ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক, আজনিউজ২৪: জীবন রক্ষায় ইউরোপ অঞ্চলে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ অত্যাবশ্যক বলে হুঁশিয়ারী করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। যদিও ইউরোপের অনেক অঞ্চলে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলা করছে। সেখানের বিভিন্ন রাজধানীর লাখ লাখ বাসিন্দাকে ইতোমধ্যে জানিয়ে দেয়া হয়েছে তাদের নতুন আরোপ করা কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যে বসবাস করতে হবে।
শনিবার (১৭ অক্টোবর) থেকে লন্ডনে ঘরো সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হচ্ছে। ফ্রান্সের ৯টি শহরে আরোপ করা হচ্ছে কারফিউ।
তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতি গেল মার্চ এবং এপ্রিলের মতো এত খারাপ এখনো হয়নি।
বুধবার (১৪ অক্টোবর) নেদারল্যান্ডসে চার সপ্তাহের জন্য আংশিক লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। চেক প্রজাতন্ত্রে প্রথমবারের মতো করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য অস্থায়ী হাসপাতাল তৈরি করা হয়েছে।
করোনা সংক্রমণ রেড়ে যাওয়ায় জার্মানি, চেক প্রজাতন্ত্র এবং স্পেনের কাতালোনিয়ায়ও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত রোগীর ভিড় বেড়ে যাওয়ায় সতর্ক করেছে কর্তৃপক্ষ।
বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইউরোপীয় পরিচালক ডা. হ্যানস ক্লুগে বলেন, ইউরোপে মৃত্যুর পঞ্চম শীর্ষ কারণ করোনা ভাইরাস। যেখানে বর্তমানে প্রতিদিন এক হাজারের বেশি মানুষ এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, করোনার প্রথম ধাপে আমরা যন্ত্রদায়ক অভিজ্ঞতার সাক্ষী হয়েছি। ছোটখাটা পদক্ষেপ নিয়ে সেই পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি করা ঠিক হবে না। আমি সরকার প্রধানদের বলছি, এখনোই সময় কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার।
এরমধ্যেই ইউরোপীয় কমিশন জোটের সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ, আক্রান্তের ইতিহাস পর্যালোচনা এবং ভ্যাকসিন তৈরির ওপর গুরুত্বরোপের পরামর্শ দিয়েছে। ইউরোপের স্বাস্থ্য এবং খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক কমিশনার স্টেলা কিরিয়াকাইডস বলেছেন, এখনই দ্রুত পদক্ষেপ নিন। কারণ সময় পেরিয়ে যাচ্ছে।
ইউরোপের অবস্থা কতটা খারাপ?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ডা. ক্লুগে জানান, মার্চ এপ্রিলের চেয়ে ইউরোপে করোনায় বর্তমানে মৃত্যুর হার ৫ গুণ কম। তরুণদের শরীরে করোনা শনাক্ত হওয়ার কারণে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে আক্রান্তের হার বেড়েছে। কিন্তু বয়স্কদের তুলনায় তরুণদের মৃত্যুর হার কম হওয়ায় মৃত্যুহার কম বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, ইউরোপের বর্তমান পরিস্থিতি আশানুরূপ নয়। দেশগুলোর সরকার যদি ঠিলেঢালা বিধিনিষেধ আরোপ করে তাহলে ২০২১ সালের জানুয়ারির দিকে চলতি বছরের এপ্রিলের চেয়ে মৃত্যুর হার ৪ থেকে ৫ গুণ বেড়ে যেতে পারে।
সামাজিক দূরত্ব এবং মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে পারলে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রায় ২ লাখ ৮১ হাজার মানুষের জীবন রক্ষা সম্ভব হতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। বিধিনিষেধের মধ্যে পারিবারিক সংঘাত এবং মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি খেয়াল রাখার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখার বিষয়ে সম্ভাব্য সবকিছু করারও আহ্বান জানানো হয়।
আগস্ট এবং সেপ্টেম্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় পুরো ইউরোপে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলো সংক্রমণের হার ব্যাপকভাবে বেড়েছে। বর্তমানে ইউরোপে সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের হার চেক প্রজাতন্ত্রে। অক্টোবরে আক্রান্ত হয়েছে মোট আক্রান্তের দ্বিগুণ। মোট আক্রান্ত ১ লাখ ৩৯ হাজার।
বৃহস্পতিবার রাশিয়া সবচেয়ে বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। যা মহামারির শুরুর পর সর্বোচ্চ। এদিন মারা গেছে ২৮৬ জন।