টিএফআই–জেআইসি সেলে গুম-খুনের দুই আলোচিত মামলায় অভিযুক্ত ১৩ সেনা কর্মকর্তাকে আজ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করার প্রস্তুতি চলছে। ভোর থেকেই ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণ রূপ নিয়েছে উচ্চমাত্রার নিরাপত্তা বলয়ে; পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির পাশাপাশি সাদা পোশাকের গোয়েন্দাদের কড়া নজরদারিতে পুরো এলাকা এখন কার্যত অচ্ছেদ্য নিরাপত্তা-বেষ্টনীতে পরিণত হয়েছে।
রোববার (২৩ নভেম্বর) সকাল থেকেই কড়া নিরাপত্তায় মোতায়েন রয়েছেন পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির সদস্যরা। সাদা পোশাকে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদেরও তৎপর থাকতে দেখা গেছে।
এদিন ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে এ দুই মামলার শুনানি হবে। প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সেনা কর্মকর্তাদের ট্রাইব্যুনালে আনার দৃশ্য দেখা যায়নি।
গত ২০ নভেম্বর শুনানি হওয়ার কথা ছিল। তবে তারিখ পেছানোর আবেদনের প্রেক্ষিতে আজকের দিন ঠিক করেন ট্রাইব্যুনাল। ২৬ অক্টোবর ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদের নেতৃত্বে দুই সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ দিন ধার্য করেন। অপর সদস্য ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
এর আগে ২২ অক্টোবর গুমের দুই মামলায় ১৩ সেনা কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। শুনানি শেষে আদালত তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। একইসঙ্গে পরবর্তী শুনানির জন্য ২০ নভেম্বর তারিখ নির্ধারণ করা হয়। ৮ অক্টোবর পৃথক দুই মামলায় মোট ৩০ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। পরে অভিযোগ আমলে নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয় এবং শুনানির জন্য ২২ অক্টোবর দিন ঠিক করা হয়।
র্যাবের টাস্কফোর্স ইন্টারোগেশন (টিএফআই) সেলের গোপন কক্ষে বন্দি রেখে নির্যাতনের ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ১৭ জনকে আসামি করা হয়। অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন— শেখ হাসিনার প্রতিরক্ষাবিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইজিপি বেনজির আহমেদ, র্যাবের সাবেক ডিজি এম খুরশিদ হোসেন, র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ব্যারিস্টার হারুন অর রশিদ, কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম, তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, র্যাব কর্মকর্তা কেএম আজাদ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কামরুল হাসান, মাহবুব আলম, আবদুল্লাহ আল মোমেন, সারোয়ার বিন কাশেম, খায়রুল ইসলাম, মশিউর রহমান জুয়েল ও সাইফুল ইসলাম সুমন। এর মধ্যে ১০ সেনা কর্মকর্তাকে ২২ অক্টোবর হাজির করা হয়।
এছাড়া জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেল (জেআইসি) বা ‘আয়নাঘর’-এ গুমের অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের আরেক মামলায় ১৩ জনকে আসামি করা হয়। এ মামলায়ও শেখ হাসিনা ও তারিক আহমেদ সিদ্দিকের নাম আছে।
অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন— ডিজিএফআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আকবর হোসেন, সাবেক ডিজি মেজর জেনারেল (অব.) সাইফুল আবেদিন, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. সাইফুল আলম, সাবেক ডিজি লেফটেন্যান্ট জেনারেল তাবরেজ শামস চৌধুরী, সাবেক ডিজি মেজর জেনারেল (অব.) হামিদুল হক, মেজর জেনারেল তৌহিদুল ইসলাম, মেজর জেনারেল সরওয়ার হোসেন, মেজর জেনারেল কবির আহাম্মদ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভীর মাজহার সিদ্দিকী ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মখসুরুল হক।
এ দুই মামলায় কারাগারে থাকা ১৩ সেনা কর্মকর্তা হলেন— র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহাবুব আলম, ব্রিগেডিয়ার কেএম আজাদ, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন, কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান (অবসরকালীন ছুটিতে), র্যাবের গোয়েন্দা শাখার সাবেক পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মশিউর রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেম, ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভির মাজাহার সিদ্দিকী।

