জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে শেরপুরের ঝিনাইগাতী থানা মোড়ে শহীদ সৌরভ চত্বরের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে উপজেলা প্রশাসন। সেই অনুষ্ঠানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) পাশে দেখা গেল এক আওয়ামী লীগ নেতাকে, যিনি কি না আবার মামলার আসামি। তাকে নিয়েই ইউএনও এবং প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তারা মোড়ক উন্মোচন করেছেন।
একই দিনে একই ধরণের ঘটনা ঘটেছে নকলা উপজেলায়। পুষ্পস্তবক অর্পণ অনুষ্ঠানে ইউএনওর পাশে দেখা গেল আরেক আওয়ামী লীগ নেতাকে। তিনিও বিভিন্ন মামলার আসামি।
মঙ্গলবারের (৫ আগস্ট) এ দুই ঘটনায় বেশ সমালোচনা হচ্ছে শেরপুরজুড়ে। রাষ্ট্রীয় প্রোগ্রামে আওয়ামী নেতাদের উপস্থিতি নিয়ে নাখোশ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সচেতন মহলেরা। অনেকে অভিযোগ করেছেন, প্রশাসনের কর্মকর্তারা আওয়ামী নেতাদের কৌশলে পুনর্বাসনের চেষ্টা চালাচ্ছেন।
দুই ইউএনওর সঙ্গে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে আওয়ামী নেতাদের ছবি সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। ইউএনওদের সঙ্গে আওয়ামী নেতারা হলেন, নকলা উপজেলার ১ নম্বর গণপদ্দী ডিজিটাল ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ সভাপতি আলহাজ্ব শামসুর রহমান আবুল এবং ঝিনাইগাতী উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সারোয়ার। ২০২৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর হওয়া বিশেষ ক্ষমতা আইনের একটি মামলার আসামি সারোয়ার।
ভাইরাল হওয়া একটি ছবিতে দেখা যায়, ঝিনাইগাতী ইউএনও আশরাফুল আলম রাসেলের পাশে রয়েছেন আওয়ামী নেতা সারোয়ার।
ফেসবুকে ছবিটি ছড়িয়ে পড়লে নানা বিতর্কের সৃষ্টি হয়। পরবর্তী ঝিনাইগাতী থানা পুলিশ ওই আওয়ামী লীগ নেতাকে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঝিনাইগাতী থানার ওসি মো. আল-আমীন।
ভাইরাল হওয়া ছবি নিয়ে ঝিনাইগাতী উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক এখলাছুর রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘গত ১৬ বছর জাতীয় দিবসের প্রোগ্রামগুলোতে কোনো দাওয়াত পাইনি, ছবি তুলবো এটা তো দূরের কথা। ফ্যাসিবাদী সরকার হাসিনা চলে গেছে। কিন্তু তার দোসররা এখনো রয়ে গেছে। তারা প্রকাশ্যে কিছু করতে না পারলেও নীরবে দলকে সুসংগঠিত করার জন্য এসব কর্মকাণ্ড করাচ্ছে। এর জন্যে প্রশাসনে সংস্কার করা প্রয়োজন।’
বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইগাতীর ইউএনও আশরাফুল আলম রাসেল বলেন, ‘ওই ব্যক্তি সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। শহীদ সৌরভের বাবা তাকে নিয়ে এসেছিলেন। আমার অজান্তে ঘটনাটি ঘটেছে। ’
এদিকে, নকলার বিষয়ে উপজেলা এনসিপি নোত মাসুম বলেন, ‘বিষয়টি আমি দেখেছি এবং ইউএনওকে তাৎক্ষণাক ফোনে জিজ্ঞাস করেছি। তিনি বলেছেন, আমি নতুন অবস্থায় এখানে এসেছি, এ বিষয়ে আমি অবগত ছিলাম না। প্রশাসনে এখনো আওয়ামী দোসররা ঘাপটি মেরে বসে আছে। এটাই তার জলন্ত প্রমাণ।
নকলা উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক খোরশেদুর রহমান বলেন, বিষয়টি আমাদের নজরে আসার পর পরই ইউএনওকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তিনি বলেছেন, তাকে দাওয়াত দেওয়া হয়নি। ইচ্ছাকৃতভাবে এসেছেন। আমরা এ বিষয়টি কোনো অবস্থাতেই মানতে পারছি না। সে একাধিক মামলার আসামি এমনকি কারাগার থেকে বেশ কিছুদিন আগে বের হয়েছেন।
বিষয়টি নিয়ে নকলার ইউএনও মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ওই ব্যক্তিকে দাওয়াত দেওয়া হয়নি। কিভাবে ফটোসেশনে অংশ নিলো সেটা আমি দেখিনি। অনেক লোকের মধ্যে সেটি দেখারও সুযোগ হয়নি। ’
এ দুই ঘটনার বিষয়ে শেরপুর জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। কোনো মামলার আসামি থাকলে তাদের গ্রেফতার করা উচিত।’