জাতীয় প্রেস ক্লাবের ৬৬ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম নির্বাচিত কোনো নারী সভাপতির চেয়ারে …

রেজাউল করিম রেজা, আজনিউজ২৪: আজ অপরাহ্নে জাতীয় প্রেস ক্লাবে পূর্বের কমিটি নব নির্বাচিত কমিটির কাছে আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব হস্তান্তর সম্পন্ন করেন। এতে করে নতুন সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান ও কোষাধ্যক্ষ সাহেদ চৌধুরী তাদের নিজ নিজ দপ্তর বুঝে নেন।
উল্লেখ্য ফরিদা ইয়াসমিন গত দুই মেয়াদে পরপর ২বার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে এই পদে প্রথম নারী হিসেবে ইতিহাস গড়েছিলেন। তিনি এর আগে জাতীয় প্রেস ক্লাবে নির্বাচিত যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রেস ক্লাবের ইতিহাসে সেটিও ছিল একজন নারী সাংবাদিকের জন্য প্রথম।
ফরিদা ইয়াসমিন জাতীয় প্রেস ক্লাবের উন্নয়ন ও ক্লাব সদস্যদের জন্য একজন নিবেদিত প্রাণ কর্মী হিসেবে সাংবাদিক সমাজে সমাদৃত। এই মানুষটি নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকল সাংবাদিকের ভালো-মন্দে পাশে থাকার চেষ্টা করেন। গত চার বছর ফরিদা আপার সান্নিধ্যে থেকে দেখেছি, তিনি পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ক্লাবের উন্নয়ন কর্মকান্ডে ছিলেন নিবেদিত, সদস্যদের সেবা প্রদানেও ছিলেন আন্তরিক। তিনি ক্লাবের সদস্যদের সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে নিরলস চেষ্টা করেছেন। তার দায়িত্বশীলতা, কর্মতৎপরতা, সাংগঠনিক ক্ষমতা ও নেতৃত্বগুন অতুলনীয়। তিনি সাহসী। যে কোন চ্যালেঞ্জ নেয়ার অসাধারণ ক্ষমতা রয়েছে তার ।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য, যুগ্ম সম্পাদক ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে ধাপে ধাপে সাফল্যের সিড়িগুলো অতিক্রম করে আজ এমন একটি প্রতিষ্ঠানের সভাপতির আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। এটা সম্ভব হয়েছে নিজের ঐকান্তিক চেষ্টা, অন্যের কল্যাণে নিজেকে নিবেদিত করার মানসিকতার ফলে। দীর্ঘদিন ক্লাব পরিচালনায় অর্জিত অভিজ্ঞতা ক্লাব সদস্যদের প্রয়োজনে, বিপদে সংকটে এমনকি আনন্দ বিনোদনে পাশে দাঁড়াতে সহায়তা করবে বলে আমরা মনে করি। প্রথম নারী সভাপতি নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস গড়ার পাশাপাশি দায়িত্ববান সভাপতি হিসেবেও অনন্য দৃষ্টান্ত রাখবেন এমন প্রত্যাশা রাখছি।
সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন সম্পর্কে আরেকটু ইনফরমেশন না দিলেই নয়। তিনি বাংলাদেশ উইমেন জার্নালিস্ট নেটওয়ার্ক এবং বাংলাদেশ উইমেন জার্নালিস্ট ফোরামের উপদেষ্টা। এছাড়া বাংলাদেশ জার্নালিস্ট ফোরাম অ্যাগেনিস্ট ট্রাফিকিংয়ের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। মিডিয়াতে নারীর ক্ষমতায়নে কাজ করায় ২০১৭ সালের ৭ মে তারিখে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের হাউস অব রিপ্রেজেন্টটেটিভ থেকে তিনি বিশেষ কংগ্রেশনার রিকোগনিশন এবং নিউ ইয়র্ক সিটির পাবলিক অ্যাডভোকেট অফিস থেকে পেয়েছেন কংগ্রেসনাল স্পেশাল সার্টিফিকেট।
নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার দৌলতকান্দি নিবাসী সাখাওয়াৎ হোসেন ভুঁইয়া ও জাহানারা হোসেন এর মেয়ে ফরিদা ইয়াসমিন। ৫ বোন এবং ৪ ভাইয়ের মধ্যে তিনি সবার বড়। নরসিংদী জেলার শিবপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ইডেন মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি সম্পন্ন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিক বিভাগ থেকে ১৯৯০ সালে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন তিনি। এছাড়া সাংবাদিকতায় উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ওকলাহোমা ইউনিভার্সিটি থেকে।
ফরিদা ইয়াসমিন ১৯৮৯ সালে বাংলার বানী পত্রিকার মাধ্যমে সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনাকালীন সময় থেকেই তিনি বিভিন্ন সাপ্তাহিকে নিয়মিত কাজ করতেন। বাংলার বাণী ছাড়াও তিনি মুক্তকন্ঠেও কাজ করেছেন। ‘অন্যধারার কাগজ’ নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকাও সম্পাদনা করছেন ফরিদা ইয়াসমিন। সর্বোপরি সাংবাদিকবান্ধব ক্লিন ইমেজের ফরিদা আপার ব্যক্তিত্ব ও আদর্শ স্পষ্ট। তিনি অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী। জাতির পিতা ও জননেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আদর্শকে শক্তি হিসেবে নিয়েছেন।
উল্লেখ্য ১৯৯৯ সাল থেকে তিনি দৈনিক ইত্তেফাকে কর্মরত। ২০০১ সালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সদস্যপদ লাভ করেন ফরিদা ইয়াসমিন। ফরিদা ইয়াসমিন সাউথ এশিয়ান ওমেনস মিডিয়া ফোরামের যুগ্ম সম্পাদক এবং এ ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। ২০১৬ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন এর সম্পাদক প্রখ্যাত সাংবাদিক নঈম নিজাম এর সহধর্মিনী ফরিদা ইয়াসমিন।
আমি বিশ্বাস করি যারা সততা আন্তরিকতা দিয়ে সংগঠন করেন, তারা মানুষের ভালোবাসার মূল্য দেয়ার সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ হন। জাতীয় প্রেস ক্লাব সাংবাদিকদের পেশার মানোন্নয়ন ও বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মকান্ডে সহায়তা প্রদানের জায়গা। সদস্যরা এটাকে নিজেদের সেকেন্ড হোম বলে মনে করেন। এছাড়াও গঠনতন্ত্রে বর্ণিত ক্লাবের আরো অনেক কাজ রয়েছে যা ফরিদা ইয়াসমিন ও নব নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খানসহ নির্বাচিত সকল নেতৃবৃন্দের কাছে আশা করা করছি।