সাহিত্য ও সংস্কৃতি ডেস্ক, আজনিউজ২৪: অভাব-অনটনের ছোট্ট সংসার ফুল মিয়ার, দুই ছেলে ও এক মেয়ে। ফুলমিয়া মাটি কাটার কাজ করে তার স্ত্রীর নাম জুলেখা, দেখতে শুনতে ভাল, ১৪ বছর বয়সে বিয়ে হয়েছিল ফুল মিয়ার সাথে, ১৬ বছর বয়সে মা হয়। বড় ছেলের নাম লাল মিয়া, ২০ বছর হইতে না হইতেই বিয়া কইরা বউ নিয়া ঢাকার কমলাপুর নাকি থাকে, চার বছর হইল দেশে আহে না, খোঁজ খবরও নেয় না।
মা: জরিমন ও জরিমন , আয়মা এক কলসি পানি নিয়ে আয়।
জরিমন: ১৫ বছরের মেয়ে, তিন ছেলে মেয়ের মধ্যে মেজ, ছোটটার বয়স ৮, ফুল মিয়ার মাথায় মাঝে মাঝে সমস্যা দেখা দেয়, কয়দিন মাটি কাটে টাকা পায় আবার মাথা আউলাইয়া কোথায় কোন দেশে চইলা যায়, বালা লাগে না জুলেখার, অভাব অভাব আর অভাব। দেখতে দেখতে সইয়া গেছে, জীবনটার মায়া, সংসারের মায়া, ছেলে মেয়ে গুলার লাইগা মায়া, পারে না সংসার ফালাইয়া যেদিকে দুচোখ যায় সেদিকে যাইতে। ওর বাপে যখন মাথা আউলাইয়া ঘুইরা বেড়ায় তখন মা জুলেখা ও জরিমন মানুষের বাড়ি কাম কইরা কোন রকমে দুই বেলা দুই মুঠো ভাতের জোগাড় করে । আজ পাঁচদিন অইলো জরিমনের বাপে বাড়ি ছাড়ছে, ঘরে চাল নাই, আবেদা খালা গতকাল এক কেজি চাল ও ডাল দিছিল, কোনোরকমে চলছে, সকালে রাহেলা খালার বাড়ি কাম কইরা একটু সালুন ও শাক পাইছি, সন্ধ্যা হয় হয়, জরিমন পানি আনতে গেছে, আনলে ভাত খাইতে অইবো। ছোট পোলা ডাও কষ্ট পাইতাছে খিদায়।
মা: কিলো জরিমন, তুই কোতায়, পানি কই, কলসি কই।
জরিমন : মা পানি আনতে পারি নাই, কলসি যে ভাইঙ্গা গেছে।
মা : ওরে ডেমনি, একটু পানি, হেও আনতে পারছ না, হ, পানি আনতে লাগবোনা তোর, তোর খাওয়া পরন বন্ধ, যা বাইর হইয়া যা, আমার বাড়ির থন।
জরিমন বকা শুইনা ও মার হাতে মাইর খাইয়া ঘরের বাইরে মাটির বারান্দায় ঘুমাইয়া পড়ছে ,জুলেখা রান্নাবান্না নিয়ে ব্যস্ত, হায়রে মরার পেট, খালি ক্ষুধা লাগে, প্যাডে পাথর বাইন্ধা রাখতে পারলে ভালো হইত।
জামাল (ছেলের বয়স ৮) : মা ও মা খাইতে দিবানা ক্ষুধা লাগছে তো।
মা: যা ঘরের ভিতরে পাটি বিসা, জরিমরে ডাক দে, ৩ মায় পুতে মিলা ভাত খামু।
খিদা ওরে খিদা, সব সহ্য হয়, খিদা না, কেন যে খিদা দিয়া দিল মাইনষের জীবনে।
মা : মা- জরিমন, উঠ, আয় মা খাবি।
জরিমন: না আমি খামু না, খাইতে পারুম না।
মা: তুই না খাইলে আমরা কি খাইতে পারুম, গরম ভাত, মোটা চালের ভাত আজ যে বাড়িতে কাম করছি এই বাড়ি থাইকা ইলিশ মাছের তরকারি দিছে ল, মা চল খাইয়া নে।
জরিমন: মা আমি না ঘুমের মধ্যেই ইলিশ মাছের গন্ধ পাইতাছিলাম আর ভাবতাছিলাম মায় কেন আমারে খাইবার লাইগা ডাকে না।
জরিমন : আচ্ছা মা তুমি না কইলা, আমারে আর খাইতে দিবানা, তাইলে খাইতে ডাকতাছ কেন? খালি মিছা কথা কও তুমি।
মা: মারা যে মিছা কতাই বেশি কয়রে মা, মিছা কথা বেশি কয়, মা যহন হবি ঠিক বুঝবি।
মা মেয়েরে জরাইয়া ধরছে, জরিমন হাসতাছে।
জরিমন: মা ইলিশ মাছ তো বাবায়ও পছন্দ করে, বাবায় থাকলে আরো ভালো হইতো তাই না মা?
মা: পৃথিবীর সব মানুষের কপালে কি আর সুখ আছে রে মা, মানুষটা কোথায় কোথায় না ঘুরতাছে, কি না কী খাইতাছে।
মা: যা মা, জামাল রে নিয়া ঘুমাইয়া পড়।
কহন যে বাড়ির কামে যামু, হেগো আদা, রসুন , হলুদ রাইতেই বাইটা নিয়া যাইতে হইবো, যেন কাল সকালে রান্না করতে দেরি না হয়, মেয়ের মাথায় হাত বুলাইয়া দিতাসে জুলেখা, কত সুন্দর মাইয়াটা, যে বাড়িতে কামে যায়, দেহি বাড়ির বুড়া জোয়ান সবাই ড্যাব ড্যাব কইরা তাকাইয়া থাকে জুলেখার দিকে, খুব ভয় লাগে, জানিনা কখন কি হইয়া যায়।
দবীর চাচা: জরিমনের মা ও জরিমনের মা, বাড়িত আছে নি।
মা: হ গো চাচা, আহেন, ঘরে আইয়া বহেন। দবীর চাচ-না না বহনের সময় নাই, বলছিলাম কি জরিমনের লাইগা একটা বিয়ার সম্বন্ধ নিয়ে আসছিলাম, ছেলে ভালো, উত্তর পাড়ার খালেক মিয়ার ছেলে, নম্র-ভদ্র, বাড়িঘর ও জমি-জিরাত বালাই আছে।
মা : ভাই, মাইয়ার তো বিয়ের বয়স হয় নাই।
প্রতিবেশি : দেহ জরিমনের মা, তোমার মাইয়া ঠিক ডাঙ্গর হইয়া গেছে, তোমারোতো ১২ বছর বয়সে বিয়া হইছিলো, তাছাড়া মাইয়ার বাপেরও মাথা ঠিক নাই, যুয়ান মাইয়া, মাইনষের বাড়িতে যে কামে দেও, কহন কি হইয়া যাইতে পারে, তা কি বোঝনা।
মা: দেহেন আপনারাইতো আমাগো গুরুজন , ভালো-মন্দ সবই তো আপনারাই দেখছেন, দেহেন জেইগা ভালো হয়, হেইগাই করেন।
আজ জরিমনের বিয়া, সারা বাইতের কত মানুষ, অনেক ধার দেনা ও সাহায্য নিয়ে কোনরকমে বিয়ার আয়োজন করছে জুলেখা, জরিমন বড় আদরের মাইয়া, কেমন জড়সড় হইয়া বইয়া রইছে, অভাবের ঘর, পোলাপাইন তাও লাল নীল রঙিন কাগজ কাইটা নকশা করছে, কলা গাছ কাইটা গেট বানাইছে, বালাই লাগতাছে জরিমনের।
বেয়াই: কই গো বিয়াইন সাহেব, কোথায় রইলেন, আহেন জামাই বরণ কইরা নিবেন না।
ছেলেপেলে: না না, জামাই ভিতরে যাইতে দিমু না, আগে আমাকে গো বকশিশ দেন, না হলে ভিতরে ঢোকা নিষেধ, গ্রামগঞ্জে যা হয়, আর গরিব মানুষগুলোর ও তো শখ-আহ্লাদ থাকবই, যাইহোক ছেলেপুলেদের হাতে কিছু বকশিশ দিয়ে বর ঘরে ঢুকলো, যথারীতি মুসলমান নিয়ম নীতিতে ওগো বিয়া হইয়া গেল।
মা: জরিমন, ও জরিমন, মা, সাবধানে থাকিস, শ্বশুর শ্বাশুড়ীর সম্মান ও যত্নআত্তি করবি। মারে আজ থেইকা শ্বাশুরীই যে তোর মা।
জড়িমন: মা তুমি আমারে দোয়া কইরো, বাপে বাড়ি আইলে আমারে দেইখা আইতে কইও।
মা: ঠিক আছে রে মা, ঠিক আছে।
ভ্যান গাড়িতে কইরা জামাই, শ্বাশুরী, শ্বশুর ও জড়িমন, সাথে কিছু আত্মীয় স্বন পায়ে হাইটা বড়যাত্রী বউ নিয়ে রওনা হল।
শ্বশুর বাড়ী বেশী দুরে না, পাশের গ্রামেই। ঘন্টা খানেক লাগে। শ্বশুর বাড়ী পৌছাইতে পৌছাইতে কত বাড়ীর মানুষ যে বাড়িতে আইসা হাজির হইছে ধান দুব্বা দিয়া জড়িমনকে বরন কইরা নিল। ভালই কাটল জড়িমনের জীবন, স্বামী হালিম খুব শান্ত স্বভাবের মানুষ, কম কতা কয়, ভীষণ ভালবাসে জড়িমনরে, খেটে খাওয়া মানুষ, শিক্ষাদিক্ষা তেমন নাই, কিন্তু মাঝে মধ্যে এমন সব কথা কয় যে অনেক বিজ্ঞওলাক ও তার কাছে হার মানে। জমি গেরস্থির কামে মানুষটা ভালাই, খাওন পিন্দনের কোন কমতি রাখে নাই, বছর দুই হইয়া গেল ননদ শ্বাশুড়ী, পাড়া প্রতিবেশীরা আজকাল পোলাইপান হয় নাই কেন জিজ্ঞেস করে, আমি কি কমু, শ্বাশুরী কবিরাজের কাঝে নিয়া গেল, অনেক ওষুধ দিল, কোন কাম হইল না। তদরীর করতে ফকির দরবেশদের কাছে নিয়া গেল কোন চেষ্টায়ই বাচ্চা হইল না। দিন দিন সবাই যেন কেমন জানি জড়িমনের উপর বিরক্ত হইয়া গেল, জড়িমন জানেনা, বাচ্চা না হইলে কি শুধু মাইয়া মানুষগো দোষ, পুরুষ মাইনসের মইধ্যে কি কোন দোষ থাকতে পারে না।
ভাঙ্গন লাগছে, হালিমগো গ্রামে নদী ভাঙ্গন লাগছে, আহারে কি রাক্ষুসী নদীরে বাবা, প্রতিদিন কত কত বাড়ী যে নদী নিয়া যাইতাছে তা শুধু জড়িমনরাই দেখছে বুঝছে, স্বামীর উঠানে নদী আইয়া পড়ছে, কি করব কি হইব, উপায় অন্ত না দেইখা সব ফালাইয়া শ্বশুর ,শ্বশুরী ও রাকিব সবাইরে নিয়া উচু রাস্তার পাশে ঠাই হইল জরিমনগো, এইভাবেতো আর জীবন বাঁচে না। বাঁচতে হইলেতো খাইতে হইব, রোজগার করতে হইব, কেমনে যে একজন আরেকজনরে ফালাইয়া দুরে সইরা আইলাম তা জানা নাই, আজ বছর তিন হইয়া গেল জড়িমনরে নিয়া মোহাম্মদপুর বস্তিতে আছে হালিম, কোন রকমে আছে, নদী ভাঙ্গনের তেমন ভয় নাই। হাপানী হওয়া মানুষ হালিম, রিস্কা চালায়, মাসে ১৫দিন অসুখে থাকে, ভাল মত রিস্কা চালাতে পারে না, ইট ভাঙ্গার কাম করে জড়িমন প্রথম প্রথম বড় বড় ঠুয়া পড়ত, কি মায়া দিয়া যে মানুষটা তার বুকের মইধ্যে আমার হাতটা জড়াইয়া রাখত। ডাইল দিয়া ভাত খাই, হপ্তায় একবার মাছ মাংস হয়ত দেহি, তবুও দুঃখ নাই, তাওতো মানুষটা আমারে কত ভাল বাসে। ভাল লাগেনা মাইসের কতা শুনতে, খালি খুটা দিয়া কতা কয়, বাচ্চা কাচ্চা হয় না এইটা নাকি অমঙ্গলের লক্ষণ, আমি নাকি বন্ধা, আমি নাকি সমাজের শত্রু, এ কতা শুনতে আর বালা লাগেনা, নিজেরও তো মা হইতে মন চায়, কি সুন্দর ছোট্ট ছোট্ট বাচ্চা গুলা কেমন মা মা কইয়া ডাকে, কেমন বুকের লাগে লেপটাইয়া থাকে, আহা ! কি না সুখ পায়, তয় কেন আল্লাহ সবাইরে এই সুখ দেয় না, জানেনা, জড়িমন জানেনা, কখন যে দুই চোখ ভাইঙ্গা কান্দন আহে, অনেক কষ্ট হয়, কেউ বুঝেনা মানুষডারেও বুঝতে দেয় না। ঢাকা শহরে আসার পর থেইকা মনেহয় জড়িমনের সৌন্দর্য অনেক বাইড়া গেছে, কত মানুষ যে শুধু শরীরটার দিকে নজর দেয়। হেইদিন সন্ধ্যার সময় ইট ভাঙ্গার পর মহাজন জড়াইয়া ধরল আন্ধারে, নিজেরে ছাড়াইতে পারলাম না, কি যে হইয়া গেল, বদমাইস বহুদিন আমার উপর নজর দিচ্ছিল, কি করুম, কারে কমু, এই লজ্জার কথা এই কষ্টের কথা, গরীবের যে মুখ বুইজা অনেক অপমান সইয়া যাইতে হয়, আমিও চুপ হইয়া গেলাম। ইট ভাঙ্গি, রইদে পুড়ি, চাল কিনা ঘড়ে ফিরি, রান্না কইরা দুইজন খাই। কয়দিন হইল খাওনের প্রতি জড়িমনের তেমন বাল লাগেনা, বমি বমি লাগে, পাশের ঝুপড়ির খালা কইল, ওরে জড়িমন আল্লায় বুজি তর দিকে মুখ ফিরা চাইছে, তুইতো পুয়াতি, মা হবি, মা। জড়িমন কি শুনল, তয় কি হেও মা হইতে পারব, তারে আর কেউ অলক্ষনী কইতে পারব না, কুলটা বন্ধ্যা কইতে পারব না, ওনীতো খবরটা শুইনা দুই কেজি দানাদার নিয়া সবাইরে বিলাইয়া দিল, চোখে মুখে কি খুশির ঝিলিক। থাক না মানুষটা সুখে থাক, আনন্দে থাক, নিশ্চই খোদা আমারে মাফ কইরা দিব।
বছর গড়াইতে না গড়াইতে কোল জুইড়া জড়িমনের ছাওয়াল আইল, ওর বাপে খুশি হইয়া নাম রাখল চাঁন। চাঁন বেশিরভাগ সময় ওর বাপের লাগেই থাকে। ইট ভাইঙ্গা যহন ফিরি তহন কোলের মইধ্যে ঝাপটাইয়া পরে, আহা সুখ ! এই সুখের কি পৃথিবীতে কোন তুলনা হয়, মানুষরে আল্লাহ কত সুখই না দিয়া দিসে। চাঁন এর বয়স এখন ১৫মাস , বুকের দুধ ঠিকমত পায় না, একজনের ইট ভাঙ্গার টাকায় ঘড়ভাড়া ও সংসার খরচ যে আর চলে না।
জড়িমন : শুনছ, সকালে বাড়িভাড়ার জন্য বাড়িওয়ালা আইছিল।
হালিম : তুমি কি বলছ।
জরিমন : যা বলার তাই বলছি, পরে দিমু।
জড়িমন : শোন, চাঁনরে চলো আমরা বাড়ি রাইখা আসি, আমার মা ওরে রাখব, তুমি , আমি ওর খরচ মার কাছে পাঠিয়ে দিমু, না হইলে যে সংসার যে আর চলে না।
চাঁন এর বাপ কথাগুলা শুইনা আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল কইরা তাকাইয়া রইল, তারও যে আর বলার কিছু নাই।
জড়িমন : হ্যালো হ্যালো, মা শুনছ আমি জড়িমন, তোমরা কেমন আছ।
মা : বালা রে মা বালা আছি। তোরা বাড়ি আবি না, কতদিন অয় তোগো দেহি না।
জড়িমন : মা, সামনের শুক্রবার তোমার জামাইরে নিয়া আহুম, দোয়া কইরো মা, আর চাঁনরে তো তোমার কাছে রাইখা আহুম। ওরে লইয়া দুইজন কাম করতে পরি না, কাম না করলে খামু কি ? তুমিও কও মা।
গ্রামের বাড়ি যাওয়ার জন্য ব্যাগ গুছাইছে দুইজনই, অনেকদিন পরে গ্রামের বাড়ি যাওয়া। শিতের রাইত, সুয়েটার ও চাঁদর সবই সাথে নিছে, বাসের টিকিট কাইটা যে বাড়ি যাইব সে সামর্থতো জড়িমনতো নাই। তাই বাধ্য হইয়া ট্রাকের পিছনে মাল বুঝাই এর ট্রিপল এর উপর বসে রওনা হয় জরিমন, হালিম ও সন্তান চাঁন। ঢাকার এতো আলো, এতো বাত্তি সব পিছনে ফেইলা ট্রাক চল চল কইরা চলতাছে, বাবু চাঁন মাজে মধ্যোই ওর কচি আঙ্গুল আমার মুখের ভিতর ঠুকিয়ে দিচ্ছে, আমি আর ছেলের বাবা ছেলেকে মাঝে রাইখা ফেলান দিয়া কখন যে ঘুমাইয়া গেছি মনে নাই।
হঠাৎ কইরা বিকট শব্দ, ট্রাক গাছের লগে লাগাইয়া দিছে, চাঁন ও চাঁন, বাবা চাঁন তুই কই, চাঁনের বাপের মাথায় রক্ত, আমার হাত কাইটা গেছে, টেরাকের উপর আমরা প্রায় ১৫ জন ছিলাম। দুইজনের লাশ কলাপাতা দিয়া মাইনসে ঢাকছে, ও চাঁন চাঁনরে তুই কই।
জড়িমন : ও ভাই আমার চাঁনরে দেখছেন।
জনগন : আল্লাহর নাম নেন, আমরা সবাই খোজ করতাছি।
জড়িমন : পাইছি, এই যে ডোবার মইধ্যে আমার চাঁন, এই যে আমার চাঁন, বাপ, একবার মা ক, তোতলাইয়া ই মা ক, বাঁচুমনারে বাপ, বাঁচুমনারে, তোরে ছাড়া।
চাঁন এর লাশ পুকুরের পানি থেইকা জড়িমন তুইলা নিছে, ট্রাক যেখানে এ্যাকসিডেন্ট করেছে সেখান থেকে জড়িমনের বাড়ি খুব কাছে। সারা পৃথিবীটা রক্তে ভাইসা গেছে, চাঁন নাই, কি কষ্ট কি যে কষ্ট সেই কষ্ট কারে বুঝেইব জড়িমন।
জড়িমনের বাড়িতে শোকের মাতম। চাঁন এর দাফন, কাফন হইয়া গেছে। জড়িমন দুই দিন হয় কোন কিছু মুখে দেয় নাই, হালিমের কতা বন্ধ। সবার মনে কষ্ট, দারুন কষ্ট।
মাঃ মা জড়িমন, মারে একটু ভাত খাইয়া নে, পানি ছাড়া তো আর কিছুই খাস নাই, আইজ পাঁচদিন অইয়া আইল, নে মা এক মুঠ ভাত খাইয়া নে।
জড়িমন : দেও মা, দেও, খামু, ভাত খামু, জন্মের খাওয়া খামু, এই খাওয়নইতো আমার সব কাইরা নিল রে মা, সব কাইরা নিল।
জরিমনের গল্প : মো: জাহাঙ্গীর হোসেন (সাবেক সেনা কর্মকর্তা)
মুক্তমঞ্চ
0 Views