জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন। তিনি বলেন, ‘এত দিন ধরে আলোচনা করেছি যাতে সব বিষয়কে কার্যকর পরিণতির দিকে নিয়ে যাওয়া যায়। কিন্তু কমিশনের হাতে খুব অল্প সময় আছে। তাই বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার আলাপ শেষ করার জন্য কমিশনের মেয়াদ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছি। আমরা আশাবাদী, কমিশন ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এ ব্যাপারে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেবে।’
রোববার বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন, প্রধান উপদেষ্টা ও রাজনৈতিক দলগুলোর বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন আখতার হোসেন। এনসিপির এ প্রস্তাবে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশও একমত হয়েছে।
আখতার হোসেন বলেন, ‘আমরা মূল প্রস্তাব থেকে দূরে এসে নতুন প্রস্তাবের সঙ্গে একমত হয়েছি, যাতে সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের মধ্য দিয়েই সংস্কারের প্রক্রিয়াগুলো বাস্তবায়ন করতে পারি। আমরা একেবারে শেষ প্রান্তে এসে আশা হারাতে চাই না।’
জুলাই সনদের আলোচনায় যেসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে, তার মধ্যে সংবিধান–সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন আখতার হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমরা যদি একমত হওয়া বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে না পারি, ভবিষ্যতে তা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। তখন সংবিধান–সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না।’
এনসিপির সদস্যসচিব বলেন, এত দিনের আলোচনার যে বিষয়গুলো আছে, সেগুলোর যেন আইনি ভিত্তি তৈরি হয়—সে ব্যাপারে সব রাজনৈতিক দলের ইতিবাচক ভূমিকা প্রত্যাশা করছেন তাঁরা। রাজনৈতিক ভেদাভেদ ভুলে, ত্যাগের কথা স্মরণ করে সবাই যেন সংবিধান–সংশ্লিষ্ট সংস্কার বাস্তবায়নে একমত হয়।
এনসিপির এই নেতা জুলাই সনদের নাম নিয়ে আপত্তি তোলেন। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে এই ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় এই সনদকে জুলাই সনদ হিসেবে বিবৃত করা হয়েছে। কিন্তু মাঝপথে এসে এটি জাতীয় জুলাই সনদ হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে। আমরা সবাই জানি এটি জাতীয় সনদ। তবে নাম অবশ্যই জুলাই সনদ হওয়া উচিত।’
আখতার হোসেন জানান, জুলাই সনদের ৮৪টি পয়েন্টের মধ্যে ৪৩টি সংবিধান–সংশ্লিষ্ট। এতে সংবিধানের মৌলিক পরিবর্তন সাধিত হবে। তিনি বলেন, ‘সংবিধানের নেচার ক্যারেক্টার (প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য) প্রতিটি জায়গায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে। এগুলোকে স্থায়ী করতে হলে একটি গণপরিষদের মধ্য দিয়েই তা করা সম্ভব। আগামী নির্বাচনে কে ক্ষমতায় আসবে, সেটা এখন বলা যাচ্ছে না। তবে যাঁরা নির্বাচিত হবেন, তাঁরা যেন জুলাই সনদের বিপরীতে গিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা পরিচালনা না করেন।’
আখতার হোসেন বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে সংস্কার অবশ্যই প্রয়োজন। সংস্কার বাস্তবায়ন না হলে আবার ফ্যাসিবাদী কাঠামোয় ফিরে যেতে হবে। সংস্কার অসমাপ্ত রেখে আমরা সেই পথে ধাবিত হতে পারি না। আমরা মনে করি, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। পরবর্তী সরকারকেও নতুন সংস্কারের উদ্যোগ নিতে হবে।’