পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে দেশের অন্যান্য অংশের যোগাযোগব্যবস্থায় বড় ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। কুয়াকাটার মতো পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে পর্যটকের আগমন বেড়েছে বহুগুণ। কিন্তু বরিশাল-কুয়াকাটা আঞ্চলিক মহাসড়কটি বেহাল হওয়ায় পর্যটনের সম্ভাবনা ম্লান করে দিচ্ছে। পটুয়াখালী থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত ৭১ কিলোমিটার সড়কের বর্তমান অবস্থা দেখে মনে হয় না এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক মহাসড়ক। বেহাল এ সড়ক জননিরাপত্তার জন্যও হুমকি তৈরি করেছে। বিষয়টি সত্যিই উদ্বেগজনক।
টানা বর্ষণ ও যানবাহনের অতিরিক্ত চাপের কারণে সড়কের পিচ উঠে অসংখ্য ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টিতে গর্তে পানি জমে তা আরও গভীর হচ্ছে, যা এক মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। বাসচালক ও যাত্রীদের বর্ণনায় উঠে এসেছে এই করুণ চিত্র—আগে যেখানে এই পথে যেতে সময় লাগত দুই ঘণ্টা, এখন সেখানে লাগছে সাড়ে তিন ঘণ্টা। এই দীর্ঘ সময় ধরে ঝাঁকুনি, শারীরিক কষ্ট ও দুর্ঘটনার ঝুঁকি—সব মিলিয়ে যাত্রীরা প্রতিদিন চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
বেহাল মহাসড়কটির কারণে শুধু যাত্রীরাই ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন না, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পর্যটন ব্যবসাও। দূরদূরান্ত থেকে আসা পর্যটকেরা এই সড়কের দুরবস্থা দেখে হতাশ হচ্ছেন। পর্যটকের সংখ্যাও কমে যাচ্ছে, যা স্থানীয় অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বাস মালিক সমিতি জানিয়েছে, সড়কের কারণে বাসের যন্ত্রাংশ ভেঙে যাচ্ছে এবং যাত্রী কমে যাওয়ায় তঁাদের ব্যবসাও লোকসানের মুখে।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষ বলছে, অতিরিক্ত বৃষ্টি ও যানবাহনের চাপ বেড়ে যাওয়ায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তারা জরুরি সংস্কারকাজ করছে ও বরাদ্দ পেলে পূর্ণাঙ্গ সংস্কার করা হবে। কিন্তু এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সড়কের জন্য পর্যাপ্ত ও টেকসই বরাদ্দ আগে থেকেই নিশ্চিত করা উচিত ছিল। পদ্মা সেতু চালুর পর যানবাহনের চাপ যে বাড়বে, তা অনুমান করা কঠিন ছিল না। তাই সে অনুযায়ী সড়কের অবকাঠামো উন্নত করার পরিকল্পনা আগে থেকেই নেওয়া জরুরি ছিল। কিন্তু বিগত সরকার উন্নয়নের ক্ষেত্রে এসব বিষয়ের দিকে মনোযোগ দেয়নি।
দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম এই মহাসড়ক। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই সড়কের কার্যকর ও টেকসই সংস্কার করা এখন সময়ের দাবি। শুধু দায়সারা গোছের মেরামতি নয়, বরং এমনভাবে সংস্কার করতে হবে, যাতে তা দীর্ঘস্থায়ী হয় ও ভবিষ্যতে একই সমস্যা বারবার না ঘটে। পর্যটকদের নিরবচ্ছিন্ন ও নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত করার জন্য সরকারের উচিত এ বিষয়ে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া। এর সঙ্গে স্থানীয় ব্যবসা–বাণিজ্য ও অনেক মানুষের কর্মসংস্থানও যুক্ত। ফলে সড়কটির টেকসই সংস্কারের প্রতি অধিক মনোযোগ কাম্য।