই হত্যার কথা শিকার করে। নভেম্বরেও তিন তরুণ নির্মাণ শ্রমিক ঘুমন্ত অবস্থায় পুড়ে মারা যায়। সেই আগুন লাগানোর হুমকি আগেই দিয়েছিল তুর্কি নাগরিকরা। যদিও তদন্ত শেষে পুলিশ জানিয়েছে একটি ইলেকট্রিক হিটার থেকে আগুন লাগে, তবুও হুমকি দাতাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
কেবল এই নয়, সিরীয় শরণার্থীদের বিরুদ্ধে আরো অনেক সহিংসতার ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। ২০১১ সাল থেকে গৃহযুদ্ধ শুরুর পর সবচেয়ে বেশি সিরিয়ান আশ্রয় নেয় তুরস্কে। বছরের পর বছর তুরস্কে থাকা ওই শরণার্থীদের তুর্কি অর্থনীতির খারাপ অবস্থার জন্যও দায়ী করছে স্থানীয়রা। দিনের পর দিন তারা আরও বেশি অ-সহিষ্ণু হয়ে উঠছে শরণার্থীদের ওপর। আর এই প্রেক্ষাপটে উদ্বিগ্ন দেশটির কর্তাব্যক্তিরা।