ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী আসলেই গদ্যময়। পাকিস্তানের ফুটবলার মোহাম্মদ রিয়াজের চেয়ে ভালো আর কে বোঝে! পেট চালানোর দায়ে স্বপ্ন থেকে বহুদূরে চলে এসেছেন, বাধ্য হয়ে রাস্তার পাশে ভাজছেন জিলেপি। ক্রেতাদের ডেকে বিক্রি করে চালাচ্ছেন সংসার। অথচ রিয়াজের দাপিয়ে বেড়ানোর কথা ছিল ফুটবল মাঠ। মলিন মুখের বদলে উল্লাস করার কথা ছিল।
ভাগ্য কারও জন্য প্রচণ্ড নিষ্ঠুর। রিয়াজের জন্যও হয়েছে। রিয়াজের মতো এমন হাজারও তরুণ পড়েছেন ক্যারিয়ার নিয়ে দ্বন্দে। কেউ চাকরি খুঁজছেন হন্যে হয়ে, কেউ অপেক্ষা করছেন—নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে আবার মাঠে ফিরবে ফুটবল, খেলব, টাকা আয় করব, জীবন গড়ব। সেই স্বপ থেকে বাস্তবতার দূরত্ব অনেকখানি। রিয়াজ সেই বাস্তবতা বুঝে গেছেন।
পাকিস্তানের ফুটবলে প্রতিশ্রুতিবান ফুটবলার ছিলেন রিয়াজ। খেলতেন কে-ইলেকট্রিক দলে। মাঠে দাপিয়ে বেড়াতেন। পাকিস্তানের হয়ে এশিয়ান গেমসে প্রতিনিধিত্বও করেছেন। কিন্তু ভাগ্য তাকে রাস্তায় এনে থামিয়েছে।
পাকিস্তান ফুটবলের পরিস্থিতি বদলে যায় এক নিষেধাজ্ঞায়। ইমরানের খানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফ বন্ধ করে আন্তর্বিভাগীয় ফুটবল। ক্লাব ফুটবলকে দেওয়া হয় অতিরিক্ত গুরুত্ব। ২০১৯ সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ফের আন্তর্বিভাগীয় ফুটবলকে ফিরিয়ে আনার কথা জানান। তা এখনও আলোচনার পর্যায়ে। বাধ্য হয়ে রিয়াজ তাই ব্যবসায় নেমেছেন।
খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের হাঙ্গুতে এখন জিলিপি বেচেন রিয়াজ। সৎভাবে বাঁচতে এছাড়া উপায় ছিল না তার, ‘আমার কাছে সৎভাবে বাঁচার আর কোনও উপায় ছিল না। তাই ফুটবলের বদলে আমি জিলিপি বিক্রি করার রাস্তা নিয়েছি।’
পুরো বিষয়টি বুঝতে পেরেই পেটের দায়ে এক সময়ের দাপুটে ফুটবলারের এই সিদ্ধান্ত, ‘আমি অপেক্ষা করেছিলাম। যখন প্রধানমন্ত্রী সেটা ঘোষণা করেন, তখন আশা দেখেছিলাম। কিন্তু এই কষ্ট আর সহ্য করা যাচ্ছে না।’
রিয়াজের মতে পাকিস্তানের ফুটবল এখন তলানিতে। সামনে আরও খারাপ সময় আসতে চলছে। সম্প্রতি নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েছিল পাকিস্তানের ফুটবল। ফিফা পরে সেটি উঠিয়েও নেয়।