রাজধানী ডেস্ক : ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে আরো অবদান রাখতে টেলিযোগাযোগ খাতের কর ব্যবস্থা যৌক্তিক করা জরুরি বলে দাবি করছে মোবাইল ফোন অপারেটররা। প্রস্তাবিত বাজেটের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় মোবাইল ফোন অপারেটররা বলেছে, ডিজিটাল বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য মোবাইল খাতের করকে যৌক্তিক করা উচিত। এই খাতটি ইতিমধ্যে করভারে জর্জরিত। তাই ন্যূনতম কর, কর্পোরেট কর, ডাইরেক্ট অপারেটর বিলিং, সিম ট্যাক্সসহ কয়েকটি ক্ষেত্রে কর হ্রাস করা গুরুতর প্রয়োজন।
মোবাইল টেলিযোগাযোগ খাত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছে ইতিপূর্বে সুপারিস প্রদানসহ নানাভাবে সরকারের কাছে এই খাতের উপর বিদ্যমান উচ্চ কর ব্যবস্থা যৌক্তিক করার আবেদন জানিয়ে আসলেও তা বিবেচনা করা হয়নি।
কভিড-১৯ চলাকালীন মোবাইলফোন খাতকে জরুরি ক্ষেত্র হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে এবং ব্যবসার পাশাপাশি অর্থনীতি পরিচালনায় গ্রাহকদের সংযোগের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে। এখন এই খাতের লক্ষ্য হলো পিরামিডের নীচের অংশে থাকা নিম্ন আয়ের লোকদের সংযুক্ত করা। তাই অপারেটররা সরকারকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে তাদের প্রস্তাব পুনর্বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়েছে যা ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের পথকে আরো অগ্রসর করবে। এই বাজেটে ন্যূনতম কর, কর্পোরেট কর, সিম ট্যাক্স এবং ডাইরেক্ট অপারেটর বিলিং ইত্যাদি বিষয়গুলি সমাধান করা উচিত।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উত্থাপিত প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে মোবাইল টেলিকম-সম্পর্কিত করের হার অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। মোবাইল খাত গত কয়েক বছর ধরে প্রযোজ্য শুল্কের নীতিমালা সংস্কারের জন্য আবেদন করে আসছে তবে তা উপেক্ষা করা হচ্ছে যা এই খাতে জড়িতদের হতাশ করেছে।
মোবাইল খাতে কর যৌক্তিকতার দাবিগুলো হলো-
অলাভজনক অপারেটরের উপর ন্যূনতম ২% টার্নওভার ট্যাক্স প্রত্যাহার বা যুক্তিসঙ্গত করা। উচ্চ কর্পোরেট করের হারকে যৌক্তিক এবং সহনীয় পর্যায়ে হ্রাস করে তালিকাভুক্ত (বর্তমান ৪০%) ও অ-তালিকাভুক্ত (বর্তমান ৪৫%) অপারেটরদের কর ২৫% ও ৩২% এ নামিয়ে আনা।
সরাসরি অপারেটর বিলিং থেকে পরিপূরক শুল্ক ও সারচার্জ প্রত্যাহার। সকল ইনট্যাঞ্জিবল সম্পদের উপর এমোরটাইজেশন সুবিধা প্রদান করা। মোবাইল সিমের উপরে আরোপিত ২০০ টাকা কর বিলুপ্ত করা। প্রতি ১০০ টাকা টক টাইমের উপর ও ইন্টারনেট ব্যবহারের উপর ৩৩.২৫% এবং ২১.৭৫% ভ্যাট, এসডি ও সারচার্জ যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনা।
সরকারি সংস্থাসমুহের জন্য ভ্যাট ছাড় সংক্রান্ত সুস্পস্ট নির্দেশনা বা গাইডলাইন প্রদান করা এবং অপরিশোধিত ভ্যাটের উপর আরোপিত সুদ যৌক্তিক করা।
এমটব সভাপতি মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, দুর্ভাগ্যক্রমে, যথেস্ট যৌক্তিকতা থাকা সত্ত্বেও আমাদের টেলিকম খাতের আবেদনগুলোর কোনটিই প্রস্তাবিত বাজেটে প্রতিফলিত হয়নি। সুতরাং আগামী বছরগুলোতে শিল্পটি যখন আরো বেশি দ্রুত গতিতে অগ্রসর হওয়ার কথা সে সময়ে তাদের কঠিন পথ অব্যাহত থাকবে যা ডিজিটাইজেশনের গতিতে প্রভাব ফেলবে।
এমটব মহাসচিব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম ফরহাদ (অব.) বলেন, সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনীতিতে মোবাইল টেলিযোগাযোগ খাতের যে অবদান এবং এই খাতে যে কর ব্যবস্থা বিদ্যমান তার মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করা খুব জরুরি। তদুপরি, আমরা যখন ফাইভ-জি-এর মতো প্রযুক্তিতে যুক্ত হওয়ার জন্য কাজ করছি তখন বর্তমান কর কাঠামো ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করবে এবং বিদেশি বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করবে। আমরা আশা করি সরকার আমাদের প্রস্তাবগুলিতে পুনর্বিবেচনা করবে এবং সেই অনুযায়ী প্রস্তাবিত বাজেটের সংস্কার করবে।