আন্তুম নাকভি—নামটির সঙ্গে বিশ্ব ক্রিকেট এত দিনে হয়তো পরিচিত হয়ে যেত যদি ভারতের বিপক্ষে গত বছর টি-টোয়েন্টি সিরিজে তাঁর অভিষেক হতো। কিন্তু জিম্বাবুয়ের স্কোয়াডে থাকার পরও নাগরিকত্ব নিয়ে জটিলতার কারণে তখন খেলতে পারেননি।
সেই জটিলতা অনেক আগেই কেটে গেছে। জিম্বাবুয়ের নাগরিকত্ব পেয়ে গেছেন নাকভি। বাংলাদেশ সময় আজ দুপুরে আফগানিস্তানের বিপক্ষে শুরু হতে চলা হারারে টেস্ট দিয়ে অপেক্ষার পালা ফুরাতে পারে তাঁর। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অবশেষে পথচলা শুরু হতে পারে ২৬ বছর বয়সী এই ব্যাটিং অলরাউন্ডারের। ১৫৮, ৬৮, ১০৮—স্বীকৃত ক্রিকেটে নাকভির সর্বশেষ তিন ইনিংস। ব্যাট হাতে এমন পারফরম্যান্সের পর জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের (জেডসি) নির্বাচকেরা তাঁকে আবারও দলে না ডেকে পারেননি। এখন জিম্বাবুয়ের টেস্ট ক্যাপ পরা তাঁর জন্য সময়ের ব্যাপার মনে হচ্ছে। নাকভির আগে ১৩৭ জন ক্রিকেটার জিম্বাবুয়ের হয়ে টেস্ট খেলেছেন। কিন্তু তাঁকে নিয়ে এত আলোচনার কারণ বহুজাতিক পটভূমি। নাকভির জন্ম বেলজিয়ামে হলেও বাবা পাকিস্তানি এবং মা ভারতীয় বংশোদ্ভূত। তবে তিনি বেড়ে উঠেছেন অস্ট্রেলিয়ায়, আর খেলবেন জিম্বাবুয়ের হয়ে!
নাকভির দাদা-দাদি অনেক আগেই পাকিস্তান ছেড়ে বেলজিয়ামে পাড়ি জমান। ইউরোপের দেশটিতেই জন্ম তাঁর বাবার। তাঁর মায়ের জন্মও বেলজিয়ামে। তবে মা ভারতীয় বংশোদ্ভূত। নাকভির বয়স যখন ৪ বছর, তখন তাঁর পরিবার বেলজিয়াম ছেড়ে অস্ট্রেলিয়ায় চলে যায়। নাকভি পড়াশোনা করেছেন সিডনির দ্য হিলস স্পোর্টস হাইস্কুলে। ক্রিকেটে হাতেখড়ি সেখানেই। তিনি একজন দক্ষ পাইলটও। একটি বাণিজ্যিক বিমান সংস্থার পাইলটের লাইসেন্সও আছে।
কিন্তু ক্রিকেটের প্রতি নাকভির টান এতটাই ছিল যে বিমানচালনা ছেড়ে পুরোপুরি খেলায় মনোনিবেশ করেন। ঘরোয়া ক্রিকেট খেলতে চলে যান অস্ট্রেলিয়ার ডারউইনে। সেখানেই জিম্বাবুয়ের সাবেক ক্রিকেটার সলোমন মায়ারের সঙ্গে তাঁর পরিচয়। মায়ারই নাকভিকে জিম্বাবুয়েতে গিয়ে ক্রিকেট ক্যারিয়ার গড়তে উৎসাহিত করেন। তাঁর কথামতো নাকভি জিম্বাবুয়েতে চলে যান। সঙ্গে নিয়ে যান ছোট ভাই আওয়াদ নাকভিকে।
২০২৩ সালে জিম্বাবুয়ের ঘরোয়া দল মিড ওয়েস্ট রাইনোসের হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে নাকভির অভিষেক হয়। প্রথম ম্যাচেই ব্যাট হাতে সেঞ্চুরি এবং বল হাতে ৫ উইকেট নিয়ে আলোচনা আসেন। পরের ম্যাচেও করেন সেঞ্চুরি।
২০২৪ সালের শুরুতেই জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটাঙ্গনে আলোড়ন সৃষ্টি করেন। প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে জিম্বাবুয়ের কোনো দলের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে তিনি ট্রিপল সেঞ্চুরি করেন।
কয়েক বছর ধরেই জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় তারকা সিকান্দার রাজা। নাকভিও যে রাজার মতো হতে চান, সেই ইচ্ছার কথা জানিয়ে দিয়েছেন। সীমিত ওভারের ঘরোয়া ক্রিকেটেও নাকভির রেকর্ড মন্দ নয়। ২২ লিস্ট ‘এ’ ম্যাচ খেলে ৬ সেঞ্চুরি ও ৫ ফিফটি পেয়েছেন। গত বছর জিম–আফ্রো টি–টেন লিগে রাজার সতীর্থ হিসেবে খেলেছেন বাংলাদেশের মালিকানাধীন ফ্র্যাঞ্চাইজি জোবার্গ বাংলা টাইগার্সে; জিতেছেন শিরোপাও। এ বছর দেশটির টি-টোয়েন্টি লিগে তাঁর নেতৃত্বে অপরাজিত চ্যাম্পিয়নও হয়েছে রাইনোস। প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে তিনি এখন পর্যন্ত নিয়েছেন ৮৬ উইকেট। এমন একজনকে এত দিন জাতীয় দল থেকে দূরে রাখাই বরং আশ্চর্যের বিষয়।
এশিয়া, ইউরোপ, ওশেনিয়া, আফ্রিকা—আন্তুম নাকভিই সম্ভবত প্রথম ক্রিকেটার, যাঁর সঙ্গে চার মহাদেশের যোগসূত্র আছে।
অবশ্য ফুটবলে এমন বহুজাতিক খেলোয়াড় অনেকেই আছেন। পরিচিতদের মধ্যে এই মুহূর্তে একজনের নাম বলতেই হয়—ডেভিড আলাবা, রিয়াল মাদ্রিদের সেন্টারব্যাক। আলাবার জন্ম অস্ট্রিয়ায়, বাবা নাইজেরিয়ান, মা ফিলিপিনো, পূর্বপুরুষদের বাসস্থান কঙ্গোয়। তবে তিনি বেশির ভাগ সময় মেক্সিকান খাবার খান। ক্যারিয়ারের অধিকাংশ সময় কেটেছে জার্মানিতে। বিয়েও করেছেন জার্মান নারীকে। রিয়ালে খেলার সুবাদে আলাবা এখন থাকেন স্পেন। কিন্তু তাঁর স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে থাকেন ইংল্যান্ডে।
নাকভি-আলাবার চেয়ে ‘গ্লোবাল প্লেয়ার’-এর ভালো উদাহরণ আর কে হতে পারেন!