গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে সেচ প্রকল্পের ১০০ কিলোমিটার এলাকায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। আর ওই পানি নিস্কাশন না হওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন চাঁদপুর সেচ প্রকল্প এলাকার বাসিন্দারা। এতে শত শত পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ফলে লোকজন খাবারের কষ্ট এবং গৃহপালিত পশু নিয়ে খুবই দুর্বিসহ দিনযাপন করছেন। পাশাপাশি গত দুইদিন ওই এলাকায় পল্লী বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যহত হওয়ায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো।
তবে চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) মো. রহুল আমিন জানিয়েছেন পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন, পানি কমালেও বৃষ্টিতে আবার একই পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। এরপরও আমাদের পাম্প হাউজ ছাড়াও প্রকল্প এলাকার হাজিমারা পাম্প হাউজ দিয়েও পানি নিস্কাশন করা হচ্ছে। তাই আশা করি বৃষ্টি কমলে দুদিনের মধ্যেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
সরেজমিন বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সদর উপজেলার বাগাদী, ফরিদগঞ্জ উপজেলার বালিথুবা, কড়ইতলি, পৌরসভা, গোবিন্দপুর দক্ষিণ ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে অতি বৃষ্টির কারণে বহু ঘর বাড়ি ও সড়ক পানিতে নিমজ্জিত। এমনকি প্রায় এলাকাতে বিদ্যুৎ সংযোগও বিচ্ছিন্ন। এতে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো মানবেতর জীবন-যাপন করছে। বিশেষ করে ওইসব পরিবারগুলো গবাদি পশু নিয়েও রয়েছেন বিপাকে। যদিও পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে চাঁদপুর সেচ প্রকল্পের সদর উপজেলার বাগাদি পাম্প হাউজ পানি নিস্কাশনে দিন ও রাতে সেচ কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। তবে জোয়ারের সময় মেশিনগুলো বন্ধ রাখতে হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ঠরা জানিয়েছে।
বাগাদি ইউনিয়নের বাসিন্দা জামাল হোসেন বলেন, গত ৪ দিনের বৃষ্টিতে আমার তিনটি ঘরে পানি। গবাদি পশু নিয়ে আছি খুবই বিপাকে। রান্নাও করা যাচ্ছে না। বিদ্যুৎ নেই গত দুদিন। আমাদেরকে কেউ এসে খোঁজ খবরও নেয় না।
একই এলাকার বাসিন্দা হোসনেয়ারা বেগম বলেন, জলাবদ্ধতায় পরিবারের সদস্যরা খুবই কষ্ট আছেন। পানি কমছে না। তাই তিনি সরকারি সহায়তা কামনা করেন।
ফরিদগঞ্জ বালিথুবা ইউনিয়নের চান্দ্রা বাজার এলাকার বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, অতিবৃষ্টিতে আমাদের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সবকিছুই পানির নিচে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে সবকিছুই পানিতে তলিয়ে যাবে।
ওই ইউনিয়নের মদনের গাঁও গ্রামের সৈয়দ গাজী বলেন, টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা হয়ে গ্রামের অনেকেই পানি বন্দি। রাস্তায় পানি থাকায় বাড়ি থেকে বের হতে পারছে না।
এদিকে চরবাগাদি পাম্প হাউজের মেশিন অপারেটর মো. হুমায়ুন কবির বলেন, পানি নিস্কাশনের জন্য আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করছি। দিন ও রাতে আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত আছে। বর্তমানে সেচ প্রকল্পের ভেতরে পানির লেভেল ৩.৯৫ থেকে ৪.২০ মিলিমিটার। এটি বাড়ছে এবং কমছে।
ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মৌলি মন্ডল বলেন, উপজেলার প্রায় সবগুলো ইউনিয়নে অতিবৃষ্টির কারণে লোকজন পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের খোঁজ খবর নিচ্ছি। আমাদের সকল দপ্তরের কর্মকর্তারা কাজ করছেন।
জানা গেছে, চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলায় ২৮ হাজার ৯৪০ পরিবার, হাজীগঞ্জ উপজেলার এক ইউনিয়নে ১২ পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। ফরিদগঞ্জ উপজেলার ৪ ইউনিয়নে ৬০ পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। এছাড়াও সদরের ৮ ইউনিয়নে ৮০০ এবং হাইমচরে ১হাজার পরিবার আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে।
চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বশির আহমেদ বলেন, জেলায় গত ২৪ ঘন্টায় ১০২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকার্ড হয়েছে। আমরা চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধ নরজদারিতে রেখেছি।