ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনের (ডাকসু) কমিশন গঠন করে তফসিল ঘোষণার দাবিতে আলটিমেটাম দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির একদল শিক্ষার্থী। আগামী দু-একদিনের মধ্যে কমিশন গঠন এবং ঈদের আগেই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা না করা হলে আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
এ দিকে কমিশন গঠন ও তফসিল ঘোষণাসহ তিন দফা দাবিতে বুধবার (২১ মে) থেকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অনশনে বসেছেন ঢাবি শিক্ষার্থী ও ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা বিন ইয়ামিন মোল্লা।
বৃহস্পতিবার (২২ মে) গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে বিন ইয়ামিন মোল্লা জানান যতক্ষণ পর্যন্ত তার তিন দফা দাবি বাস্তবায়নে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সুস্পষ্ট ঘোষণা না দিচ্ছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি আমরণ অনশন চালিয়ে যাবেন।
ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের অধিকার নিশ্চিতে যতক্ষণ ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হবে ততক্ষণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপদ নয়। আমার যে কথা, এটি কিন্তু আমার কথা নয়, এটি ৯৬ শতাংশ শিক্ষার্থীদের কথা। সবাই অবিলম্বে ডাকসু নির্বাচন চায়। ইতোমধ্যে আমার অনশনের ২৪ ঘণ্টা পার হয়ে গিয়েছে, মাথা ঘুরাচ্ছে-চোখ বন্ধ হয়ে আসছে। আমার অবস্থা যদি খারাপের দিকে যায়, এর দায় থাকবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের।’
কেন ডাকসু নির্বাচন দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না তার স্পষ্ট কারণ জানাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, ‘আমাকে অনশন ভেঙে আলোচনায় বসতে বলা হয় কিন্তু আমি রাজি হইনি, কেননা আমি চাই এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোন কারণে ডাকসু নির্বাচনের তফসিল, সময়সীমা এবং নির্বাচন কমিশন গঠন করছে না, সেটি স্পষ্ট করুক। যদি আমাদের মনে হয় সেটা যৌক্তিক, তাহলে আমরা তা মেনে নিব। আমরা দেখছি, ভিসি-প্রক্টরদের পদত্যাগের দাবি উঠেছে, এমন নানা ধরনের অস্থিতিশীল বিষয় তোলা হচ্ছে। তাই অবিলম্বে সাম্য হত্যাকাণ্ডের বিচার, পাশাপাশি ছাত্রসংসদ নির্বাচনের ডেডলাইন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।’
এদিকে বৃহস্পতিবার বিকেলে ডাকসুর নির্বাচন কমিশন গঠন এবং তফসিল ঘোষণার দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশার সঙ্গে আলোচনায় বসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। এ সময় তারা আগামী দু-একদিনের মধ্যে কমিশন গঠন এবং ঈদের আগেই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার দাবি জানান। এই সময়ের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
আলোচনা শেষে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মুসাদ্দিক আলী ইবনে মুহাম্মদ। তিনি বলেন, ‘৯ মাস অতিবাহিত হলেও এই প্রশাসন ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি। একটি গোষ্ঠী চায় এই ডাকসু নির্বাচন বন্ধ করতে। সর্বশেষ প্রশাসন একটি টাইমলাইন ঘোষণা করেছিল। কিন্তু সে অনুযায়ী তারা তা করতে পারেনি। আগামী দু-একদিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে, তফসিল ঘোষণা করতে হবে। অন্যথায় আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে কঠোর আন্দোলনের দিকে যেতে বাধ্য হব।’
ক্যাম্পাস নিরাপদ রাখতে ছাত্রসংসদ নির্বাচনের বিকল্প নেই উল্লেখ করে, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী এ বি জুবায়ের বলেন, ‘সাম্য হত্যাকে কেন্দ্র করে যে নিরাপত্তাহীন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, সেটাকে ডাকসুর মুখোমুখি দাঁড় করানো হচ্ছে।ক্যাম্পাসকে শিক্ষার্থী-বান্ধব এবং নিরাপদ করতে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই।’
উল্লেখ্য, গত ১৫ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে জানানো হয়, ডাকসু নির্বাচনের সময়সীমা অনুযায়ী মে মাসের শুরুর দিকে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে। কিন্তু গত ১৩ মে শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিচারের দাবিতে ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে পুরো ক্যাম্পাস। এরপর তড়িৎগতিতে ইতোমধ্যে নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিতে বেশকিছু দৃশ্যমান পদক্ষেপও নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।