সারাদিন থেমে থেমে হালকা-মাঝারি বৃষ্টি ঝরেছে। সন্ধ্যা নামতেই শুরু ঝুম বারিধারা। কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে কার্যত অচল হয়ে পড়েছিল গোটা রাজধানী। ডুবে গিয়েছিল শহরের বেশকিছু সড়কসহ অলিগলি। অনেক এলাকার ফুটপাতও ছিল পানির নিচে। চলতি বছরের মধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার বৃষ্টিতে ভোগান্তির মাত্রা ছিল সবচেয়ে বেশি। এসব রাস্তায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে ছিল ছোট-বড় নানা ধরনের যানবাহন। একদিকে যানজট অন্যদিকে জলাবদ্ধতায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরবাসী।
জানা গেছে, ধানমন্ডিসহ আশপাশের সব গলিতে হাঁটুপানি। সেখানকার গ্রিন লাইফ হাসপাতাল, সেন্ট্রাল হাসপাতাল এবং ল্যাবএইডে আসা রোগীরা পড়েছেন বিপদে। পানির কারণে বের হতে পারছেন না রোগীরা।
একই অবস্থা রাজধানীর মগবাজার, মালিবাগ, সিদ্ধেশ্বরী, বেইলি রোড এবং শান্তিনগরেও। মতিঝিলে পানি হাঁটুর উপরে উঠে গেছে। এ ছাড়া কুড়িল, বনানী, তেজগাঁও, খামারবাড়ি, শুক্রাবাদ, চন্দ্রিমা, শেওড়াপাড়া এলাকায় পানি জমে গিয়েছিল। বৃষ্টির সময় ধানমন্ডি ২৭ এবং তেজগাঁওয়ে চলাচল করা গাড়িগুলো সড়কে স্থির বসে ছিল দীর্ঘ সময় ধরে।
মিরপুর ১০ নম্বরে প্রধান সড়কসহ অলিগলিতে কোমর পানি। প্রধান সড়কে চলাচল করা ব্যক্তিগত গাড়ির ভেতরেও পানি ঢুকে গেছে। ইঞ্জিনে পানি ঢুকে অনেক সিএনজি বন্ধ হয়ে গেছে রাস্তাতেই। এদিকে সড়কে জলাবদ্ধতার কারণে সৃষ্ট যানজটে দীর্ঘ সময় আটকা পড়েন অনেকে। এ ছাড়া মিরপুর এলাকার ভেতরের সড়কগুলোতেও হাঁটুপানি। মিরপুর-১২ নম্বরের প্যারিস রোড, ঝুটপট্টি, রূপনগর, পল্লবীসহ বেশ কয়েকটি স্থান পানিতে তলিয়ে গেছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত অনেকেই বৃষ্টির কারণে রাত ১১টা পর্যন্ত অফিস থেকেই বের হতে পারেননি।
গতকাল রাত ১টায় গণমাধ্যমকর্মী শরিয়ত খান আমাদের সময়কে বলেন, প্রায় চার ঘণ্টা ধানমন্ডি ২৭-এ আটকে আছি। এই সময়ের মধ্যে আধা কিলোমিটারও আগাতে পারিনি। এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি কখনো হইনি। বৃষ্টির সঙ্গে ট্রাফিক সিস্টেমও ভেঙে পড়েছে।
রাজধানীবাসীর অভিযোগ, বৃষ্টি হলেও পানি জমে থাকা এখন নিয়ম হয়ে গেছে। এই জলাবদ্ধতা দূর করতে সিটি করপোরেশন বা ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের পক্ষ থেকে লোক আসে না। ফলে বৃষ্টি শেষেও দীর্ঘ সময় পানি জমে থাকে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, লঘুচাপ ও মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে এই বৃষ্টি হচ্ছে। আগামী কয়েকদিন থেমে থেমে এই বৃষ্টি হতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি বর্তমানে ঝাড়খন্ড এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমি বায়ুর অক্ষ রাজস্থান, উত্তর প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, লঘুচাপের কেন্দ্রস্থল ও বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমি বায়ু উত্তরাংশে সক্রিয় এবং বাংলাদেশের অন্যত্র মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে।
পূর্বাভাসে বলা হয়, আজ শুক্রবার রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ হতে পারে।
আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক বলেন, ঢাকায় সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ১১৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আজ ঢাকায় বৃষ্টি হতে পারে বলে জানান এই আবহাওয়াবিদ। এ ছাড়া বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর ঢাকা ছাড়াও রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগে বৃষ্টি হয়েছে বলে আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে।
এদিকে, রাজধানীর মিরপুরে ঢাকা কমার্স কলেজ এলাকায় বৃষ্টির মধ্যে বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। মুষলধারে বৃষ্টির ফলে রাস্তায় পানি জমে যায়। বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে ওই পানিতে পড়লে তা বিদ্যুতায়িত হয়ে পড়ে। এ ঘটনায় নিহতরা হলেন মো. মিজান, তার স্ত্রী মুক্তা এবং তাদের ছেলে হোসাইন। অনিক নামে আরেক ব্যক্তি মারা গেছেন। গতকাল রাত প্রায় সাড়ে ১০টায় এ ঘটনা ঘটে।
এ বিষয়ে মিরপুর মডেল থানার ডিউটি অফিসার উপ-পরিদর্শক গণমাধ্যমকে জানান, কিছুক্ষণ আগে সরকারি শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ থেকে ফোন করে জানানো হয় চারজন মারা গেছেন। নিহতদের পরিচয় ও বিস্তারিত তথ্য জানতে হাসপাতালে আমাদের অফিসাররা যাচ্ছেন।