দীর্ঘ বছর ধরে চাঁদপুর টু ঢাকা রুটে বিলাসবহুল লঞ্চ চলাচল করছে। যদিও একসময় এ রুটে লঞ্চ মালিকদের মধ্যে নতুন নতুন লঞ্চ নামানোর প্রবণতা ছিল বেশি, কিন্তু গেল কয়েক বছর এই প্রবণতা কিছুটা কমতে শুরু করেছে। এর কারণ হিসেবে যাত্রী কমে যাওয়াকেই দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, প্রতিদিন চাঁদপুর-ঢাকা, ঢাকা-চাঁদপুর রুটে দক্ষিণাঞ্চলে লঞ্চে করে হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করছেন। নিরাপদ ভ্রমণ এবং সাশ্রয়ী ভাড়া হওয়ায় লঞ্চ ভ্রমণে আগ্রহী ছিলেন যাত্রীরা। কিন্তু বর্তমানে অতিরিক্ত ভাড়া ও সময় বেশি লাগায় এ রুটে যাত্রী সংখ্যা কিছুটা কম। এছাড়াও পণ্য আনা নেওয়ার ক্ষেত্রেও লঞ্চ ব্যবহার করছেন ব্যবসায়ীরা।
এরুটে চলাচলকারী যাত্রী আকবর হোসেন ও শাহ আলম বলেন, চাঁদপুর সহ পার্শ্ববর্তী নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরের অসংখ্য মানুষ চাঁদপুর হয়ে লঞ্চযোগে ঢাকায় যাতায়াত করে। এছাড়াও চট্টগ্রামেরও অনেক যাত্রী দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় এই পথে আসা-যাওয়া করে। কিন্তু পদ্মা সেতু হওয়ার পর এবং ভাড়া ও সময় বেশি লাগায় যাত্রী কিছুটা কমেছে।
এ প্রসঙ্গে এমভি ঈগল ও এমভি ময়ূর লঞ্চের সুপারভাইজার আলী আজগর আজ নিউজকে বলেন, জ্বালানি খরচসহ সব ধরনের খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় ভাড়া পূর্বের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। এরপরেও যাত্রী সংখ্যা কম হওয়ায় প্রায়ই মালিকপক্ষকে লোকসান গুনতে হচ্ছে। তবে আমরা প্রতিনিয়ত যাত্রীদের সেবার মান বাড়াতে কাজ করছি।
এদিকে পদ্মা, মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদীর মিলনস্থলে চাঁদপুর অবস্থিত। ফলে জেলার নদী তীরবর্তী অধিকাংশ মানুষের কাছে লঞ্চ ভ্রমণ খুবই পছন্দের। প্রতিদিন চাঁদপুরের হাজার হাজার মানুষ ব্যবসা, চাকরি, শিক্ষা, ভ্রমণ ও নানাবিধ কাজের উদ্দেশ্যে রাজধানী ঢাকায় আসেন। শুধু চাঁদপুর নয়, আশপাশের কয়েকটি জেলার মানুষও চাঁদপুর এসে লঞ্চে করে কর্মক্ষেত্রে যান।
তবে যাত্রীদের কথা চিন্তা করে চাঁদপুর-ঢাকা রুটে চলাচলকারী লঞ্চগুলোতে যাত্রীদের সুযোগ-সুবিধাও বৃদ্ধি করা হয়েছে। বেশির ভাগ লঞ্চে এসি, উন্নত টয়লেট, প্রথম ও অন্যান্য শ্রেণির কেবিন রয়েছে। যাত্রীরা চাইলে আগাম বুকিং দিয়ে লঞ্চের কেবিনে যাতায়াত করতে পারেন।
বর্তমানে চাঁদপুর-ঢাকা রুটে ২৪টি লঞ্চ চলাচল করে। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ রুটে আরও ১৩টি লঞ্চ চলাচল করে। বিভিন্ন অঞ্চলের লঞ্চসহ মোট ৮০টি লঞ্চ চাঁদপুর ঘাটে আসা যাওয়া করে। চাঁদপুর-ঢাকা এবং ঢাকা-চাঁদপুর রুটে প্রতিদিন ভোর ৬টা থেকে রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত লঞ্চে যাতায়াতের সুবিধা রয়েছে। লঞ্চের ডেকের ভাড়া ১১৫ টাকা, নন এসি চেয়ারের ভাড়া ১৮০ টাকা, বিজনেস ক্লাস এসি চেয়ারের ভাড়া ৩০০ টাকা, নন এসি সিঙ্গেল কেবিনের ভাড়া ৫০০ টাকা, এসি সিঙ্গেল কেবিনের ভাড়া ৬০০ টাকা, নন এসি ডাবল কেবিনের ভাড়া ১০০০ টাকা, এসি ডাবল কেবিনের ভাড়া ১২০০ টাকা, নন এসি মিনি ভিআইপি কেবিন ১৮০০ টাকা, ফ্যামেলি কেবিন ১৫০০ টাকা, ভিআইপি কেবিন ২২০০ টাকা এবং সিআইপি কেবিন ২৫০০ টাকা।
ঢাকা-চাঁদপুর রুটের নতুন সময়সূচী:
ঢাকা থেকে চাঁদপুর: সকাল-৬.০০ -ইমাম হাসান, সকাল -৭.২০ সোনারতরী-১, সকাল-৮.০০ -অগ্রদূত প্লাস, সকাল -৮.৩৫-বোগদাদীয়া-৭, সকাল – ৯-১৫ আব এ জম জম-১ (অনিয়মিত): সকাল -৯.৫০- মিতালী-৭, সকাল ১০.২৫ -ঈগল-৮/, আওলাদ-৬, সকাল -১১.০০- ইমাম হাসান-৭, সকাল -১১.৪৫-ইমাম হাসান-২, দুপুর :১২.৩০- ময়ূর-২, দুপুর -১.৩০ ময়ূর-১০
দুপুর ২.৩০- ঈগল-৪, বিকাল ৩.৩০- আল বোরাক, বিকাল ৪.৩০-ঈগল-৩, বিকাল ৫.৩০ -সোনারতরী-৩: বিকাল ৬.৩০-বোগদাদীয়া-৮/ ঈগল-৯, সন্ধ্যা -৭.৪৫-সোনারতরী-৪/ জামাল-১: রাত -৯.৪০ , রাত ১০.৪০- বোগদাদীয়া-১৩ :রাত ১১.৩০-আব এ জম জম-৭: রাত ১২.০০ রফ রফ-২।
চাঁদপুর-ঢাকা রুটের সময়সূচী: সকাল-৬.০০ -সোনারতরী-৪/ জামাল-১: সকাল -৭.২০ সোনারতরী-৩: সকাল-৮.০০ -ঈগল-৭ /অনিয়মিত, সকাল – ৯.০০-ঈগল-৩: সকাল -৯.৩০-আল বোরাক: সকাল :১০.০০ ঈগল-৯/বোগদাদীয়া-৮
সকাল ১০.৪০ -বোগদাদীয়া-১৩, সকাল ১১.৩০- অনিয়মিত, দুপুর -১২.০০- রফ রফ-২: দুপুর -১.০০ আব এ জম জম-৭
দুপুর ২.০০-অগ্রদূত প্লাস, বিকাল ৩.৪০-সোনারতরী-১, বিকাল ৫.০০-বোগদাদীয়া-৭, বিকাল ৬.০০ -ইমাম হাসান-৭
সন্ধ্যা -৭.০০-ইমাম হাসান, রাত -১০.০০ -মিতালী-৭, রাত ১০.২০ -আব এ জম জম-১ /অনিয়মিত, রাত ১১.১০-ইমাম হাসান-২, রাত :১১.৩০- ঈগল-৪: রাত ১২.১৫ এবং ময়ূর-১০ এবং রাত -১২.৩০- ময়ূর-২।
চাঁদপুর নদী বন্দরের পরিবহন পরিদর্শক বলেন, চাঁদপুর লঞ্চঘাটটি একটি মধ্যবর্তী স্টেশন। যে কারণে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করে। চাঁদপুর নদী বন্দরের উন্নয়নের জন্য বিশ্ব ব্যাংকের একটি প্রজেক্ট রয়েছে। টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন, শিগগিরই নদী বন্দরের কাজ শুরু হবে। যতটুকু সম্ভব আমরা যাত্রীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের পাশাপাশি নৌ পুলিশ, কোস্টগার্ড ও জেলা প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে চাঁদপুর নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইকবাল হোসেন আজ নিউজকে বলেন, চাঁদপুর লঞ্চ ঘাটটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে প্রায় ২৪ ঘণ্টাই লঞ্চ চলাচল করে। চাঁদপুর ইলিশের শহর হওয়ায় লঞ্চে করে বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার মানুষ ঘুরতে এখানে আসে। যাত্রীদের নিরাপত্তায় নৌ পুলিশ সর্বদা লঞ্চঘাটে নিয়োজিত রয়েছে। যাত্রীরা যাতে নির্বিঘ্নে বাড়ি পৌঁছাতে পারেন তার জন্য সর্বাত্মক সহযোগিতা আমাদের থাকবে।
(তথ্য সংগৃহীত)