সেন্ট্রাল ডেস্ক: উত্তাল বঙ্গোপসাগরে ঝড়ের কবলে পড়ে নাজিরারটেক চ্যানেলে ট্রলারডুবির ঘটনায় আরও পাঁচ জেলের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত জেলেরা হলেনÑ আজিজুল হক, হোছেন আহমেদ, নুরুল আবছার, আনোয়ার হোসেন ও নুরুল ইসলাম। এ নিয়ে গত দুদিনে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল সাতজনে। এদিকে পটুখালীর বাউফল ও বরিশালে ট্রলারডুবিতে এখনো নিখোঁজ রয়েছেন ৩৫ জেলে। এছাড়া কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে ফের ভারতীয় সমুদ্রসীমা থেকে উদ্ধার করা হলো ২৭ বাংলাদেশি জেলে এবং ভোলার চরফ্যাশনের বঙ্গোপসাগরে ঝড়ে কবলে নিখোঁজ ৩ ট্রলারের ৪৮ জেলেকে উদ্ধার করেছে কোস্টগার্ড। নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের খবরÑ
কক্সবাজার : মৃত জেলেদের পরিবার ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার কক্সবাজার সদর উপজেলার খুরুশকুল ইউনিয়নের জাকির হোসেন নামে এক ব্যক্তির একটি ট্রলার নিয়ে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে যান ১৯ জেলে। প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে সাগর উত্তাল হলে শুক্রবার ট্রলারটি নিয়ে মাঝি-মাল্লারা উপকূলের দিকে ফিরে আসছিলেন। ফেরার পথে দুপুরে উপকূল থেকে প্রায় চার নটিক্যাল মাইল দূরে ফাড়ারচর এলাকায় উত্তাল ঢেউয়ের কবলে পড়ে ট্রলারটি ডুবে যায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে আট জেলেকে জীবিত উদ্ধার করেন কোস্টগার্ডের সদস্যরা। পরে সাঁতার কেটে আরেকটি ফিশিং ট্রলারে উঠে তিন জেলে জীবিত অবস্থায় তীরে আসেন; নিখোঁজ হন আট জেলে। গতকাল সকালে বঙ্গোপসাগরে নাজিরারটেক পয়েন্ট থেকে স্থানীয়রা আজিজুল হক, হোছেন আহমেদ ও নুরুল আবছার নামে তিন জেলের লাশ উদ্ধার করেন। বিকাল সাড়ে চারটার দিকে উপকূলে ভাসমান অবস্থায় থাকা আনোয়ার হোসেন ও নুরুল ইসলামের লাশ উদ্ধার করা হয়। গতকাল বিকালে মহেশখালীর সোনাদিয়া চ্যানেল থেকে উদ্ধার করা হয় মোহাম্মদ তৈয়ব ও সাইফুল ইসলাম নামে আরও দুই জেলের লাশ। কক্সবাজার সদর মডেল থানার পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) মো. সেলিম উদ্দিন বলেন, শুক্রবার দুপুরে সাগরে ট্রলারডুবির ঘটনায় আট জেলে নিখোঁজ হন। এর মধ্যে শনিবার ও রবিবার বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত সাত জেলের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। বর্তমানে নিখোঁজ আছেন খোরশেদ আলম নামে এক জেলে। তিনি আরও বলেন, সাগরে অতিরিক্ত বোট নামিয়ে নিখোঁজ জেলের সন্ধান চলছে।
বাউফল ও কুয়াকাটা (পটুয়াখালী) : গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ রয়েছেন বাউফল উপজেলার চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের ১২ জেলে। পাঁচদিন ধরে ওই জেলেদের কোনো খোঁজ না পেয়ে উৎকণ্ঠায় রয়েছে জেলে পরিবারগুলো। নিখোঁজরা হলেনÑ ট্রলারের মালিক বাবুল বেপারি, জসিম বয়াতী, মো. কবির, কামাল হোসেন, সবুজ বেপারি, হুমায়ুন কবীর, সুমন মিয়া, আবুল হোসেনসহ ১২ জন। নিখোঁজ বাবুল বেপারির ভাই বেল্লাল বেপারি জানান, তার ভাই গত ১৬ আগস্ট ১১ জেলে নিয়ে ট্রলারযোগে গভীর সমুদ্রে মাছ শিকারে গেলে গত ১৯ আগস্ট (শুক্রবার) ঝড়ের কবলে পড়ে বলে বিভিন্ন মাধ্যমে খবর পান। এর পর জানতে পারেন কোস্টগার্ড শতাধিক জেলে সমুদ্র থেকে উদ্ধার করে পটুয়াখালীর মহিপুরে নৌঘাটে নিয়ে আসে। গত শনিবার সেখানে খোঁজ নিতে গেলে ট্রলারের কোনো জেলেকে না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে আসেন।
এদিকে ইঞ্জিন বিকল হয়ে বঙ্গোপসাগরে ভাসমান একটি মাছ ধরার ট্রলার ও ২৩ জেলেকে উদ্ধার করেছে কোস্টগার্ড। গতকাল সকালে তাদের উদ্ধার করা হয়েছে বলে কোস্টগার্ড দক্ষিণ জোনের মিডিয়া কর্মকর্তা লে. বিএন কেএম শাফিউল কিঞ্জল জানিয়েছেন। তিনি জানান, মায়ের দোয়া নামে মাছ ধরার ট্রলারের ইঞ্জিন বিকল হয়ে পাঁচ দিন ধরে সাগরে ভাসছিলেন জেলেরা। রবিবার তাদের একটি টহল দল সাগরে ভাসমান ট্রলারটি দেখতে পেয়ে উদ্ধার করেছে। পরে কুয়াকাটার নিজামপুর স্টেশনে নিয়ে আসা হয় তাদের। সেখানে জেলেদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। সবাই সুস্থ আছেন। তাদের খাবার দেওয়া হয়েছে। শাফিউল কিঞ্জল বলেন, উদ্ধার হওয়া জেলেদের বাড়ি চট্টগ্রামের বাঁশখালী এলাকায়। তারা কুয়াকাটার আলীপুরের মো. আল আমিনের কর্মচারী হিসেবে সাগরে মাছ শিকারে গিয়েছিলেন। উদ্ধার জেলেদের আল আমিনের কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
ভারতীয় সমুদ্রসীমা থেকে ২৭ বাংলাদেশী উদ্ধার
ভারত: কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে ফের ভারতীয় সমুদ্রসীমা থেকে উদ্ধার করা হলো ২৭ বাংলাদেশি জেলেকে। বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের কারণে প্রবল ঝড়-বৃষ্টিতে ডুবতে থাকা ও পথ ভ্রষ্ট হওয়া তিনটি মাছ ধরার ট্রলারে থাকা ওই জেলেদের উদ্ধার করেছে ভারতীয় উপকূল রক্ষী বাহিনী। গতকাল সকালে গভীর সমুদ্রে ভারত-বাংলাদেশ সীমারেখার কাছে ভারতীয় জলসীমায় তাদের উদ্ধার করা হয়। দুটি ট্রলার ঝড়ে উল্টে ডুবে গেছে ও একটিকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতের কোস্টগার্ড। কোস্টগার্ড জানায়, নিয়ন্ত্রণহীন অবস্থায় বাংলাদেশী ট্রলারগুলি ভারতীয় জলসীমার মধ্যে ঢুকে পড়েছিল। উপকূল রক্ষী বাহিনীর ডর্নিয়ার এয়ারক্রাফট গভীর সমুদ্রের বিচ্ছিন্ন এলাকায় দুর্যোগের সময় থেকেই আকাশপথে অনুসন্ধান চালাচ্ছে। এ ছাড়া বাহিনীর দুটি উদ্ধারকারী জাহাজ আইসিজিএস আনমোল এবং আইসিজিএস ভরত পানিতে থেকে নিখোঁজ মৎস্যজীবীদের অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাহিনীর পশ্চিমবঙ্গের ডিআইজি পঙ্কজ ভার্মা। তিনি জানান, উদ্ধার করা মৎস্যজীবীরা বাহিনীর উদ্ধারকারী জাহাজে আছে। তাদেরকে আজই রাজ্য পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হবে এবং দুই দেশের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে। উল্লেখ থাকে যে, এর আগে গেল শনিবার আরও ১১জন বাংলাদেশি মৎস্যজীবীকে ভারতের জলসীমা থেকে উদ্ধার করা হয়।
ভোলার চরফ্যাশনে নিখোঁজ ৩ ট্রলারের ৪৮ জেলেকে উদ্ধার
চরফ্যাশন (ভোলা): চরফ্যাশনের বঙ্গোপসাগরে ঝড়ে কবলে নিখোঁজ ৩ ট্রলারের ৪৮ জেলেকে উদ্ধার করেছে কোস্টগার্ড। গতকাল সন্ধ্যা সাগে ৭ টার দিকে চর পাতিলা থেকে তাদের জীবিত উদ্ধার করা হয়। এরআগে শুক্রবার মধ্যরাতে ঝড়ের কবলে পড়ে এসব ট্রলার ও প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে জেলে সমিতির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তিনটি ফিশিং ট্রলারই ভোলার দক্ষিণ আইচা এলাকার বলে জানা গেছে। উদ্ধার হওয়া ট্রলারগুলো হলো হলেন, এমবি রিয়াজ ট্রলারে ১৯ জন, এফবি হাওলাদার ট্রলারে ১৫ জন এবং এফবি মায়ের দোয়া ট্রলারে ১৪ জন জেলে ছিলো। কোস্টগার্ড দক্ষিন জেনের গোয়েন্দা কর্মকর্তা কে এম শফিউল কিঞ্জল জানান, ৩ দিন আগে ওই ৩ টি ট্রলারে ঝড়ের কবলে পড়ে ভারতীয় সীমানায় চলে যায়। পরে ভাসমান অবস্থায় সেখান থেকে অন্য ট্রলারের সহযোগীতায় ফিরে আসে। খবর পেয়ে কোস্টগার্ড তাদের উদ্ধার করে। এদিকে নিখোঁজ জেলেদেন জীবিত উদ্ধারের ঘটনায় জেলে পরিবারের স্বস্তি ফিরে এসেছে।