পলিটিক্যাল ডেস্ক: আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত সাতটি রাজনৈতিক দলের সমন্বিত উদ্যোগে নতুন একটি রাজনৈতিক মোর্চা বা জোট গঠন হতে চলছে। প্রাথমিকভাবে এ মোর্চার নাম ঠিক করা হয়েছে ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’। এ মোর্চাকে ঘিরে পুরাতন আরেকটি বাম গণতান্ত্রিক জোটে ভাঙনের সুর বেজে উঠেছে। কারণ, নতুন এ মোর্চা গঠনের উদ্যোগে যুক্ত আছে বাম গণতান্ত্রিক জোটের দুই শরিক দল বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও গণসংহতি আন্দোলন।
বাম জোটের নেতারা বলছেন, একসঙ্গে দুটি জোটে থাকার সুযোগ নেই। এটি হবে অনৈতিক কাজ। ফলে, ওই দুই দলকে হয় বাম গণতান্ত্রিক জোটে থাকতে হবে, না হয় জোট ছেড়ে তাদের নতুন জোটে যেতে হবে।
একসঙ্গে দুটি জোটে থাকার সুযোগ নেই। এটি হবে অনৈতিক কাজ। ফলে, ওই দুই দলকে হয় বাম গণতান্ত্রিক জোটে থাকতে হবে, না হয় জোট ছেড়ে তাদের নতুন জোটে যেতে হবে
গত ৯ মে বাম গণতান্ত্রিক জোটের বৈঠকে বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি সাইফুল হক এবং গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকির কাছে নতুন জোট গঠনের বিষয়ে ব্যাখ্যাও চাওয়া হয়েছে। তাদের বলা হয়েছে, কেন বাম জোট থাকতে নতুন জোট গঠন হচ্ছে? তারা বলছেন, এটি বাম জোটের কোনো বিকল্প জোট নয়। এটি একটি রাজনৈতিক উদ্যোগ। এ উদ্যোগে চাইলে বাম জোটের অন্য শরিকরাও যুক্ত হতে পারে।
জোটের নেতারা বলছেন, বিগত কয়েক বছর ধরে বাম জোটের দুই শরিক বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও গণসংহতি আন্দোলনের সঙ্গে বিএনপি ও তাদের মিত্র জোটের শরিকদের একটি সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছে। তাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে আসছে দল দুটি। সেটি নিয়ে আমাদের কোনো আপত্তি ছিল না। কিন্তু তারা এখন বাম জোটের চাইতে নতুন এ জোটকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। এখানে বাম জোটের অন্য শরিকদের আপত্তি।
গত ৯ মে’র বৈঠকে সাইফুল হক ও জোনায়েদ সাকির বক্তব্য আর মনোভাবে বোঝা গেছে যে তারা বাম জোট ছেড়ে নতুন ওই রাজনৈতিক মঞ্চ বা জোট যেটাই হোক না কেন, সেখানে চলে যাবে— জানান জোটনেতারা।
আমরা বর্তমান দুঃশাসনের বিপরীতে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে আছি। সেই লক্ষ্যে বাম গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর আন্দোলন আরও জোরদারের চেষ্টা চলছে। এখন তারা যদি এ জোটে না থেকে নতুন জোটে যায় তাহলে আমাদের কিছুই করার নাই। কিন্তু একসঙ্গে দুই জোটে থাকার সুযোগ নাই
বাম গণতান্ত্রিক জোটের শরিক সিপিবি’র সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স এ প্রসঙ্গে গণমাধ্যমকে বলেন, একসঙ্গে দুটি জোটে থাকা তো সম্ভব না। এটি অনৈতিক কাজও বটে। এখন কেউ যদি মনে করে তারা বাম জোটে থাকবে না, সেই সুযোগও আছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা বর্তমান দুঃশাসনের বিপরীতে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে আছি। সেই লক্ষ্যে বাম গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর আন্দোলন আরও জোরদারের চেষ্টা চলছে। এখন তারা যদি এ জোটে না থেকে নতুন জোটে যায় তাহলে আমাদের কিছুই করার নাই। কিন্তু একসঙ্গে দুই জোটে থাকার সুযোগ নাই।
নাম প্রকাশ না করে বাম গণতান্ত্রিক জোটের একটি শরিক দলের শীর্ষ নেতা গণমাধ্যমকে বলেন, আগামী ২৩ মে নতুন এ রাজনৈতিক মঞ্চের বৈঠক আছে। ওই বৈঠকের পর আবার বাম গণতান্ত্রিক জোটের বৈঠক ডাকা হবে। তখন ওই দুই দলকে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করতে বলা হবে। তাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে আসলে তারা কোন জোটে থাকবে। আমরা তাদের জানিয়ে দেব একসঙ্গে দুই জোটে থাকা যাবে না।
একই সঙ্গে তিনি জানান, বর্তমান সরকারের পদত্যাগ এবং একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে একমত হয়েছেন দলগুলোর শীর্ষ নেতারা।
ঐক্যবদ্ধভাবে সাত দলের যে রাজনৈতিক মঞ্চ হয়েছে, সেটি বাম জোটের বিকল্প কোনো শক্তি নয়। এটি একটি রাজনৈতিক উদ্যোগ। এখন সেটি যদি কোনো রাজনৈতিক জোটে রূপ নেয়, তাহলে আমরা নিজেরাই বাম জোটের সদস্যপদ স্থগিত বা বাতিল করে দেব। এটি নিয়ে বিতর্কের কোনো সুযোগ নাই
বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি সাইফুল হক
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি সাইফুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, ঐক্যবদ্ধভাবে সাত দলের যে রাজনৈতিক মঞ্চ হয়েছে, সেটি বাম জোটের বিকল্প কোনো শক্তি নয়। এটি একটি রাজনৈতিক উদ্যোগ। এখন সেটি যদি কোনো রাজনৈতিক জোটে রূপ নেয়, তাহলে আমরা নিজেরাই বাম জোটের সদস্যপদ স্থগিত বা বাতিল করে দেব। এটি নিয়ে বিতর্কের কোনো সুযোগ নাই।
বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের সিদ্ধান্ত হয়েছে যে একসঙ্গে দুটি রাজনৈতিক মঞ্চে থাকা যাবে না। এটি যেমন সাংগঠনিক শৃঙ্খলাবিরোধী, তেমনি অনৈতিকও। ওই দুটি দল বিষয়টি জানে। এখন দেখার বিষয়, তারা নতুন রাজনৈতিক মঞ্চে যায় কি না। যদি তারা সেখানে যায় তাহলে পরবর্তীতে যে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দরকার, নেওয়া হবে।