বিজনেস ডেস্ক: বিশ্বজুড়ে তৈরি পোশাকের চাহিদা হ্রাস, অন্যদিকে দেশে বিদ্যুৎ সংকট। এর ফলে গার্মেন্ট রপ্তানিতে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ বাংলাদেশের পোশাক শিল্প জোড়া আঘাতের সম্মুখীন। এতে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার পড়ছে হুমকিতে।
‘বাংলাদেশজ গার্মেন্ট সেক্টর ফেসেস এনার্জি, ডিমান্ড ক্রাইসিস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব কথা লিখেছেন সাংবাদিক অরুণ দেবনাথ। তার এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আল-জাজিরা ও ব্লুমবার্গ।
এতে বলা হয়, পোশাকের ব্র্যান্ড টমি হিলফিজারের মূল কোম্পানি পিভিএইচ করপোরেশন এবং ইন্ডিটেক্স এসএ’র জারা’কে পোশাক সরবরাহ দিয়ে থাকে প্লামি ফ্যাশন লিমিটেড।
এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুল হুক বলেছেন, জুলাইয়ে এক বছর আগের তুলনায় নতুন অর্ডার কমেছে শতকরা ২০ ভাগ। এ ছাড়া প্রস্তুত হয়ে গেছে এমন পোশাকের শিপমেন্ট ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের উভয় মার্কেটের খুচরা ক্রেতারা মুলতবি করছেন অথবা অর্ডার বিলম্বিত করছেন।
আমাদের রপ্তানি গন্তব্যে মুদ্রাস্ফীতি বাড়ছে, এ বিষয়টি আমাদের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। কারণ বাংলাদেশের জাতীয় প্রবৃদ্ধির (জিডিপি) শতকরা ১০ ভাগের বেশি আসে গার্মেন্ট শিল্প থেকে।
এ শিল্পে নিয়োজিত আছেন ৪৪ লাখ মানুষ। সেখানে অর্ডার কমে আসা অর্থনীতির জন্য ঝুঁকি। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অঞ্চলভিত্তিক জ্বালানি সংকটের আংশিক কারণে কর্তৃপক্ষ জ্বালানি সংরক্ষণের জন্য উৎপাদন-ঘাতী (প্রোডাকটিভিটি-কিলিং) বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নকরণ আবার চালু করেছে।
বাংলাদেশের জন্য একটি খারাপ সময়ে এটা ঘটতে পারে না। ফজলুল হক আরও বলেছেন, পণ্য সময়মতো তৈরি করার মূল হলো অবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ। দেশে এবং বিদেশে আমরা বহুমাত্রিক সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছি।
অরুণ দেবনাথ আরও লিখেছেন, যেমন বিদ্যুৎ সংকট দেখা দিয়েছে, তেমনি ব্যবসার খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। গ্যাপ ইনকরপোরেশন এবং এইচঅ্যান্ডএম হেন্স অ্যান্ড মরিটজ এবি’কে পোশাক রপ্তানি করে শীর্ষ স্থানীয় একটি রপ্তানিকারক স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপ লিমিটেড।
ঢাকার অদূরে গাজীপুরে তাদের কারখানা। সেখানে ডায়িং এবং ওয়াশিং ইউনিটে প্রতিদিন কমপক্ষে তিন ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ দেয়ার জন্য নির্ভর করতে হয় জেনারেটরের ওপর।
আলাদা এক সাক্ষাৎকারে স্ট্যান্ডার্ডের চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান বলেছেন, জাতীয় গ্রিড থেকে আমরা যে বিদ্যুৎ পাই তার তুলনায় জেনারেটর দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ তিনগুণ বেশি। কারণ, ডিজেলের দাম অনেক বেশি।
তাই বলে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে আমাদের ডায়িং এবং ওয়াশিং ইউনিট বন্ধ রাখতে পারি না। যদি আমরা তা বন্ধ রাখি তাহলে পুরোটা কাপড় নষ্ট হয়ে যাবে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে আরও একটি অনুষঙ্গ।
তা হলো, ডলারের বিপরীতে ইউরো দুর্বল হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশের রপ্তানি আবেদনের ক্ষতি করছে। এই রপ্তানিমূল্য পরিশোধ করতে হয় ডলারে।
রেনেসাঁ ক্যাপিটাল নামের সংগঠনের বৈশ্বিক অর্থনীতি বিষয়ক প্রধান চার্লি রবার্টসন বলেন, পোশাক হলো একটি বিবেচনাধীন আইটেম। ইউরোপে যদি বিদ্যুতের বিল বেড়ে যায়, তখন জনগণ তাদের এসব বিবেচনাধীন খরচ খাত কমিয়ে আনে। এর আওতায় রয়েছে পোশাক।