একটা দৃশ্য বেশ পরিচিত হয়ে উঠেছিল পুরো বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ টি-টোয়েন্টি সিরিজজুড়ে। জাকের আলী ব্যাটিংয়ে নামলেই গ্যালারি থেকে ভেসে এসেছে দুয়োধ্বনি। বাউন্ডারি মারলে গ্যালারিতে নেমে এসেছে অদ্ভুত এক নীরবতা। পরিস্থিতি এমন, যেন প্রতিপক্ষের মাঠে খেলছেন জাকের। অথচ ভেন্যু চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়াম!
গতকাল রাতে সিরিজের শেষ ম্যাচে গ্যালারির কাছে লম্বা সময় ধরে ফিল্ডিং করতে হয় জাকেরকে। তখন প্রায় পুরো সময় গ্যালারি থেকে তাঁকে লক্ষ্য করে ভেসে এসেছে বাজে মন্তব্য। দর্শকদের এই হতাশা কিংবা ক্ষোভ উগড়ে দেওয়ার কারণ ব্যাটিংয়ে জাকেরের বাজে পারফরম্যান্স।
ওয়ানডে সিরিজে লিটনের চোটে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক হওয়া জাকের টি-টোয়েন্টি সিরিজে প্রথম ম্যাচের একাদশে ছিলেন না। পরের দুই ম্যাচে সুযোগ পেয়ে যথাক্রমে ১৮ বলে ১৭ আর ৩ বল খেলে ৫ রান করে আউট হন। শেষ ৮ ইনিংসে পাঁচবার জাকেরের ইনিংস থেমেছে এক অঙ্কের ঘরে।
শুধু যে রান করতে পারছেন না, তা নয়। জাকেরের খেলার ধরনও প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। অফ সাইডে না খেলে প্রায় সব বলই লেগ সাইডে খেলার চেষ্টা করছেন। দৃষ্টিকটু এই ব্যাটিং নিয়েই বেশি সমালোচনা হচ্ছে।
একসময় ছক্কা মারার জন্য খ্যাতি কুড়ালেও শেষ ১২ ম্যাচে মাত্র ৩টি ছক্কা মেরেছেন জাকের। ভালো করতে পারেননি এশিয়া কাপের মতো বড় মঞ্চেও। সব মিলিয়ে তাঁর সময়টা যে ভালো কাটছে না, তা বলে দেওয়া যায় কোনো সংশয় ছাড়াই। কিন্তু কঠিন এই সময়টা কীভাবে পাড়ি দেবেন জাকের? ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে কাল বাংলাদেশ ৩-০–তে ধবলধোলাই হওয়ার পর সংবাদ সম্মেলনে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন অধিনায়ক লিটন দাস, ‘এখান থেকে ফিরে আসতে হলে সাহস রাখতে হবে, খুব একটা চিন্তিত হওয়া যাবে না। কারণ, নেতিবাচক চিন্তাটাই বেশি আসবে, ইতিবাচক আসবে না। যদি সে ইতিবাচক চিন্তা করতে পারে, তাহলে তার জন্য খুবই ভালো।’
একসময় নিজেও এমন খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে গেছেন লিটন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁকে নিয়েও সমালোচনা কম হয়নি। লিটন যেন সেই অভিজ্ঞতা থেকেই বললেন, ‘একজন যখন স্ট্রাগল করে, তখন নিজেকে ব্যাক করা, নিজেকে সময় দেওয়া এবং যেসব মানুষ তাঁকে সাহায্য করে সব সময় তাদের সাথে ওঠাবসা করা (দরকার হয়)। আমার মনে হয় জাকের শিগগিরই ফিরবে এবং তা ভালো মতোই।’ শুধু যে জাকের, তা তো নয়। টি-টোয়েন্টি দলের অনেকেরই দুর্বলতা বেরিয়ে এসেছে সাম্প্রতিক সময়ে। তাঁদের শটের সীমাবদ্ধতাও দৃষ্টি কেড়েছে সবার। আধুনিক ক্রিকেটে যেখানে অন্য ব্যাটসম্যানরা অভিনব অনেক শট খেলছেন, সেখানে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা শট খেলার সীমাবদ্ধতার কারণে আলোচনায়। শট খেলার বৈচিত্র্য বাড়ানোর কথা বলছেন টি-টোয়েন্টি অধিনায়কও, ‘আমাদের ব্যাটসম্যানদের স্কিল বাড়াতে হবে, সব ধরনের শট খেলতে হবে। আমরা অল্প কয়েকজন ব্যাটসম্যান রিভার্স সুইপ খেলি, সেটাও একটা পয়েন্টে গিয়ে। বিশ্ব ক্রিকেট কিন্তু এখন অনেক এগিয়ে গেছে। এই ঘূর্ণি উইকেটে যারা ব্যাটিং করে, তারা রিভার্স সুইপ মারে। সেই দিক দিয়েও আমরা একটু পিছিয়ে আছি। ওই জিনিসগুলো নিয়েও কাজ করতে হবে। আপনি যত পারেন আপনার শক্তি বাড়াবেন। কিন্তু কখন তা প্রয়োগ করবেন, সেটা আপনার খেলার ওপর নির্ভর করবে।’
