রাজধানী ডেস্ক: ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের (উড়াল সড়ক) শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার অংশ ডিসেম্বরে খুলে দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ)। বিবিএ-এর প্রকল্পসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানা গেছে।
বিমানবন্দর থেকে তেজগাঁও অংশ সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, এক্সপ্রেসওয়ের পিলারগুলো তৈরির কাজ শেষ। প্রকল্পের অন্যান্য কাজও দ্রুতগতিতে চলছে। বলা চলে-বিমানবন্দর থেকে কুড়িল পর্যন্ত অংশের সিংহভাগ কাজই শেষ। প্রকল্পসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে পুরো উড়াল সড়কের কাজ শেষ হওয়ার লক্ষ্যে কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। তিনটি ধাপে এ প্রকল্পের কাজ চলছে। প্রথম ধাপ বিমানবন্দর থেকে বনানী স্টেশন পর্যন্ত ৭ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। দ্বিতীয় ধাপ বনানী থেকে মগবাজার পর্যন্ত ৫ দশমিক ৮৫ কিলোমিটার। আর তৃতীয় ধাপ হচ্ছে মগবাজার থেকে চিটাগাং রোডের কুতুবখালী পর্যন্ত ৬ দশমিক ৪৩ কিলোমিটার অংশ। এ উড়ালসড়কে যানবাহন চলবে উচ্চগতিতে, সেজন্য এখানে তিন চাকার বাহন চলতে দেওয়া হবে না।
আরও জানা যায়, বিমানবন্দর থেকে বনানী, তেজগাঁও, মগবাজার, কমলাপুর, সায়েদাবাদ ও যাত্রাবাড়ী হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত এ উড়ালসড়কের দৈর্ঘ্য হবে ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। এর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। মূল উড়াল সড়কে ওঠানামার জন্য ২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ ৩১টি র্যাম্প থাকবে। র্যাম্পসহ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মোট দৈর্ঘ্য দাঁড়াচ্ছে ৪৬ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। শহরের উত্তর-দক্ষিণ সংযোগকারী এ উড়ালসড়কের প্রকল্পটি সরকার হাতে নিয়েছিল ২০১১ সালে। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। ২১ বছর টোল আদায় করবে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। এ প্রকল্পের ২১০ একর জমির মধ্যে রেলের জমি ১২৮ একর, সড়ক ও জনপথ বিভাগের ২৭ একর। সাধারণ মানুষের ২৮ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। বাকি জমি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী কাজী মো. ফেরদাউস যুগান্তরকে বলেন, আগামী ডিসেম্বরে আংশিক এবং আগামী বছর জুনে পুরো প্রকল্পের উদ্বোধনের লক্ষ্যে কার্যক্রম চলছে।
ঢাকা-আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ের ব্যয় বাড়ল : ঢাকার বিমানবন্দর থেকে সাভার ইপিজেড পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ উড়ালসড়ক নির্মাণ করছে সরকার। উড়ালসড়কটি নির্মাণে কিলোমিটারপ্রতি খরচ হচ্ছে প্রায় ৭০৪ কোটি টাকা। দেশের সবচেয়ে ব্যয়বহুল এ উড়ালসড়কের কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। সড়ক পরিবহণ ও প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানান, পুরো প্রকল্প এলাকায় সব মিলিয়ে ২২টি পরীক্ষামূলক পাইলিং করা হবে। এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে নির্মাণকাজ।
বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে উড়ালসড়কে ওঠানামার জন্য তৈরি করা হবে ১৬টি র্যাম্প বা সংযোগ সড়ক। র্যাম্পগুলোর সম্মিলিত দৈর্ঘ্য প্রায় ১০ কিলোমিটার। এ প্রকল্পে উড়ালসড়ক ছাড়াও ১৪ কিলোমিটারের বেশি সড়ক নির্মাণ করা হবে। পাশাপাশি নবীনগর এলাকায় নির্মাণ করা হবে ১ দশমিক ৯৫ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি ফ্লাইওভার, ২ দশমিক ৭২ কিলোমিটার সেতু, ৫০০ মিটার ওভারপাস, ইউটিলিটির জন্য ১৮ কিলোমিটার ড্রেনেজ ও ডাক্ট এবং পাঁচটি টোল প্লাজা।
প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানান, ঢাকা ও আশুলিয়া-সাভার এলাকার যানজট নিরসনে ভূমিকা রাখবে এ উড়াল সড়ক। এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত হয়ে তৈরি করবে আন্তঃদেশীয় সড়ক যোগাযোগের সুযোগ। বিমানবন্দর এলাকায় ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে সংযুক্ত হবে নির্মাণাধীন ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে। ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-জামালপুর, ঢাকা-মানিকগঞ্জ-তেঁতুলিয়া, ঢাকা-মাওয়া-বরিশাল মহাসড়কের সঙ্গে সংযোগ তৈরি করবে এ প্রকল্প। উড়াল সড়কটি ব্যবহারের জন্য নির্দিষ্ট হারে টোল দিতে হবে যানবাহনগুলোকে।
ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বাস্তবায়নের মেয়াদকাল নির্ধারণ করা হয়েছে ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। প্রথমে ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ১৬ হাজার ৯৯৭ কোটি টাকা। গত ৩১ মে এ প্রকল্পের ব্যয় ৫৫৬ কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে। কাজ শুরু করতে দেরি হওয়ায় প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়কাল চিন্তা করা হচ্ছে ২০২৪ সাল পর্যন্ত।
প্রকল্প পরিচালক শাহাবুদ্দিন খান যুগান্তরকে বলেন, ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে প্রকল্পের ব্যয় বাড়াতে হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে সব ধরনের তৎপরতা চালানো হচ্ছে।