আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে ১৮৭ জন পুলিশ সদস্য কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। এর মধ্যে ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি, পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, সহকারী পুলিশ সুপার, পুলিশ পরিদর্শক, এসআই, সার্জেন্ট, এএসআই পদ মর্যাদার কর্মকর্তারা রয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ সদরদপ্তর।
মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় প্রতিষ্ঠানটি।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ১ আগস্ট থেকে আজ মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত বাংলাদেশ পুলিশের ১৮৭ জন সদস্য কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন ডিআইজি একজন, অতিরিক্ত ডিআইজি সাত জন, পুলিশ সুপার দুইজন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার একজন, সহকারী পুলিশ সুপার ৫ জন, পুলিশ পরিদর্শক ৫ জন, এসআই ও সার্জেন্ট ১৪ জন, এএসআই ৯ জন, নায়েক ৭ জন এবং কনস্টেবল ১৩৬ জন।
অনুপস্থিত ১৮৭ জন পুলিশ সদস্যের মধ্যে ছুটিতে ৯৬ জন, কর্মস্থলে গরহাজির ৪৯ জন, স্বেচ্ছায় চাকরি ইস্তফা দিয়ে কর্মস্থলে অনুপস্থিত তিনজন এবং অন্যান্য কারণে ৩৯ জন কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন।
অনেক আগে থেকেই পুলিশ সদস্যদের কাজে ফেরার তাগিদ দিয়েছে পুলিশ সদরদপ্তর। গত ৮ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যার মধ্যে স্ব-স্ব কর্মস্থলে ফেরার নির্দেশনা দিয়েছেন পুলিশের নবনিযুক্ত ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলাম।
তিনি বলেছেন, সারাদেশের সব পুলিশ সদস্যকে বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) সন্ধ্যার মধ্যে স্ব-স্ব পুলিশ লাইনস, দপ্তরে, পিওএম, ব্যারাকে ফিরতে হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের যৌক্তিক আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশবাসীর প্রত্যাশা অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করতে পারিনি। এর কারণে অনেকে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। অনেকেই স্ব-স্ব ইউনিটে নেই। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আমরা নতুন করে সব শুরু করতে চাই।
ছাত্র আন্দোলন দমন করতে গিয়ে অপারেশনাল ভুলত্রুটি থাকার কথা স্বীকার করে আইজিপি বলেন, এসব ভুলের কারণে ছাত্র-সাধারণ মানুষ, পুলিশসহ অনেকেই নিহত হয়েছেন।
তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে অনেক পুলিশ কর্মকর্তার নামে মামলা হয়েছে। আবার এ ঘটনায় অনেক কর্মকর্তাকে আটকও করা হয়েছে।
ঢাকার আশুলিয়ায় গত ৫ আগস্ট হত্যার পর মরদেহ আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় হত্যাচেষ্টা মামলায় আলোচিত পুলিশ পরিদর্শক আরাফাত হোসেনকে তিনদিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত।
আবার পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে উল্টো অভিযোগও পাওয়া যাচ্ছে। পুলিশ সদস্য হয়েও ছাত্রলীগের পরিচয় দিতেন কেউ কেউ। রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) গোয়েন্দা শাখায় কর্মরত এসআই মাহাবুব হাসান এমন কাজ করেছেন।
২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর রাজশাহীর গৌরহাঙ্গা এলাকার নিজ বাড়ি থেকে ভুক্তভোগী রাজিব আলীকে নামে এক যুবককে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। সে সময় অভিযুক্ত মাহাবুব হাসান ছিলেন। রাজিবকে তুলে নিয়ে তার পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণের জন্য ৫ লাখ টাকা দাবি করেন মাহাবুব। পরে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে নির্যাতন করে মাদক মামলা দেওয়া হয়। এমন অভিযোগের পরে এসআই মাহাবুবের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলায় তাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।
ভুক্তভোগী রাজীব আলী ও তার পরিবার সংবাদ সম্মেলন করে পুলিশ সদস্য এসআই মাহাবুবের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ তুলে ধরেন।
রাজীব আলী জানান, ২০১৯ সালের ঘটনার পরে এসআই মাহাবুবের বিরুদ্ধে গত ২১ আগস্ট মামলা করেন নির্যাতিত যুবকের বাবা মাসুদ রানা। তাদের অভিযোগ এসআই মাহাবুব নিজেকে পুলিশ সদস্যের পাশাপাশি নিজেকে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা পরিচয় দিয়ে অপহরণের পর অর্থ আদায় করতেন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত এসআই মাহাবুব জানান, তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা মিথ্যা।
রাজশাহী মহানগর পুলিশ বলছে, তদন্ত শেষে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।